এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষে বাম্পার ফলন, লক্ষ্যমাত্রা মন্ত্রীর!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের মোট আয়তনের শুধুমাত্র ২৪ শতাংশ হচ্ছে কৃষিজমি।এই কম পরিমাণ জমির মধ্যেও কৃষিকাজ করেও রাজ্যকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করা সম্ভব, যদি বিজ্ঞান ভিত্তিতে চাষ করা যায়।সেই লক্ষ্য নিয়েই রাজ্যের কৃষি ও উদ্যান দপ্তর নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।এক্ষেত্রে অনেকটাই সফলতা এসেছে। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না।একশ শতাংশ সফলতার পৌঁছতে হলে কৃষক থেকে শুরু করে সকলকে একসাথে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে।সোমবার নাগিছড়ায় স্টেট হর্টিকালচার রিচার্স সেন্টারে আয়োজিত পর্যালোচনায় সভায় এমনই অভিমত ব্যক্ত করেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ।এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজ্যের জিএসডিপি’র সবথেকে বড় অংশ আসে কৃষি থেকে।তাই রাজ্য সরকার কৃষি এবং উদ্যানজাত ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।শুধু রাজ্য সরকারই নয়,কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কৃষি ও কৃষক কল্যাণে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।মন্ত্রী বলেন,দেশ বলুন আর রাজ্যই বলুন, অর্থনীতির প্রধান উপাদানই হচ্ছে কৃষি এবং উদ্যানজাত ফসল।আর এর মূল চালিকাশক্তি হচ্ছেন কৃষকরা।কৃষকরা আর্থিকভাবে যত বেশি সমৃদ্ধ হবেন,কৃষি উৎপাদন ততই বৃদ্ধি পাবে।এতে খাদ্যে স্বয়ম্ভর হওয়ার পথ সহজ হবে। দেশের ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও সীমিত ক্ষমতার মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আটটি জেলার মধ্যে চারটি জেলা এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর।লক্ষ্য অর্জনে বাকি চারটি জেলাও খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে প্রকৃতি মাঝে মাঝে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মন্ত্রী বলেন, গত আগষ্ট মাসে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার যতটা সম্ভব কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি সবটা পূরণ করা সম্ভব নয়। তারপরও যতটা সম্ভব কৃষকদের সাহায্য করা হচ্ছে। আজকের পর্যালোচনা বৈঠকেও কৃষক স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
সোমবার পর্যালোচনা বৈঠকে কীভাবে বিভিন্ন উদ্যানজাত ফসলের উৎপাদন বাড়ানো যায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কৃষি আধিকারিকরা এর বিভিন্ন দিক সবিস্তারে তুলে ধরেন। এর মধ্যে আলু অন্যতম। গত বছর থেকে রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এআরসি পদ্ধতিতে আলুর চাষ শুরু হয়েছে। বহিঃরাজ্য থেকে পাঁচটি ভ্যারাইটি আলুবীজ এনে কৃষকের জমিতে ট্রায়াল করা হয়। প্রথাগত চাষের তুলনায় ফলন হয়েছে তিনগুণ বেশি।
এ বছর চার গুণ বেশি জমিতে এআরসি পদ্ধতিতে চালু চাষের উদ্যোগ নিয়েছে উদ্যান দপ্তর।বৈঠকে মন্ত্রী আধিকারিকদের বলেছেন কৃষকদের সর্বতোভাবে সাহায্য করার জন্য। ফলন আরও বৃদ্ধি করতে হবে। আগামী বছর এআরসি পদ্ধতিতে আট গুণ বেশি জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করতে বলেছেন মন্ত্রী। আগামী ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে আলু এবং আলুবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে আধিকারিকদের মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এরজন্য জমির স্বাস্থ্য রক্ষা, উর্বরতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত সেচ, পোকা ও রোগ প্রতিরোধেকার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন। কাঁঠাল থেকে ওয়াইন তৈরির উদ্যোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।রাজ্যে বাগিচা ফসলের মধ্যে কাঁঠাল অন্যতম।কাঁঠালকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ভাবনাচিন্তা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান।যাতে চাষিরা কাঁঠালের ভালো মূল্য পান। বাগিচা ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উদ্ধৃত ফল যেমন বেল, কাঁঠাল, আনারস,তেঁতুল ইত্যাদি বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করার ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
বৈঠকে শুরুর আগে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রে অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত কনফারেন্স হলের উদ্বোধন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। এই অনুষ্ঠান ও পর্যালেলাচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব অপূর্ব রায়, উদ্যান এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফনিভূষণ জমাতিয়া, গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান উপ-অধিকর্তা ডা. রাজীব ঘোষ, সুজিত দাস, উপ-অধিকর্তা ডা. দীপক বৈদ্য সহ রাজ্যের ৮ জেলার ৮ জন উপ- অধিকর্তা সহ অন্য আধিকারিকরা।
শুরুতে মন্ত্রী অফিস প্রাঙ্গণে একটি রেড পামওয়েল গাছের চারা রোপণ করেন ও প্রয়াত রাজ্যের প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী ড. বাহারুল ইসলাম মজুমদারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যালোচনা বৈঠকেশেষে মন্ত্রী ও আধিকারিকরা গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন হাইটেক নার্সারি এবং মাঠে যে সকল সবজি এবং ফসল পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে সেগুলি পরিদর্শন করেন ও কৃষিকাজে কর্মরত শ্রমিকদের সাথেও কথা বলেন।