এত অধৈর্য কেন!

 এত অধৈর্য কেন!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

উনিশে এপ্রিলের মতোই আজকের প্রত্যুষটি দেশবাসীর কাছে সবিশেষ গুরুত্বের।প্রথম পর্বে ১০২টি লোকসভা আসনে নির্বাচন সম্পন্নের পরে আজ দ্বিতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, রাজস্থান,উত্তরপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর ও ত্রিপুরা মিলে মোট ৮৮টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।অর্থাৎ, ১৯১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হবে।
ভারতের অষ্টাদশতম জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত ভাবেই স্থির করে দেবে এ দেশের চরিত্র, অভিমুখ ও গন্তব্য।জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে পরিচিত এই দেশকে অনেকেই বলেন গণতন্ত্রের জননী।যদিও দুর্জনে কত কথাই না বলে! সুইডেনের গোঠেনবার্গের এক নামকরা গণতন্ত্র-নজরদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারত নাকি এখন বিশ্বের সঙ্কটময় একনায়কতন্ত্র। আমরা নাকি ক্রমে ইলেক্টরাল ডেমোক্র্যাসি বা নির্বাচনি গণতন্ত্র থেকে ইলেক্টরাল অটোক্র্যাসি বা নির্বাচনি একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি। নির্বাচনি গণতন্ত্রের অর্থ কী? সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার অভিমত অর্থাৎ জনাদেশই সেখানে শেষ কথা। সুতরাং নির্বাচনি একনায়কতন্ত্র, রাশিয়ায় পুতিনের জমানা যেমন, এখনও আমরা দুঃস্বপ্নেও তেমন ভাবতে পারি না। বলদর্পী শাসনের জোরে বিরোধীদের মনোনয়ন থেকে দূরে রেখে আসমুদ্রহিমাচল সসাগরা এই ভারতবর্ষে ভোট লুটের কথা শত নিন্দুকেও বিশ্বাস করবে না।বরং বর্তমান শাসকের হাতে ভারতের গণতন্ত্র সুরক্ষিত, অধিকন্তু আরও বিকশিত হবে কি না, এই নির্বাচন বস্তুত সেটাই স্পষ্ট করে দেবে।
বিজেপি এবার যে বিষয়গুলিকে সামনে এনে জনতার সামনে ভোট চাইছে, সঙ্গত কারণেই তার মধ্যে অন্যতম পাঁচশো বছরের প্রতীক্ষা শেষে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ।একাধিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করছেন, যারা ভগবান রামের মন্দির বানাতে সাহায্য করেছেন তারাই তাকে পুনর্বার জিতিয়ে আনবেন।এমনিতে আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারে ধর্মের ব্যবহার অনৈতিক ও অন্যায়।মোদির মুখে প্রচারের রামমন্দিরের মাহাত্ম্য প্রদর্শন নাকি আচরণবিধি লঙ্ঘন, এই মর্মে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী আনন্দ এস জোন্ডালে।তার অভিযোগটি ছিল, প্রধানমন্ত্রী রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে সামনে এনে ধর্মের নামে ভোট চাইছেন।শুধু রামমন্দিরই নয়, একই সঙ্গে তার অভিযোগ ছিল, পাঞ্জাবে করতারপুর সাহিব করিডোরের (শিখদের তীর্থযাত্রার রুট) উন্নয়নের কথা বলে তিনি শিখদের ধর্মগ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহিব’-এর অনুলিপি আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা কার্যত ধর্মের নামে উস্কানি। পাশাপাশি, এবার রাম নবমীতে আসামে প্রচারে গিয়েও মোদি সরাসরি ধর্মের আধারে ভোটে চেয়েছেন।
সেদিন ছিল অযোধ্যা মন্দিরে ‘সূর্য তিলক’ অনুষ্ঠান।তার উল্লেখ করে এবং ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ দিয়ে নির্বাচনি জনসভায় মোদি সবাইকে ওই সময় মোবাইলের আলো জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই জনসভার পর রামলালার কপালে পরা সূর্য তিলকের ছবি দিয়ে বিজেপির তরফে দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, আপনার একটি ভোটের ক্ষমতা এমনই। অভিযোগটি ছিল, বস্তুত এ সবই নির্বাচনি বিধিভঙ্গের শামিল।বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগ খারিজ করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শ্রীরামকে নিয়ে তার সরকারের ভাবনা নির্বাচনি ভাষণে তুলে ধরেছেন মাত্র, এর সঙ্গে রামের নামে ভোট চাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার দল হিন্দু দেবদেবী এবং হিন্দু উপাসনালয়ের পাশাপাশি শিখ দেবতা ও শিখ উপাসনালয়ের নামে ভোট চাননি, প্রচারে তিনি বিষয়গুলিকে দেশের আবেগের সঙ্গে জুড়ে দেখাতে
চেয়েছেন।
রামচন্দ্র যে এ দেশের আস্থা ও আবেগের একটি প্রতীক, রামমন্দিরের ঐতিহাসিক রায়দানে সে কথাই উল্লেখ করেছিলেন দেশের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতির রঞ্জন গগৈ।তার পরেও যদি অমিত শাহ মিরাটের সভায় মাথার উপর রামলালার ছবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কিংবা যারা রামকে এনেছেন, আমরা তাদের জয়ী করব অথবা রামমন্দিরের জন্য একটি ভোট বলে স্লোগান দেন, তার মধ্যে অন্যায় কিছু থাকতে পারে কি?এ কথাটি বিরোধীদেরও সবিশেষ বোধগম্য হওয়া উচিত। সংখ্যালঘুরা যেমন নয়, সংখ্যাগুরুরাও নিশ্চয়ই অচ্ছ্যুৎ নয়। আদর্শ গণতন্ত্রে সেটাই বিধেয়।অতএব কোনও দল এবং সেই দলের নেতৃত্ব যদি সংখ্যাগুরুতন্ত্রের ইমারতটিতে মজবুত করে তুলতে চান, এমনকী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাকার বুনিয়াদি ইস্যু ব্যতিরেকে যদি সংখ্যাগুরু আধিপত্যের জয়স্তম্ভ রচনা করতে চান সেটিও নিশ্চয়ই অপরাধ নয়। সুতরাং,এত অধৈর্য কেন? শেষ রায় তো মানুষের!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.