উত্তর মিলছে না!

 উত্তর মিলছে না!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রায় হাজার পঞ্চাশ ছাড়ি লক্ষ জনতার ভিড়।যতদূর চোখ যায়,শুধু পতাকায় পতাকায় ঢেকে আছে চারধার। এপাড়া,ওপাড়া,বেপাড়া মহারাষ্ট্রের সব এলাকা থেকেই সেদিন অন্নদাতারা ছুটে এসেছিলেন নাসিক থেকে মার্চ করে। তাদের লক্ষ্যস্থল ছিল প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরে দেশের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই পৌঁছানো। পাঁচ বছর আগের ২০১৮ সালের সেই ছবিই যেন আজ আবার একটু একটু করে তাজা হয়ে আসছে। কৃষিঋণ মকুব, ভূমিহীন আদিবাসী মানুষের জঙ্গলের জমির পাট্টা, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ, সেচের জন্য সুবিধা এবং কৃষকদের পেনশনের দাবিতে গত প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল অল ইণ্ডিয়া কৃষক সভা। সেই থেকেই তারা নাসিক থেকে মুম্বাই পৌঁছে গিয়েছেন হেঁটে হেঁটে। কাঠফাটা রোদে পুড়ে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে যে অবর্ণনীয় দুর্দশা আর অপরিসীম কষ্ট অন্নদাতা মানুষগুলোকে সইতে হয়েছিল ঘরে বসে বসে টিভির দৌলতে ২০১৮ সালে আমরা দেশের প্রতিটি মানুষ এর সাক্ষী ছিলাম। প্রখর খরতাপের হাত থেকে বাঁচতে পুরুষদের কেউ কেউ মাথায় রুমাল বেঁধে হাঁটছিলেন। ক্লান্ত অবসন্ন রুক্ষ মহিলাদের পা আর টানতে চাইছিল না শরীর। পা ফেটে রক্ত ঝরছিল তাদের। এই অক্ষম শরীরেই কেউ কেউ মাথার ব্যাগ নামিয়ে তার থেকে জামা কাপড়, গম, চাল, বাজরা সবগুলো রসদ ঠিকঠাক আছে কিনা বের করে খুঁটিয়ে দেখে নিলেন। কেউবা খবরের কাগজে মোরা চাপাটি সবজি বের করে দুপুরের ভোজন সারলেন। গোড়ালি ফাটা ক্ষতবিক্ষত পায়ের তালু আর মাথার উপর গনগনে সূর্যের তাপ নিয়ে পাঁচ বছর আগে দেশের অন্নদাতারা যে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন সময় কেটে গেলেও দেশের অন্নদাতাদের কোনও দাবিই পূরণ হয়নি। তাই আবার নতুন করে পথ হাঁটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। দাবি সেই একই। আন্দোলনের পটভূমি এবং ঘটনাস্থল এতটুকুও বদলায়নি। শুধু বদলে গেছে সময়। ২০১৮ সালের পর কৃষকদের পাঁচ বছর বাদে আবার পথে নামতে হয়েছে দাবি আদায়ে। ২০১৮ সালে তখনও ছিল মার্চ মাস। ২০২৩ সালে আবার সেই মার্চ মাসেই নাসিকের ডিণ্ডোরী থেকে মুম্বাইয়ের পথে পথে নেমেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। সেবার অন্নদাতাদের মিছিল ও আন্দোলনকে সমর্থন করে নাগরিক সমাজ ও বিরোধীরা আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতেই প্রবল চাপের মুখে মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ ছয় মাসের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ছয় মাস গেলো। পাঁচ বছরও পেরিয়ে গেছে। কথা রাখেনি কেউ। তাই আবার পথে পথে কিষান লংমার্চ।
তাদের দাবি, ২০০৬ সালে কেন্দ্রের উপা সরকার অরণ্যের অধিকার আইন লাগু করেছিল। কিন্তু সেটা এখনও মহারাষ্ট্রে কার্যকর হয়নি। পাঁচ বছর আগে যে দাবিগুলো করা হয়েছিল প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সেগুলোও পূরণ হয়নি। এবার তাই সতেরো দফা দাবিতে আরও বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা। ভাবছেন অরণ্যের অধিকার আইন কার্যকর হলে আদিবাসী ভূমিহীন কৃষকরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে চাষাবাদ করতে পারবেন। তাছাড়া গত পাঁচ বছর বছর আগের যে দাবিগুলো পূরণ করার প্রতিশ্রুতি ছিল সেগুলোরও স্থায়ী সমাধানের আশা করছেন কৃষকরা। কিন্তু নাসিক থেকে মুম্বাই- – এই দীর্ঘপথ পরিক্রমার পাঁচ বছরের ব্যবধানে পর পর দুইবার কৃষক লংমার্চ মূলগত দুটি প্রশ্নের আজ জন্ম দিচ্ছে। তা হলো, আমরা মুখে বলছি আমরা ওয়েলফেয়ার স্টেট অর্থাৎ কল্যাণকামী রাষ্ট্র। যদি এই আপ্তবাক্য সত্য হয়, তাহলে যারা জাতির জন্য শ্রম করে, যারা জাতির খে দুবেলা দুটো আহার তুলে দেবে বলে রক্ত ঘাম এক করে সেই কৃষিজীবী মানুষগুলোকে সামান্য পেশাগত দাবির জন্য ঘর সার, জমি ফেলে পাঁচ বছরের মধ্যে পরপর দুইবার কেন লংমার্চে ব্রিক হতে হলো? কেন পাঁচ বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার কদের সঙ্গে চরম প্রতারণার আশ্রয় নিল? আর যারা বছর বছর কল্পনা, বাজেট, সমন্বয়ের নামে গালভরা কথা ফেরি করছেন, যদি গুলো বাস্তবায়িত হতো তাহলে ফসলের ন্যায্যমূল্য, আধুনিক কৃষি, উৎপাদন বৃদ্ধি আর দালাল কড়েদের বিরুদ্ধে কৃষকদের আভিযোগগুলো কি সত্যিই কোনও গুরুত্ব রাখে না? পাঁচ বছরের কৃষকদের দ্বিতীয় লং মার্চ আজ আমাদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর শেষ কোথায়, হয়তো কেউই আমরা জানি না ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.