এক দেশ এক ভোট – কোন্ দিশায়!!
‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যেই সম্মতি দিয়ে দিয়েছে।শোনা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই সংসদে এ সংক্রান্ত বিলটি পেশ হতে চলেছে।এতে শাসকদলেরই লাভ হতে চলেছে বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলি।ইতোমধ্যেই গত মার্চ মাসেই এ সংক্রান্ত একটি গঠিত কমিটি তাদের প্রস্তাব জানিয়ে দিয়েছে। এবং এ সংক্রান্ত রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছেও জমা পড়েছে।এই কমিটির সর্বেসর্বা ছিলেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ‘এক দেশ এক ভোট’ বিজেপির একটি অ্যাজেন্ডা।চলতি বছর দেশে যে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে তাতে বিজেপি নির্বাচনি প্রচারে ‘এক দেশ এক ভোট’ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।শাসক বিজেপির যুক্তি- এক দেশ এক ভোট ব্যবস্থা দেশে চালু হলে নির্বাচনের খরচ একসাথেই হয়ে যাবে।এতে আখেরে দেশের অনেক আর্থিক লাভ হবে।বার বার রাজ্যে রাজ্যে ভোট করানো, কেন্দ্রে ভোট করানোর যে খরচ তা থেকে দেশ বেঁচে যাবে।এই যুক্তি দেখাচ্ছে কেন্দ্রের শাসক।আসলে এর পেছনে রয়েছে অন্য খেলা। কেন্দ্রের শাসক বিজেপি।দশ বছর ধরে এরা ক্ষমতায়। আরও পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ।অন্যদিকে বেশিরভাগ রাজ্যেই বিজেপি শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। সুতরাং দেশে একসাথে নির্বাচন হলে আখেরে তাতে শাসকদলেরই সুবিধা হবে।এ কারণটি মূলত বিজেপিকে এই নীতিটি আনতে তাদের উৎসাহিত করেছে।এজন্য তাড়াতাড়ি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি তড়িঘড়ি রিপোর্টও দিয়ে দিয়েছে। তবে এখনও দেশে এক দেশ এক ভোেট এই প্রক্রিয়া কার্যকর হবে না।তা হতে হতে ২০২৮-৩০ সাল হয়ে যেতে পারে।এক দেশ এক ভোট প্রক্রিয়া কার্যকরী হলে প্রথমে পঞ্চায়েত, নগর পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ভোটগুলি হবে।পরবর্তীতে হবে রাজ্যের বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন।ধারণা করা হচ্ছে, সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ সংক্রান্ত বিল পেশ হবে। লোকসভায় এনডিএর বিলটি পাস করাতে কোনও অসুবিধা হবে না।তেমনি রাজ্যসভাতেও বিলটি পাস করাতে বিজেপির অসুবিধা হবার কথা নয়।কেননা, রাজ্যসভায় বর্তমানে বিজেপি তথা এনডিএর সদস্যসংখ্যা বেশি।তবে বিজেপি চাইছে, এই বিলটি নিয়ে সংসদে
আলোচনা করতে।সম্প্রতি সংসদে এ নিয়ে জোর সওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। ঘনঘন নির্বাচন হবার দৌলতে দেশে উন্নয়নমূলক কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে তার মত। প্রতি বছরই দেশে কোনও না কোনও রাজ্যে নির্বাচন। এমনকী এক বছরে তিন- চার রাজ্যেও নির্বাচন হয়। এতে রাজ্যগুলির উন্নয়নও কয়েকমাসের জন্য থমকে দাঁড়ায়। এমনকি লোকসভা নির্বাচন দুই-আড়াই মাস ধরে চললেও দেশে কোনও উন্নয়নযজ্ঞই হয় না। উপরন্তু দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয় এই ভোটের কারণে। ফলে এক দেশ এক নির্বাচন হলে নির্বাচনের নামে যে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় তা অনেকাংশেই কম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিজেপি তার এক দেশ এক নির্বাচন বিল আনতে তৎপরতা দেখাচ্ছে। যদিও দলীয় সূত্রে খবর, এ নিয়ে অবশ্য সংসদে আলোচনা চায় তারা। বিরোধীরা যথারীতি এই ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরবে। তাই সরকারও চাইছে যদি একান্তই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে তাহলে হয়তো জেপিসি গঠন করা যেতে পারে। বিরোধীদের আরও মত হলো, এর মাধ্যমে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিকাঠামো পুরো পাল্টে যাবে। তেমনি সংসদীয় গণতন্ত্রেরও তা পরিপন্থী। তাই বিল পেশ হলেও এত সহজে তা ছেড়ে দেবে না বিরোধীরা বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত এমনও হতে পারে যে জেপিসি গঠন বা একে হিমঘরে পাঠানোও হতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে সরকারের বিলটি পেশের উপর। সরকার যদি জোরজবরদস্তি করে বিলটি পাস করাতে চায় তাহলে তো কথা নেই।কিন্তু যদি এর উপর আলোচনা, বিতর্কের পর যদি কেউ এনিয়ে এগোতে চায় তাহলে হয়তো সরকার তা নিয়ে শেষপর্যন্ত জেপিসি গঠন করতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে অনেক যদি, কিন্তুর উপর। আপাতত দেখার, সরকার এক দেশ এক ভোট প্রক্রিয়া চালুর জন্য কবে বিলটি পেশ করে।