উন্নত সেচ ব্যবস্থায় প্রাধান্য ২য় জল সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজস্থানের উদয়পুরে মঙ্গলবার দ্বিতীয় অল ইন্ডিয়া স্টেট ওয়াটার মিনিস্টার্স কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মোট ৮ জেলায় ৯৭৫ টি অমৃত সরোবর এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জলের কাঠামো পুনর্জীবিত করা হয়েছে। লক্ষ্য, – চাষযোগ্য জমিতে উন্নত সেচের ব্যবস্থা করা। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর প্যাটিল, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মাদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য, ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন (জে জে এম) প্রকল্পটি সূচনা করার সময় শুধুমাত্র ২৪ হাজার গ্রামীণ পরিবারে ৩.২৬ শতাংশ ক্ষেত্রে নলের মাধ্যমে জলের সংযোগ ছিলো। ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তা বেড়ে ৬.৩৮ লক্ষ পরিবারে ৮৫ শতাংশ নলের মাধ্যমে জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত করা হয়েছে। পাহাড়ী অঞ্চলে যেখানে ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা রয়েছে, সেখানেও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় উৎস সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী জল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৪,৩৪৭ টি স্কুলে ৯৬ শতাংশ এবং ৮৮,৪৩৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ৯৬.১০ শতাংশ ক্ষেত্রে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে গ্রামীণ এলাকায় ২০২৫ সালের ৩১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১০০ শতাংশ বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের ১২টি শহরে ২৪x৭ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে এডিবি থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অমৃত ২.০ এর অধীনে সরকার মোট ৮টি শহরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে থাকা রাজধানী অগরতলা এবং অন্যান্য জায়গায়ও জলের বিভিন্ন উৎসগুলি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের অধীনে জাতীয় জল মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৪৫ হাজারেরও অধিক জলের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে এখন। তার কথায়, ৮০ শতাংশ চাষযোগ্য জমিকে সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। এছাড়াও জল সংরক্ষণের জন্য মোট ১৮টি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। জানান মুখ্যমন্ত্রী। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা-ও এদিন তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৪৩টি বন্যা সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়াও নদীর তীরবর্তী এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ করার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি কৃষিক্ষেত্রের অধিক উন্নয়ন ও কৃষকদের আর্থিক অবস্থার মানোন্নয়নে উন্নত সেচ ব্যবস্থায় সরকার যে প্রাধান্য দিচ্ছে তা-ও তুলে ধরলেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে। তাঁর কথায়, ভৌগোলিক অবস্থার নিরিখে ত্রিপুরায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে ২৫ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত এই চাষযোগ্য জমির জন্য ৪৭ শতাংশের মতো সেচ ব্যবস্থা রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যে। এক্ষেত্রে চাষযোগ্য জমিতে ৮০ শতাংশ সেচ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা নেই। বিস্তৃত বনাঞ্চল থাকায় আমাদের রাজ্যে প্রচুর ভূগর্ভস্থ জলের সংস্থান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও রাজ্য সরকার জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, পুরনো জলাশয় সংস্কার, ওয়াটারশেড। উন্নয়ন সহ এমন একাধিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।সম্মেলনে রাজ্য সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ১০টি বড় নদী রয়েছে। যা দ্রুত প্রবাহিত হয়। বর্ষার সময় এসব নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা ক্ষয়ের দরুন অনেক সময় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে গত বছরও ত্রিপুরায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ নদী-ই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইতে থাকে এবং বন্যার জলের রেকর্ড স্থাপন করে। বন্যার ফলে রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে সুসংহত ও স্থায়ী জল সম্পদ পরিচালনার জন্য একটি বিস্তৃত ও নির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি আমরা। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী ড. রাজভূষণ চৌধুরী, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, ছত্তিশগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাউ, হিমাচলপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী সহ আরও বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, মুখ্যসচিব, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য শীর্ষ পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।