একটি স্বীকারোক্তি

 একটি স্বীকারোক্তি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারিয়ে একেবারেই দুর্বল হয়ে গিয়েছে বামেরা’। এটি একটি স্বীকারোক্তি। এই স্বীকারোক্তি অন্য কারোর নয়। তিনি দলের তাত্ত্বিক নেতা, দলের নীতি নির্ধারকদের অন্যতম মাথা। যার নেতৃত্বে সিপিআই(এম) দল গোটা দেশে দীর্ঘসময় পরিচালিত হয়েছে। দলের পলিটব্যুরোর অন্যতম শীর্ষনেতৃত্ব, প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের। বঙ্গ সিপিএমের প্রয়াত নেতা নিরুপম সেনের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই স্বীকারোক্তি করেছেন প্রকাশ কারাত। এমনটাই খবরে প্রকাশ। বামেদের কোনও শীর্ষস্তরের নেতৃত্ব এভাবে বাংলায় পার্টির ‘রক্তক্ষয়’ নিয়ে ইদানীংকালে এমন স্বীকারোক্তি দেননি।

কারাতের এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে কারাতের এই স্বীকারোক্তি ঘিরে নিজেদের অবস্থানে থেকে নানা ব্যাখ্যা যেমন করছে। তেমনি মতামতও ব্যক্ত করছে।এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি কারাত গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘বিজেপি কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দল নয়। কেবল ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা রাজনীতি করে না। দেশের সার্বভৌমত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করে দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আধিপত্য কায়েম করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। দেশের কোনও একক শক্তির ক্ষমতা নেই বিজেপিকে পরাস্ত করার।

bjp-flag-dh-photo-1143818-1662772413-1148187-1664112854

বিজেপির মতো শক্তিকে পরাস্ত করতে বামপন্থী সংগঠনগুলিকে এক হতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন।ওই স্মরণ সভায় কারাত আরও বলেছেন, ‘ভারতের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় বদল আনাই বিজেপির মূল লক্ষ্য। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে দেশে স্বায়ত্ত শাসন করার চেষ্টা করছে। বিজেপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা আর এস এস-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা করছে। দেশের পুঁজিপতিদের সঙ্গে মিলে হিন্দু রাষ্ট্রের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বিজেপি’। বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসকেও নিশানা করেছেন প্রকাশ। বলেছেন, মূলত বামেদের বিরোধিতা করে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল।

তারা গণতন্ত্র ও মানুষের মতামতকে দমন করার কাজ করে চলেছে। দল দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৃণমূলের নেই’।এমন আরও বেশকিছু কথা বলেছেন প্রকাশ কারাত। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে উপরে উঠে এসেছে তার স্বীকারোক্তি।‘বাংলায় ক্ষমতা হারিয়ে বামেরা একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছে— এটা তিনি বুঝতে পারলেও ক্ষমতা কেন হারাতে হলো? তার ব্যাখ্যা বা কারণগুলি কিন্তু কর্মীদের সামনে উপস্থাপন করেননি। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে,দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দোষ-ত্রুটি, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে বামেরা ওয়াকিবহাল। অথচ নিজ দলের দোষ-ত্রুটি- ব্যর্থতাগুলি নিয়ে আলোচনার সাহস দেখাতে পারে না বামেরা।

না, আজও প্রকাশ কারাতরা সেই পথে হাঁটতে পারেননি।কথায় বলে রাজনীতিতে সবই সম্ভব। অসম্ভব বলে কিছু নেই।এটা যেমন সত্য।তেমনি রাজনীতিতে নীতি-আদর্শ বলেও কিছু বিষয় আছে।যেগুলো একবার নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ফিরে পাওয়া খুবই মুশকিল।যেমন মানুষ যদি একবার আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন শত চেষ্টা করেও মানুষের মধ্যে সেই আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায় না। ভারতীয় বাম রাজনীতি এখন এমনই এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।এই মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার লড়াইটা শুধু কঠিনই নয়, কঠিনতম। ফলে এখন আর এইসব স্বীকারোক্তি করে কি লাভ? ঘুরে দাঁড়াবার ‘সঞ্জীবিনী মন্ত্র’ তো কেউই দিতে পারছে না।শুধুই তো জোড়াতালি আর সুবিধাবাদী নীতি।এই দিয়ে কি আর ঘুরে দাঁড়ানো যাবে? প্রশ্নটা তোলা রইল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.