কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে রেল তথা কৃষিমন্ত্রী বিহারের ৫ বারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সাথে বিজেপির সম্পর্কের রসায়নটা বেশ কিছুদিন ধরেই ঠিকঠাক চলছিল না । কিন্তু সেই ফাটলটা দিন যত গড়িয়েছে , ততই বেশী প্রশস্ত হয়েছে । ফাটল সারাইয়ের চেষ্টা বিজেপি কিংবা জেডিইউ — কোনও তরফেই পরিলক্ষিত হয়নি । বরং বিজেপি নেতৃত্ব বকলমে অমিত শাহের সর্বগ্রাসী রাজনীতি এবং বিহার রাজনীতিতে তাঁর অতি সক্রিয়তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল । যারই ফল হিসাবে বড় অসময়েই ভেঙে গেল বিহারে বিজেপি সংযুক্ত জনতা দলের জোট সরকার।
অসময়ে শব্দটা বলা হচ্ছে এই কারণে বিজেপির সঙ্গে জোট করেই বিহারে সরকার গড়েছিলেন জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার । কিন্তু দুই বছর যেতে না যেতেই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ‘ আগ্রাসী ‘ চেহারা ও ‘দাদাগিরিতে ’ দমবন্ধ দশা সৃষ্টি হয়েছিল নীতীশ কুমারের । এই অস্বস্তি কাটিয়ে তবুও সরকারটা জোড়াতালি দিয়ে টেনে নেওয়ার চেষ্টা কিছুদিন করলেও পরিস্থিতিটা দিন যত যাচ্ছিল ততই নাকি অস্বস্তির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় । একটা সময় রাজনৈতিক চিত্র এতটাই গোলমেলে হয়ে দাড়ায় , নীতীশ কুমার যে বিজেপির প্রতি বিরক্ত সেটা বোঝাতে আর তেমন কিছু রাখঢাক রাখেননি তিনি ।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির না থাকা কিংবা বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে না যাওয়া এমনকি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও গরহাজির থাকা— কোনও ভাবেই বিজেপির সঙ্গে নিজের দূরত্ব তৈরির বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে চেষ্টার কিছুই কসুর করেননি । আসলে বিজেপি প্রতি মাত্র দুই বছরেই নীতীশের এই বিরক্তির পেছনে ছিল অনেকগুলো কারণ । নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিজেপির একটা অংশ কিছুতেই তাকে মানতে পারছিলেন না । কম সংখ্যক বিধায়ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশের রিমোট কন্ট্রোল তাই পরিচালিত হতো দিল্লী থেকে । বিজেপি তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছিল না এই অভিযোগও ছিল নীতীশ কুমারের ।
পাশাপাশি বিধানসভার স্পিকার ছিলেন বিজেপি নেতা বিজয় কুমার সিন্হা , যার সঙ্গে নীতীশ কুমারের বনিবনা একেবারেই ছিলো না । আবার নীতীশের ঘনিষ্ঠ সুশীল মোদিকে বিজেপি দিল্লীতে সরিয়ে নিয়ে এমন দুজনের হাতে উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় যারা কার্যত অমিত শাহের ইঙ্গিতে সরকারে নানা জটিলতার সৃষ্টি করছিলেন । সম্প্রতি জেডিইউর আরেক নেতা আরসিপি সিংকে গোপনে দল ভাঙিয়ে রাজ্যসভায় নেওয়ার ঘটনা এবং নীতীশ বিরোধিতায় প্রকাশ্যে তাকে নামানো এই ঘটনাপ্রবাহ কোন ভাবেই জোটের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো লক্ষণ ছিলো না । বরং বিহারের জেডিইউর পরিণতি মহারাষ্ট্রের শিবসেনা কিংবা পাঞ্জাবের আকালি দলের মতো না হয়ে যায় সেই আশঙ্কা নীতীশ কুমারের তো ছিলই ।
এসব কিছুর মিলিত ফল হিসাবে নীতীশ বিজেপির কোনও কটূ অভিসন্ধির ইঙ্গিত পান । বিহারে বিজেপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে আরজেডি , কংগ্রেস সহ বিরোধীরা অনেক আগে থেকেই উৎসাহী ছিল । আর সেই সুযোগেরই পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে পাচ্ছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনার দলের মতো কোনও ঘটনা ঘটে না যায় তার আগেই আবারও রাজনীতিতে বড়সড় ইউ টার্নের সিদ্ধান্ত নিলেন নীতীশ কুমার । মঙ্গলবার বিকালে রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র তুলে দিলেন রাজ্যপালের হাতে । বিহারের মতো গো – বলয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য এনডিএ তথা বিজেপির হাতছাড়া হয়ে যাওয়া জাতীয় রাজনীতির নিরিখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ডেকে আনবে তা এ রকম পরিষ্কার ।
কারণ আগামী ২০২৪ সালেই দেশে লোকসভা নির্বাচন । সেক্ষেত্রে বিহারের মতো হিন্দি বলয়ের একটি রাজ্য বিরোধী জোটের হাতে চলে আসা নিঃসন্দেহে বিরোধীদের সম্ভাব্য মহাজোট গঠনের লক্ষ্যে বড়সড় একটা পদক্ষেপ । যদিও বিহারের ক্ষমতার পালাবদলের পর নীতীশের নেতৃত্বেই যে আরজেডি , কংগ্রেস এবং বামেদের নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হতে চলেছে তার বার্তাও কিন্তু ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে মিলতে শুরু করেছে । বিরোধী দলের নেতৃত্ব যদিই বিহারের মসনদে এই ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টিকে মহারাষ্ট্রের ঘটনার বদলা হিসাবেই দেখছেন । কিন্তু রাজনীতিতে বরাবরই শিবির বদলে অভ্যস্ত নীতীশ কুমারের উপর বিরোধীরা আদৌ কতটা আস্থা রাখতে পারবেন সেটাও বড় প্রশ্ন ।
যদিও বিহারের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির সঙ্গে জোট ছিন্ন করার আগে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া এবং লালুপুত্র তেজস্বীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নতুন জোটের বার্তা দিয়েছিলেন । শুধু তাই নয় , অতীত ভুলে নতুন করে মহাজোটের পথচলার কথাও বলেছিলেন । এই প্রেক্ষিতে বিহারে নতুন রামধনু মন্ত্রিসভা আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে নতুন আরও কী ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দেয় সেটাই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সামনে বড় জিজ্ঞাসা । তবে জোট রাজনীতির প্রশ্নে এনডিএ – র বিশেষ করে মোদি – শাহ জুটির জোটধর্ম পালনের ভাবমুর্তির চিত্রটা যে খুব বেশি পরিচ্ছন্ন নয়- তা শিবসেনা , আকালি সহ বিভিন্ন জোটসঙ্গীর পর এবার জেডিইউর ভূমিকা তা আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল । যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলার সময় এখনই আসেনি । কিন্তু বিজেপির মধ্যে আত্মম্ভরিতা যেভাবে দিনদিন বেড়ে চলছে তা চলতে থাকলে এনডিএ জোটের দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে দিতে বেশি সময় লাগবে না সেটা বলাই যায় । যা নিঃসন্দেহে বিজেপির জন্য আশার বার্তা নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…
অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…
অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…
অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…
প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…
অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…