উপনির্বাচনের রায়

 উপনির্বাচনের রায়
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৪ – এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিরোধীরা ইণ্ডিয়া মহাজোট গঠন করেছে। যদিও লোকসভা নির্বাচনের আগে ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে এনডিএ বনাম ইণ্ডিয়া জোটকে।রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় এবং মিজোরামে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যেই বিধানসভার ভোটকে ঘিরে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক পারদ চড়ছে চরমে। ঠিক তার প্রাক্কালেই ৬ রাজ্যের ৭ বিধানসভা আসনের জন্য উপনির্বাচন হয়ে গেলো গত ৫ সেপ্টেম্বর। বরাবরই একথা মনে করা হয়ে থাকে, উপনির্বাচনের ফলাফল সেটা বিধানসভা কেন্দ্রেরই হোক, কিংবা লোকসভার নির্বাচনি ক্ষেত্র, সর্বত্র শাসক শক্তির পক্ষেই জনমত প্রতিফলিত হয়ে থাকে। কিংবা স্থিতাবস্থার পক্ষেই ভোটাররা তাদের রায় দিয়ে থাকেন। সেই দিক থেকে উপনির্বাচনের ফলাফল আলাদা করে জাতীয় রাজনীতির উপর তেমন কোনও গুরুত্ব রাখে না।কিন্তু এবারের ভূ-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে,যেখানে গোটা দেশজুড়ে মহারণের প্রস্তুত চলছে, তখন এই উপনির্বাচনের লড়াইটা যে বড় যুদ্ধে নামার আগে জল মেপে নেওয়ার সতর্ক প্রয়াস সেটা শাসক – বিরোধী দুই পক্ষ্যই প্রকাশ্যে স্বীকার না করতে চাইলেও রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থা থেকে এটাই হলো প্রকৃত সত্য। বলা যায় একেবারে ছোটখাটো হলেও এটাও অনেকটা স্টেজ রিহার্সাল। যুযুধান উভয় শিবিরই নিজেদের মধ্যে জোটের ভেতর তালমিল, সমন্বয়, সহযোগিতা। বোঝাপড়া এবং জনগণের মনকে আরেকটু ঝালিয়ে নিতে সংক্ষিপ্ত বা একেবারেই ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এই উপনির্বচনকেও হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাবেন তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

এই প্রেক্ষাপটে বিচার করলে ৬ রাজ্যের ৭ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল ক্ষুদ্র হলেও এর প্রভাব কিন্তু খানিকটা হলেও বার্তাবহ। ত্রিপুরার ধনপুর এবং বক্সনগর, কেরালা পুথুপ্পল্লী, উত্তরপ্রদেশের ঘোসি, উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গের ধুপগুঁড়ি এবং ঝাড়খণ্ডের ডুমরি আসনের জন্য এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।এই আসনগুলোর মধ্যে ধনপুর, বাগেশ্বর, এবং ধূপগুড়ি ৩টি আসন বিজেপির দখলে ছিল। সমাজবাদী পার্টির দখলে ছিল ঘোষি, বক্সনগর সিপিএমের, ডুমরি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার এবং পুথুপ্পল্লি ছিল কংগ্রেসের দখলে। উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গেলো, দলগত অবস্থান অনুযায়ী একমাত্র সিপিএম ছাড়া বাদবাকি সব দলই নিজ নিজ আসন সংখ্যা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারলেও রাজ্যওয়ারি চিত্রে এই উপনির্বাচনের ফল আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যথেষ্ট তৎপর্যবাহী ইঙ্গিত বয়ে আনতে চলেছে।যেমন ত্রিপুরার এক সময়ের ২৫ বছরের শাসক সিপিএম এখন আরও প্রান্তিক দশায় চলে এলো। মাত্র ৪ মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পাওয়া বক্সনগর আসনটি তারা ধরে রাখতে পারা তো দূরের কথা, কার্যত ভোটের চিত্রে খাদের কিনারায় চলে গেল। উপনির্বাচনের ভোট সম্পন্ন হতেই সিপিএম সন্ত্রাস হুমকি এবং ভোট লুটের অভিযোগ এনে মুখ লুকিয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে সরে যায়। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে এই পলায়ন মনোবৃত্তি দিয়ে দলীয় রক্তক্ষরণ যে বন্ধ হয় না, তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো ত্রিপুরা। বামেদের দখলে থাকা আরেক রাজ্য কেরালা। যদিও কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চণ্ডীর মৃত্যুতে এই কেন্দ্রটি শূন্য হয়। কিন্তু এই আসনে কার্যত কংগ্রেসের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে সিপিএম। কেরালায় বামের দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় ফিরলেও দলের জনবিচ্ছিন্নতাবে রোধ করা যায় না। কেরালায় ভারত জোড়ো যাত্রার মধ্য দিে কার্যত কংগ্রেসের জোয়ার বইছে বেশ কিছুদিন ধরেই। চণ্ডী শূন আসনে উপনির্বাচনের ফল সেই বার্তায় আরও পরিষ্কার করে দিল।উত্তরপ্রদেশের ঘোসি বিধানসভা আসনে সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক দারা সিং বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এই আসনটি শূন্য হয়। বিরোধীদের ইণ্ডিয়া জোট গঠিত হওয়ার পর ১ : ১ ফর্মুলায় বিজেপির বিরুদ্ধে ইণ্ডিয়া জোট সেখানে আর কাউকে প্রার্থ করেনি। তার অন্যতম একটা আসন হল ঘোসি। স্বাভাবিক কারণে এই আসনটির দিকে গুরুত্ব ও নজর দিল দুই শিবিরেরই। সেই দিব থেকে ছোট নির্বাচন হলেও এই ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম এব মর্যাদাপূর্ণ এই লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টির আসনটি ধরে রাখ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ঝাড়খণ্ডের ডুমরি আসনটি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নিজের দখলে রাখা এবং উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর আসনটিও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বিজেপি নিজের আধিপত্য নিশ্চিত করা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। পক্ষান্তরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাত থেকে ধুপগুঁড়ি আসনটি ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূল গেরুয়া বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল তা লোকসভার আগে কোনওভাবেই বিজেপির জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের নয়। কেন না গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি নির্বাচনেও জয় পায়নি বিজেপি। বিধানসভার ভোটে জেত জোড়া আসন দিনহাটা এবং শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হেরে যান তারা। এই নিরীখে উপনির্বাচনের ফলাফলের ক্ষত বিজেপির জন্য লোকসভার আগে পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হতে চলেছে তা বলাই যায়।সব মিলিয়ে ৫ রাজ্যের বিধানসভার ভোট এবং লোকসভার নির্বাচনের আগে স্টেজ রিহার্সালে একেবারে স্থানীয় বিষয় নিয়ে এবং নির্বাচন নিয়ে জাতীয় স্তরে অনেকেই এই ভোটে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। সেই দিন বিচার করলে এই উপনির্বাচন যে বৃহৎ ছবির ক্যানভাস, আপাতত দেশের সামনে তুলে এনেছে তা হল আসন্ন ৫ রাজ্যের ভোট এবং লোকসভার নির্বাচন যথেষ্ট জমজমাট ও চিত্তাকর্ষক হতে চলেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.