এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু, একুশের বঙ্গ তনয়া সায়নী।

 এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু, একুশের বঙ্গ তনয়া সায়নী।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ  ইতিহাস গড়ে ফেললেন বঙ্গ তনয়া ২১ বছরের সায়নী দাস । ভারতীয় ক্রীড়ামহলে যার অন্য নাম ‘ জলকন্যা ‘ । এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসাবে তিনি জয় করলেন অন্যতম বিপদসঙ্কুল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মোলোকাই চ্যালেন । গত রবিবার ভোরে সায়নী মোলোকাই চ্যানেল জয় করে আমেরিকার ভূখণ্ডে পৌঁছন বলে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে । ৩৩ কিলোমিটার বিস্তৃত মোলোকাই চ্যানেল পেরোতে সায়নী সময় নিয়েছেন ১২ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট । সায়নী পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার মেয়ে । এর আগে সায়নী একে একে জয় করেছে ইংলিশ চ্যানেল , রটনেস্ট চ্যানেল ও ক্যাটালিনা জয় করেন চ্যানেল । ২০১৭ সালে সায়নী প্রথম বার সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন । ২০১৮ সালে জয় করেন রটনেস্ট চ্যানেল এবং ২০১৯ সালে উত্তর আমেরিকার ক্যাটালিনা চ্যানেল । সান্টা ক্যাটেলিনা দ্বীপ থেকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাটেলিনা চ্যানেল । মোলোকাই অভিযানে নামার জন্য তখন থেকেই কঠোর অনুশীলনে মগ্ন ছিলেন সায়নী । কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে তার মোলোকাই চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন দুই বছর থমকে যায় । সেই স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেল দ্রুত । 
দূরপাল্লার সাঁতারুদের কাছে মোলোকাই চ্যানেল পেরনো আজও বিভীষিকার অন্য নাম । কারণ নীল মতো ভয়ঙ্কর সব জলজ সমুদ্রের অগভীরেই সেখানে হাঙরে ঘোরাফেরা । তার উপর মোলোকাই চ্যানেলের জলে মারাত্মক কারেন্ট । – উপর থেকে মনে হয় জল স্থির , কিন্তু কিছুটা গভীরেই জলের তীব্র টান । তাই আন্তর্জাতিক স্তরের বহু দূরপাল্লার সাঁতারু মনে মোলোকাই চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন পোষণ করলেও সচরাচর তারা সেই ঝুঁকি নিতে পারেন না । এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসাবে তা করে দেখিয়ে দিলেন এই বঙ্গ তনয়া । মলোকাই অভিযানে নামার জন্য বহুদিন ধরেই কঠোর অনুশীলনে মগ্ন ছিলেন সায়নী । তার বাবা রাধাশ্যাম দাস বলেন , ‘ মেয়েটা অনেক দিন ধরে পাগলের মতো পরিশ্রম করছিল । সব সময় বলত , বিশ্বের প্রথম সাঁতারু হিসাবে ওই প্রথম এই দুঃসাহসিক অভিযানে সফল হবে । আজ আমার গর্বে বুকটা ফুলে যাচ্ছে । সাঁতারের দুনিয়ায় ইতিহাস রচনা করে ফেলল সায়নী । ‘ মাত্র ছয় বছর বয়সে সাঁতার শুরু করেন সায়নী । সাঁতার শুরু করার পাঁচ মাসের মধ্যে কালনার গ্রামে বড় বড় পুকুর পার করত ছোট্ট মেয়েটা ওই বয়সেই সায়নীর প্রথম অভিযান কালনার অদূরে পূর্বস্থলীর গঙ্গায় । প্রথম চেষ্টাতেই ১০ কিলোমিটার গঙ্গায় সাঁতরেছিল সে । এরপর একে একে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে একাধিক সাঁতার পুরস্কার জয় করে সায়নী । এই মুহূর্তে তাকে ভারতীয় সাঁতারুদের ‘ মুখ ’ বলা হয় । শুধু সাঁতার নয় , তরুণী সমাজে সায়নী জনপ্রিয় অনুপ্রেরণামূলক বক্তাও বটে । ২০১৭ সালে সায়নী ও তার সাঁতার দলের সদস্যরা সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেয় । প্রথম লক্ষ্য ছিল ইংলিশ চ্যালেন । আটলান্টিক মহাসাগরের বুক চিরে দক্ষিণ ইংল্যান্ড থেকে দক্ষিণ ফ্রান্স । ইংলিশ চ্যানেল অভিযানে নামার আগে দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা সাঁতার অনুশীলন করতেন সায়নী । মূলত কনকনে ঠান্ডায় সারারাত ধরে সমুদ্রে সাঁতার প্র্যাকটিশ করতেন । ইংলিশ চ্যানেল অভিযানে নামার সময় সায়নীর পাশে কোনও বড় স্পনসর ছিল না । এমনকী পশ্চিমবঙ্গ অথবা কেন্দ্রীয় সরকার কেউ সায়নীর পাশে দাঁড়ায়নি । সেই অবস্থায় অর্থের সংস্থান করতে রাধাশ্যামবাবু নিজের বসতবাড়িটি বন্ধক রেখে মেয়ের জন্য টাকা ধার করেন । প্রথম বারের চেষ্টাতেই ইংলিশ জলকন্যা । সময় নিয়েছিলেন ১৪ ঘণ্টা ৮ মিনিট । সেই সাফল্যের পরেই সাত সমুদ্র সাঁতরে পেরনোর চ্যালেঞ্জ নেন তিনি । ২০১৮ সালে ১৯.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রটনেস্ট চ্যানেল অভিযানে নামেন ।

Avatar

Dainik Sambad

Leave a Reply

Your email address will not be published.