এনডিএ দীর্ঘায়ু হউক!!

 এনডিএ দীর্ঘায়ু হউক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে ২০২৪ লোকসভার সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা দেহে হইয়াছে এক পক্ষকাল গত।নতুন জোট সরকারের শপথ গ্রহণ পর্ব শেষ।এইবার লোকসভার প্রোটেম স্পিকার সকল সদস্যকে শপথবাক্য পাঠ করাইবেন।লোকসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকিয়ে নতুন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাহার সরকারের শক্তি পরীক্ষা দিবেন।সেই মতো সকল প্রস্তুতি চলিতেছে।চলিতেছে অধ্যক্ষ নির্বাচন লইয়া পক্ষে বিপক্ষের কথাবার্তা।মোদি নেতৃত্বাধীন তিন তিনবারের সরকার গঠন হইয়াছে, যাহা ইতিহাসে কেবল জহরলাল নেহেরু গড়িতে পারিয়াছিলেন।আবার অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি পরপর তৃতীয় বারের যে সরকারেরটি গড়িয়াছেন ইহা জোট সরকার, এনডিএ সরকার।জোটের সকল সদস্য মিলিয়া তাহারা যে সংখ্যা জুড়িয়াছেন সেই সংখ্যাটিও দেশে সরকার গড়িবার ক্ষেত্রে এক অন্যতম নজির। নজির কম সংখ্যার।
পূর্বে ইউনাইটেড ফ্রন্ট, এনডিএ, ইউপিএ ইত্যাদি নামে যতগুলি সরকার গড়া হইয়াছিলো মোদি নেতৃত্বাধীন এই এ ডিএ সরকার হইতেছে সংখ্যার দিক হইতে সবচাইতে ন্যূন সংখ্যার সরকার। বিজেপি এককভাবে ম্যাজিক সংখ্যা হইতে ৩২ আসন নিচে থামিয়া গেলো।জোটের অন্য সকল দলের আসন মিলিয়া ২৯৩ সংখ্যা যুক্ত হইয়াছে।এর আগে কোনও জোট সরকারের মোট আসন সংখ্যা সাড়ে তিনশো,সোয়া তিনশোর নিচে ছিলো না।সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফল হইতে এই শিক্ষা লইতে হয় যে,দেশের জনগণ না ইন্ডিয়া না এনডিএ কাহাকেও স্পষ্ট এবং নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয় নাই।কি বিজেপি বা কি কংগ্রেস কোনও দলকেই একক সরকার গড়িতে দিতে চাহে নাই।
অতঃপর যাহারাই সরকার গড়িবে, জোটসাধনা করিয়া সরকার চালাইতে হইবে। তাহারা সংসদে সহমতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করিবেন।ইহাই জনগণের রায়।এই রায়কে আশীর্বাদ বলিয়া মাথায় তুলিয়া লইয়া সরকার গড়িবার দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করিলেন নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি তাহার আবেদনে সায় দিয়া তাঁহার মুখে শক্কর তুলিয়া দিয়া সাংকেতিক শুভেচ্ছাও জানাইয়া দিলেন। এইবার জোটধর্ম মানিয়া সরকারের সকল বিষয় জোটের অন্দরে এবং বাহিরে সহমত করিয়া চলিবেন প্রধানমন্ত্রী।যাহাতে ন্যূন সংখ্যার সরকার পাঁচ বছরকাল চলিতে কোনও অসুবিধা না হয়। যাহাতে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশবাসীকে আর আকাল ভোটের গাজন শুনিতে না হয়।
কিন্তু এই কথাগুলি বলা যত সহজ তাহা পালন করা ততটাই কঠিন।এই সময়ে অধ্যক্ষ নির্বাচন লইয়া জোট সরকারের অভ্যন্তরে মতান্তর শোনা যাইতেছে।শরিকেরা তাহাদের দলের সদস্যকে অধ্যক্ষ নির্বাচন করিতে চাহিতেছেন।ধরিয়া লওয়া গেলো রেলমন্ত্রক,স্বরাষ্ট্র, অর্থমন্ত্রকের মতন মন্ত্রকগুলি মোদি তাহার শরিকদের নিরস্ত করিয়া যে প্রকারে আগের মতন ধরিয়া রাখিয়াছেন শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদও তিনি ধরিয়া রাখিতে পারিবেন। আবার ওম বিড়লাকেই অধ্যক্ষের আসনে বসাইয়া বুঝাইয়া দিতে চাহিবেন, কিছুই বদলায় নাই। সকল কিছু আগের মতনই রহিয়াছে।ভাবনার কিছুই নাই।
দেশের আম জনগণ এই লইয়া ভাবিতে চাহেনও না। তাহারা ভাবিবেন আবার পাঁচ বছর পর, আবার ভোটদানের অবকাশ আসিলে।এই সময়ে যাহাদের ভাবিতে হইবে তাহাদের ভাবনার দায় দিয়া জনগণ এখন কেবলই নীরব দর্শক থাকিবেন। যাহাদের অপর ভাবনার দায় ন্যস্ত, সেই বিরোধীরা এইবার যথেষ্ট শক্তিশালী রহিয়াছেন।তাহারা পদেপদে সরকারকে বুঝাইতে সক্ষম যে প্রজাতন্ত্রের সংসদ আর রাজসভা এক নহে। প্রজাতন্ত্রে সরকার চলিবে সহমতের ভিত্তিতে, কাহারওবা বিশেষ কোনও গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাধীন ইচ্ছা অনিচ্ছায় নহে।সরকার যদি সহমতে চলিতে পারে তবেই সেই সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদকাল ধরিয়া যেমন চলিতে পারিবে আবার দেশের নকল মানুষ গণতান্ত্রিক সুপবনে মুক্ত বায়ুর জোগান পাইবেন।