এনএইচআইডিসিএলের ভূমিকা রহস্যজনক, প্রশ্নের মুখে সরকার!!

 এনএইচআইডিসিএলের ভূমিকা রহস্যজনক, প্রশ্নের মুখে সরকার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়
সরকারের সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমার জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য গত পাঁচ বছরে ১১,৯৮২ কোটি ৩ লক্ষ টাকা Project Cost বরাদ্দ দিয়েছে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্পোরেশন লিমিটেড অর্থাৎ এনএইচআইডিসিএল ১১,৯৮২ কোটি ৩ লক্ষ টাকার Project Cost অনুযায়ী ৩০টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায়। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের দেওয়া এই টাকায় এগারো হাজার নয়শ বিরাশি কোটি তিন লক্ষ টাকা খরচ করে জাতীয় সড়ক নির্মাণ, ইপিসি ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ থেকে অ্যালাইনমেন্ট পর্যন্ত খরচ করবে ভারত সরকারের আওতাধীন রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট সংস্থা অর্থাৎ এনএইচআইডিসিএল। নির্মাণকারী সংস্থাকে পেমেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে সড়কের সুপারভিশন করা এনএইচআইডিসিএলের কাজ। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ত্রিশটি নির্মীয়মাণ জাতীয় সড়কের মধ্যে ১৪টি জাতীয় সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এর জন্য ইতিমধ্যে ৪২৭২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার Project Cost খরচ হয়ে গেছে, যদিও সম্পন্ন হওয়া অধিকাংশ জাতীয় সড়ক নির্মাণের এক-দেড় বছরের মধ্যে বেহাল দশা। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী যে ১৪টি জাতীয় সড়কের কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো হলো (এক) উদয়পুর-সাক্রম এনএইচ ৪৪, (দুই) ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার, (তিন) আগরতলা-উদয়পুর এনএইচ ৪৪, (চার) চুরাইবাড়ি-আগরতলা ৮, (পাঁচ) খয়েরপুর-আমতলি, (ছয়) ফুলতল-জুরিছড়া, (সাত) আগরতলা-খোয়াই প্যাকেজ ওয়ান, (আট) আগরতলা-খোয়াই প্যাকেজ থ্রি, (নয়) জুরিছড়া-বামনছড়া, (দশ), শ্রীরামপুর-খোয়াই, (এগারো) কৈলাসহর-কুর্তি প্যাকেজ ওয়ান, (বারো) কৈলাসহর-কুর্তি প্যাকেজ ওয়ান, (তেরো) মনু-লালছড়া ১০৮/এনএইচ৪৪এ, (চৌদ্দ) কাঞ্চনপুর-ভাংমুন প্যাকেজ থ্রি। এই চৌদ্দটি ওয়ার্ক অর্ডারে ৩৬০.০৫ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক সম্পন্ন হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এর জন্য Proj- ect Cost চার হাজার দুশ বাহাত্তর কোটি ছেচল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হলেও তৈরি করা সড়কগুলি অল্পদিনেই অকেজো হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ জোড়াতাপ্পি দিয়ে সড়কগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে নির্মীয়মাণ সড়কে যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। কুমারঘাট-মনু নবনির্মিত জাতীয় সড়কের অবস্থা বেহাল। এবড়ো থেবড়ো সড়কের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে এবং ঘন ঘন যান দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে আরও যে ১৬টি জাতীয় সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়নি অর্থাৎ কাজ চলছে বলে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ দপ্তর থেকে দেখানো হয়েছে ওইসব সড়কের কোনটি ১৭ শতাংশ, কোনটির কাজ ৪১ শতাংশ, আবার কোনও সড়কের কাজ ২০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সর্বত্র জাতীয় সড়কে মুখ থুবড়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। Rehabilitation and up-gradation of road from design km 25.250 to km. 36.460 (total length 11.210 km) of Kailashahar-Kurti bridge section on NH-208A to 2 lane with – paved shoulder (Packege III) এই কাজের Project Cost হলো ১৭৪ – কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। এই কাজ শুরু হওয়ার পর নির্মাণকারী ঠিকাদার সংস্থা এ কে এন্টারপ্রাইজ রানিং বিল পেয়ে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে ওই সড়ক নির্মাণের কাজ করছে ব্রহ্মপুত্র ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড। কিন্তু এই সংস্থাও নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ কে এন্টারপ্রাইজ পালিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা বা এখনও পর্যন্ত ওই ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। এই ঘটনায় এনএইচআইডিসিএলের উত্তর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিএম বিদ্যাসাগর মিলের দায়িত্বহীনতা, অধিক লোভ এবং ঠিকাদার সংস্থাগুলির সাথে গোপন যোগাযোগ থাকার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেখা যাচ্ছে সড়ক নির্মাণ সংস্থাগুলির সাথে এনএইচআইডিসিএলের গোপন সম্পর্ক। পাঁচ বছরে সতেরো- আঠারো শতাংশ কাজের আউটপুট তারপরও নির্মাণ সংস্থাগুলিকে কেন কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে না? এই প্রশ্ন উঠেছে। কমিশন এবং অবাধ লোপাট বাণিজ্য চললেও রাজ্যের এনএইচআইডিসিএলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং জেনারেল ম্যানেজার কোনও ভূমিকা নিচ্ছেন না। দাবি উঠেছে, কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক জরুরি ভিত্তিতে এনএইচআইডিসিএলের রাজ্যের কর্মরত – আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ভিজিলেন্স তদন্ত এবং এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। সবচেয়ে নজিরবিহীন ঘটনা জাতীয় সড়কের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট বাণিজ্য চললেও রাজ্য সরকার নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। সরকার মুখে শোনাচ্ছে শুধু উন্নয়নের কথা। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন কাজের চেয়ে বেশি হচ্ছে অর্থ লোপাট। সারা রাজ্যে সড়ক ও যোগাযোগ খাতের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট চলেছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ মেয়াদ শেষেও রয়ে গেছে অসমাপ্ত।
এসব অসমাপ্ত কাজের জন্য সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক রাজ্যে অপ্রয়োজনীয় এবং কম প্রয়োজনীয় রাস্তার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার জন্য। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করা যাচ্ছে না কোথাও। এনএইচআইডিসিএলের জেনারেল ম্যানেজারের ভূমিকা রহস্যজনক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.