এবার কি ইউসিসি?

 এবার কি ইউসিসি?
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার। রামমন্দির প্রতিষ্ঠা।তিন তালাক প্রথা বাতিল।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ (সিএএ)। ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫।একের পর এক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ‘মোদি’ নামক অশ্বমেধের ঘোড়া। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের পর এবার কি দেশজুড়ে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ (ইউসিসি) অর্থাৎ ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালুর পথে অগ্রসর হচ্ছে মোদি সরকার গোটা দেশেই রাজনৈতিক মহলে এখন এই নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই গুঞ্জনকে আরও উস্কে দিয়েছে রবিবার ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিও। ওই ভিডিও-এর সত্যতা অবশ্য দৈনিক সংবাদ যাচাই করেনি। তবে খবরে প্রকাশ, ওই ভিডিওতে ঘোষণা করা হয়েছে, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের পর এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) প্রবর্তনের পালা। এক মিনিট ছয় সেকেন্ডের ভিডিওতে মোদি সরকারের তৃতীয় মেয়াদের অর্জন হিসেবে ২৬/১১এর অভিযুক্ত তাহাবুর রান্নার প্রত্যর্পণ। ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলায় সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে চার্জশিট। মেহুল চৌকসির গ্রেপ্তার ও কংগ্রেস নেত্রী সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট বদরাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ‘এটা কেবল শুরু’ বলে বিজেপি দাবি করেছে।
ভিডিওতে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে মোদি সরকারের স্থিতিশীলতা এবং হরিয়ানা, দিল্লী, মহারাষ্ট্রে নির্বাচনি জয় তুলে ধরা হয়েছে। বিরোধীদের’ এই সরকার পড়ে যাবে’ মন্তব্যেরও জবাবে বিজেপি তাদের কার্যক্রমের তালিকা দিয়ে প্রমাণ করেছে যে মোদি ৩.০ মোটেও দুর্বল নয়। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত মোদি সরকার এবার দেশজুড়ে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ চালু করার পথে অগ্রসর হবে। যদিও ইতিমধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকর করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম রাজ্য উত্তরাখণ্ড, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ এই দেওয়ানি আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আসলে কী?দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে একটা বড় অংশ এখনো এই বিষয়ে অবহিত নন। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৪ ধারাতেই এই ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এটি হচ্ছে, ভারতের নাগরিকদের ব্যক্তিগত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব। যা সকল নাগরিকদের ক্ষেত্রে তাদের ধর্ম নির্বিশেষে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইন তাদের ধর্মীয় শাস্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ব্যক্তিগত আইন প্রথম ব্রিটিশ শাসনকালে প্রণীত হয়েছিল। দেশের বর্তমান শাসক দল অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টি দেশ জুড়ে একটি ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এর থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে, এটি ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরও স্পষ্ট করে বললে, ভারতের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে, এটি তারই প্রকৃত অর্থ বহন করে বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ একাংশের অভিমত।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিমত, দেশজুড়ে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রবর্তনের ঘোষণা বিজেপির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি হলেও, এই পথে অগ্রসর হওয়া খুব একটা সহজ হবে না। কাজটি অনেকটাই কঠিন। এতে দেশজুড়ে ধর্মীয় ও সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
শুধু তাই নয়, বিরোধী দলগুলির তীব্র প্রতিবাদ এবং আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গেরুয়া শিবিরের এই পদক্ষেপে দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন এখনো অব্যাহত।একই সাথে দেশজুড়ে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে চলছে জনজাগরণ কর্মসূচি। এরই মধ্যে জল্পনা উসকে দিয়েছে ইউসিসি। বিজেপি তাদের সাম্প্রতিক সাফল্যের ভিত্তিতে ইউসিসি বাস্তবায়নে নাকি খুবই আত্মবিশ্বাসী। এই আত্মবিশ্বাস কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা সময়ই বলবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.