ভোটে ত্রিশঙ্কু যে ফলাফল তাহার পশ্চাতে জনগণের আকাঙ্খা এমনই।আবার বলিতে হয় এই কথাগুলি বলা যত সহজ করিয়া দেখানো তত সহজ নহে। এই কথা অনস্বীকার্য যে দেশের একাংশ মানুষকে লইয়া নির্বাচনের প্রচারে নানান ধরনের কথা চলিয়াছিলো। ফলাফল ঘোষণার পরেও সেই সকল মানুষের ভোট কোন্ পক্ষে গিয়াছে তাহা লইয়া গবেষণার বিরাম নাই।ইহারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু অংশের মানুষ। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে তাহাদের আলাদা করিবার উপায় নাই। কিন্তু ভোটের প্রচারে মুসলিম হইতে মঙ্গলসূত্র,মোঘল হইতে শুরু করিযা মাছ-মাংস সকলরকম কথাই হইয়াছে, যে সমস্ত কথাকে সাধারণত নির্বাচন কমিশন ‘বিভাজনমূলক’ তকমা দিয়া দিয়া ভারতের নির্বাচন কমিশন বাতিল করিয়া আসিয়াছে এতোকাল, কিন্তু এই নির্বাচনে তাহারা চুপ ছিলো। তবে ফলাফলে দেখা গিয়াছে এই অংশের মানুষের ভোট একচেটিয়া ইন্ডিয়া জোটের দিকেই যায়। এমনই বিশ্লেষণ পাওয়া যাইতেছে।
শাসক দলের অভিযোগ, সংবিধানের ভয় দেখাইয়া ইন্ডিয়া জোট বিভাজনমূলকভাবে ইহাদের ভোট নিজেদের দিকে টানিয়া লইয়াছে।কংগ্রেস বরাবর এই ধরনের তোষণমূলক রাজনীতি করিয়া থাকে। প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনি প্রচারে বরাবর বলিয়াছেন, ধর্মের ভিত্তিতে তিনি সংরক্ষণ দিবেন না। তিনি এসসি, এসটি, ওবিসি সংরক্ষণের পক্ষে ঠায় দাঁড়াইয়া থাকিবেন। কিন্তু এইবারের সরকার সেই অর্থে মোদি সরকার হয় নাই, এনজিএ সরকার হইয়াছে। প্রধানমন্ত্রী এসসি, এসটি, ওবিসি সংরক্ষণের পক্ষে দাঁড়াইলেও তাহার শরিকেরা মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়া সংসদে আসিয়াছেন। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডু চার শতাংশ মুসলিম সংরক্ষণের কথা বলিয়াছেন, এখনও বলিতেছেন।বিহারে নীতিশ কুমার জাতিগণনা তত্ত্বের একজন উল্লেখযোগ্য মুখ। তিনিও মুসলিম সংরক্ষণের কথা ছাড়া আগামী বিধানসভা নির্বাচন লড়িতে অক্ষম। তাহাদের দাবি কি মানিবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি?
জোটধর্মে মানিতে হইবে, রাজা না হইয়াও রাজধর্মে মানিতে হইবে। ইহাই দস্তুর। ধান ভাঙতে শিবের গীত মনে হইলেও গাইতেই হইতেছে যে নানা জাতি নানা মত নানা পরিধানের দেশ,বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সংসদে মোট জনসংখ্যার তুলনায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব দিনে দিনে কমিতেছে।বর্তমান সংসদে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা ২৪ জন।২০১৯-এর লোকসভায় এই সংখ্যা ছিলো ২৬।এই সংসদে ২৪ সাংসদের মধ্যে ২১ জন রহিয়াছে ইন্ডিয়া ব্লকে।কংগ্রেসের সঙ্গে রহিয়াছেন নয়জন, তৃণমূল কংগ্রেস পাঁচ, সমাজবাদী পার্টিতে চার, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগে দুই, ন্যাশনাল কনফারেন্সে একজন। অনিবন্ধীকৃত এআইএমআইএম- এর একজন, আসাদুদ্দিন ওয়াইসি একমাত্র নিজেই জিতিয়া আসিয়াছেন। কাশ্মীর বারামুলা হইতে ইঞ্জিনীয়ার রশিদ, লাদাখ হইতে মোহম্মদ হানিফ নির্দল হিসাবে জিতিয়া আসিয়াছেন। অপরদিকে শাসক এনডিএ জোটে একজন মুসলিম সাংসদও নাই। বিজেপি এই নির্বাচনে একজন মুসলমান প্রার্থী করিয়াছিল, জিতিয়া আসে নাই।
ইন্ডিয়া জোট বা কংগ্রেসই কেবল মুসলমানদের সংরক্ষণের কথা বলে নাই, এনডিএর শরিকেরাও বলিয়াছে।অতঃপর তোষণ না বলিয়া সামাজিক জনকল্যাণ প্রকল্পের নামে হইলেও ইহাদের জন্য ভাবিতে হইবে এনডিএ সরকারকে। তাহাতেই দেশের এবং সরকারটি কল্যাণ।উল্লেখ্য, মুসলমানদের মধ্যে দরিদ্র্যতর যে সকল শ্রেণী রহিয়াছে বিশেষত পচমন্দা শ্রেণীর মানুষেরা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বিতীয় আমল হইতে সংরক্ষণ লইয়া কথা বলিয়া আসিতেছেন।প্রধানমন্ত্রী মোদি তাহাদের কথায় আমলও করিয়াছেন যথেষ্ট।তাহাতে কোনও সমস্যা ঘটে নাই, পসমন্দা সমাজ বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বলিয়াই তখন পরিগণিত হইতেছিল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.