এআরসি প্রযুক্তির চাষে স্বনির্ভরতার পথে রাজ্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ। তার সুদূরদর্শী পরিকল্পনা ও সক্রিয় পদক্ষেপে রাজ্য দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে আলুবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতার পথে। একসময় উত্তর ভারত থেকে আসা বীজ আলুর উপর নির্ভরশীল ত্রিপুরা আজ নিজস্ব গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষক-বন্ধু নীতির মাধ্যমে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। গত তিন বছর ধরে রাজ্যে আলু উৎপাদনের জন্য নতুন একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি- এপিকাল রুটেড কাটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরু দেশের লিমা শহরে আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া হর্টিকালচারাল রিসার্চ সেন্টারে সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গবেষণা কেন্দ্রের উপ-অধিকর্তা ড. রাজীব ঘোষ এবং তার টিম মন্ত্রী রতনলাল নাথের নেতৃত্বে এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১০৪ জন কৃষকের মাধ্যমে মোহন, হিমালিনী, উদয়, লিমা ও থর-টু নামে হরিয়ানা থেকে আগত পাঁচ জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুর চাষ শুরু হয়। মন্ত্রী রতনলাল নাথের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার ফলে পরবর্তী অর্থবছরেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪০০ জন কৃষকে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি দপ্তর।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দারুণ উৎসাহ। প্রথম বছরেই এআরসি প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৪০ মেট্রিকটন। এই আলু সরকার নিজে ২৫ টাকা প্রতি কেজি দরে কিনে হিমঘরে সংরক্ষণ করে। চলতি বছরে সেই মূল্য ২৮ টাকা করা হয়েছে। ২০২৪-২০ অর্থবছরে ফলন পৌঁছেছে প্রায় ২০০ মেট্রিকটনে। কৃষকদের একাংশ সরকারকে সহায়ক মূল্যে বিক্রি করলেও অনেকেই নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করে রেখেছে আগামী মরশুমের জন্য। এই প্রযুক্তিতে নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছেন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বেতাগার কৃষক সজল ভৌমিক, যিনি হেক্টর প্রতি ৬১.২ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন করেছেন। তার মতোই কমল দেবনাথ নামে আরেক কৃষক ‘সঙ্গম’ জাতের জি-০ আলু চাষ করে হেক্টর প্রতি ৫১.২ মেট্রিকটনের ফলন পেয়েছেন। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও স্বনির্ভরতার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। মন্ত্রী রতনলাল নাথ নিজে এই সাফল্যকে শুধু প্রশাসনিক স্তরে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে রাজ্যের ৬০জন মন্ত্রী ও বিধায়কদের হাতে এআরসি আলুর প্যাকেট উপহার হিসেবে তুলে দেন। তিনি জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত আলু শুধুমাত্র আকারে বড় ও রোগমুক্ত নয়, স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়। বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প যেমন চিপস ও ফ্রেন ফ্রাই প্রস্তুতকারীদের কাছে এই আলু অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০২৯-৩০ অর্থবছরের মধ্যেই ত্রিপুরাকে আলু বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাম এই লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তার নেতৃত্বে রাজ্যের উদ্যান ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ দপ্ত ইতিমধ্যেই ৩৬,৫০০টি আলু চারা ৩১ জন কৃষক ও চারটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে মাধ্যমে বিতরণ করেছে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের শেখানো হচে কীভাবে নিজেরাই জি-০ আলু থেকে নতুন চারা তৈরি করতে পারবেন। এছাড়াও, রাজ্যের বিভিন্ন এজেন্সি যেমন স্টেট লেভেল নোডাল এজেন্সি ওয়াটার সেড ম্যানেজমেন্ট কমিটি ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা নিজেদের অর্থায়নে নাগিছড়া গবেষণাকেন্দ্রকে আর্থিক সহায়ত দিচ্ছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নিয়েছে এই পাঁচ জাতের পাশাপাশি আরও নতুন জাতের আলু এবং কমলা রঙের মিষ্টি আলু (যার মধ্যে আয়রন অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রচুর থাকে) আনার। ত্রিপুরার কৃষি ভবিষ্যতের এই আলোর পথযাত্রার অন্যতম রূপকার মন্ত্রী রতনলাল নাথ, যিনি কৃষকদের শুধু সাহস হযোগিতা দিয়েই নয়, আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার পথে রাজ্যের কৃষিে বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রযুক্তি থাযথ ব্যবহার এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের আন্তরিকতা থাকলে, কৃষির মৌলিক ক্ষেত্রেও বিপ্লব আনা সম্ভব। ত্রিপুরা আজ সেই পথেই এগোচ্ছে।