একাংশ ভোক্তার কারণে চরম আর্থিক সংকটে বিদ্যুৎ নিগম!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিদ্যুৎ নিগমে জ্বলছে লালবাতি, জুন মাসে বিল জমা মাত্র ৪০ শতাংশ’ শীর্ষক তথ্যমূলক সংবাদ গত ৩১ জুলাই দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি শুধু এক মাসের নয়। এই পরিস্থিতি বছরের বারো মাস। রাজ্যের একটা বড় অংশের বিদ্যুৎ ভোক্তা বলতে গেলে অর্ধেকের বেশি ভোক্তা বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও, তারা প্রতিমাসে সময়মতো বিল পরিশোধ করছেন না। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ নিগমের উপর। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে চলতে হচ্ছে বিদ্যুৎ নিগমকে।যে কারণে জরুরিভিত্তিক সংস্কার কাজ করতে গিয়েও বিদ্যুৎ নিগমকে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এতে শুধু বিদ্যুৎ নিগমই নয়, ভুগতে হচ্ছে বৈধ এবং নিয়মিত বিল পরিশোধ করা ভোক্তাদেরও। এই পরিস্থিতিতে নিগমের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য হচ্ছে, একমাত্র রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সহায়তা করছে বলেই এখনও নিগমের অস্তিত্ব কোনওরকম টিকে আছে।নতুবা কবেই বন্ধ হয়ে যেতো বিদ্যুৎ নিগম।প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কতদিন চলবে? রাজ্যের একটা বড় অংশের বিদ্যুৎ ভোক্তার যে মানসিকতা,তা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে।দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এই ধরনের পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, অথচ বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার মানসিকতার লোক সম্ভবত অন্য রাজ্যে নেই।লাইন কেটে দেওয়ার পরও তাদের কোনও হেলদোল নেই।চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন।এই বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করার জন্যই নিগম বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল।কিন্তু এতে যে খুব একটা লাভ হয়নি, সেটা প্রতিমাসেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিদ্যুৎ নিগম। রাজ্যের ৮টি জেলায় বিদ্যুৎ নিগমের ১৮টি বিদ্যুৎ ডিভিশন রয়েছে।এই ১৮টি ডিভিশনের অন্তর্গত ৬৭টি বিদ্যুৎ সাবডিভিশন রয়েছে।প্রতিটি সাবডিভিশনেই বিদ্যুৎ বিল কালেকশনের অবস্থা বেহাল। এইভাবে চলতে থাকলে নিগমের সাধারণ কাজকর্ম চালিয়ে রাখাই বড় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। এই ক্ষেত্রে কিছু উদাহরণ তুলে ধরলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।যেমন আগরতলা বনমালীপুর সাবডিভিশন ওয়ানে ভোক্তার সংখ্যা ১৪,৭০৮ জন। জুন মাসে বিল জমা দিয়েছেন ১১,৪৫৮ জন। বিল জমা দেওয়ার হার ৭৮ শতাংশ। বনমালীপুর সাবডিভিশন ওয়ানে ৫৭১ জন ভোক্তার বিদ্যুৎ লাইন সাময়িক কেটে দেওয়া হয়েছে।লাইন কেটে দেওয়ার পরও ৫৭১ জন ভোক্তার মধ্যে একজন ভোক্তাও এখন পর্যন্ত বকেয়া বিল জমা দেয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লাইন কেটে দেওয়ার পর ওই ৫৭১ জন ভোক্তা কি অন্ধকারে আছে?উত্তর একটাই ‘না’।এরা চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।তেমনি বনমালীপুর সাবডিভিশন টু-তে ভোক্তা রয়েছে ৯,৪০৯ জন। জুন মাসে বিল জমা দিয়েছে ৭১২৫ জন ভোক্তা (৭৬%)। প্রগতি সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৩,৬১৮ জন। বিল দিয়েছে ৯৯৪৮ জন ভোক্তা (৭৩%)। আইজিএম সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৫,২০৬ জন, বিল জমা দিয়েছে ১১,২৮০ জন (৭৪%)। ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ৪৭০৬ জন, বিল জমা দিয়েছে ৩১৯০ জন (৬৮%)। জিবি সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৫,১০৬ জন, বিল জমা দিয়েছে ১০,৬৯২ জন (৭১%)।দুর্জয়নগর সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৫,১৬০ জন, বিল জমা দিয়েছে ৭৬৪৪ জন (৫০%)। যোগেন্দ্রনগর সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৭,০৬৫ জন, বিল জমা দিয়েছে ৯২০৮ জন (৫৪%)। সেকেরকোট সাবডিভিশনে ভোক্তা ১১৩০ জন। বিল জমা দিয়েছে ৩২৩ জন (২৯%)। আমতলি সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৩,৩৮১ জন, বিল জমা দিয়েছে ৬২৭৭ জন (৪৭%)। প্রতাপগড় সাবডিভিশনে ভোক্তার সংখ্যা ৮২৯৭ জন। বিল দিয়েছেন ৫০৭৩ জন (৬১%)। বড়দোয়ালী- আরবান ভোক্তার সংখ্যা ১০,৮০১ জন, বিল দিয়েছেন ৭৮৩৭ জন (৭৩%)। বড়দোয়ালী-রুরাল সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৪,৩৭৭ জন, বিল জমা দিয়েছেন ৮৬২১ জন (৬০%)। জিরানীয়া সাবডিভিশনে ভোক্তার সংখ্যা ১০৯০, বিল দিয়েছেন ২২৩ জন ভোক্তা (২০%)। খুমুলুঙ সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৪৭১ জন, বিল দিয়েছেন ২৫৬ জন (১৭%)। মান্দাই সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ১৮১১ জন, বিল জমা দিয়েছেন ২৮১ জন (১৬%)। চম্পকনগর সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ৩৩৩১ জন, বিল জমা দিয়েছেন ১৮১৫ জন (৫৪%)। খয়েরপুর সাবডিভিশনে মোট ভোক্তা ৯৬৩৪ জন। বিল দিয়েছেন ৫৪৯৮ জন (৫৭%)। রাণীরবাজার সাবডিভিশনে ১১,৯০৮ জন, বিল দিয়েছেন ৭০০৮ জন (৫৯%)। বোধজংনগর সাবডিভিশনে ভোক্তা ৪৮৬৪ জন, বিল দিয়েছেন ২৫৯৬ জন (৫৩%)। এই সবগুলি হচ্ছে আগরতলা সার্কেল ওয়ান এবং টু-এর অন্তর্গত বনমালীপুর, ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স, বড়দোয়ালী এবং জিরানীয়া এই চারটি ডিভিশনের। অন্য সব সাবডিভিশনগুলিরও একই অবস্থা। সব থেকে ভয়ঙ্কর অবস্থা হচ্ছে জনজাতি এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার বিদ্যুৎ সাবডিভিশনগুলির।