উপভোট ও কিছু কথা

 উপভোট ও কিছু কথা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিনে রাজ্যের দুটি বিধানসভা ধনপুর ও বক্সনগর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কেন এই অকাল ভোট এ নিয়ে বিস্তারিত বলার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। রাজ্যবাসী এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। গত ছ’মাস আগের বিধানসভা ভোটে দুটি আসনের মধ্যে ধনপুর জিতেছিল বিজেপি। বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ধনপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেও, তিনি বিধায়ক পদে শপথ নেননি। বক্সনগর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী। কিন্তু আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বক্সনগরে বাম বিধায়ক শামসুল হক প্রয়াত হয়েছেন। ছ’মাস আগে রাজ্য বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্যরাজনীতির পরিস্থিতি ও সমীকরণ ছিল এ রকম। ছ’মাস পর উপনির্বাচনে পরিস্থিতি ও সমীকরণ অনেকটাই ভিন্ন। উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও জনজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দল, অর্থাৎ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রা মথার সাথে ‘মহাজোট’ করে বিজেপিকে মোকাবিলা করার কৌশল নিয়েছিল সিপিএম। অন্তত প্রচারে সেটাই উঠে আসে। এমনকী সিপিএম দলের পক্ষ থেকেও বারবার এটাই বলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ভোটের তিন-চারদিন আগে তিপ্রা মথার ডিগবাজিতে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে যায়।উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যে শাসক বিরোধী প্রচার যতটা শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হয়েছিল, কার্যত দেখা গেল তার ধারেকাছেও নেই। ভোট ঘোষণার পর থেকে বিরোধী দলগুলির যতটা তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল, প্রচারের দিন যত এগিয়েছে ততই বিরোধী প্রচার নিষ্প্রভ দেখিয়েছে।


সব দেখেশুনে মনে হয়েছে বিরোধী সিপিএম প্রচারে নিজেদের অনেকটাই গুটিয়ে রেখেছে। এই রহস্যময় অবস্থানের কারণ বা ব্যাখ্যা অবশ্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সিপিএম বাহ্যিকভাবে প্রচার না করলেও, তলে তলে সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নীরব প্রচার চালিয়ে গেছে।অপর অংশের মত অবশ্য ভিন্ন।তাদের মতে সিপিএমের সেই শক্তি এখন অনেকটাই স্তিমিত। অনেক মানুষ সিপিএম থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ তুলে ধরলে বোধহয় বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যেমন, ভোটের দিন মঙ্গলবার দিনভর শাসকদলের দুই প্রার্থীকে সকাল সকাল নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে যেভাবে বিভিন্ন বুথে বুথে ঘুরতে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে নিজেদের জয় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন, সেইভাবে বামপ্রার্থীদের দেখা যায়নি। এর পেছনেও কী কারণ তা কিন্তু জানা যায়নি। ভোটের দিন দিনভর দুই বিধানসভা কেন্দ্রে যে ছবি লক্ষ্য করা গেছে, তাতে মনে হয়েছে উপভোট কার্যত একতরফাভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ভোটের আগে প্রকাশ্যে সিপিএম নেতারা ময়দানে বিজেপির বিরুদ্ধে জোর লড়াইয়ের কথা বললেও, আসল লড়াইয়ে সিপিএম পিছিয়ে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির দখলদারিকে বুথস্তরে মোকাবিলা করতে সিপিএম ব্যর্থ হয়েছে।সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী থেকে শুরু করে অন্যান্য বাম নেতৃত্বরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানালেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ তারা তুলে ধরতে পারেনি। শাসক দল অবশ্য দাবি করেছে, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সিপিএম আগে থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কাঁদুনি গাইতে শুরু করেছে। সে যাই হোক, শাসকের একচেটিয়া দাপট মোকাবিলা করে সিপিএম প্রার্থী জয় হাসিল করতে পারবে কিনা সেটা জানা যাবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ভোট গণনার পর। একই সাথে জানা যাবে, রাজ্যেও মহাজোট করে সিপিএম লাভবান হলো কিনা? নাকি আরও ডুবলো? শুরু থেকেই রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপভোটকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের ট্রায়াল হিসাবে গণ্য করছে শাসক- বিরোধী সকলে। সেই ট্রায়ালে কে কতটা ভালো নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারে তা জানার জন্য ভোট গণনা পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.