এসটিএফ ও ভবিষ্যৎ

 এসটিএফ ও ভবিষ্যৎ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত দু’দিন আগেই রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ গঠন করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।এসপি পদমর্যাদার একজন আইপিএস অফিসারকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের মাথায় বসানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের অধীন এই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সংক্ষেপে এসটিএফ গঠন করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আচমকা টাস্ক ফোর্স গঠন করা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে জোর চর্চা চলছে।নানা মহল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের নানা রকম ব্যাখ্যা ও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।সাধারণ আমজনতার মধ্যেও এসটিএফ গঠন করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) উত্তর-পূর্বের সীমান্ত রাজ্য ত্রিপুরায় নতুন হলেও,দেশে বা দেশবাসীর কাছে নতুন নয়।দেশের বহু রাজ্যেই এসটিএফ রয়েছে।ফলে এসটিএফ কী?তাদের কাজ কী বা কাজের ধরন কী ?কেন গঠন করা হয় এসটিএফ ?ইত্যাদি নানা বিষয়ে আমজনতা মোটামুটি ওয়াকিবহাল।একেক রাজ্যে এসটিএফের কাজের ধরন আলাদা হলেও মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একই।জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমন থেকে শুরু করে সমাজের নানাবিধ অপরাধ দমনে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে এসটিএফ।সংবিধানে উল্লেখিত আইনের মধ্যে থেকে কাজ করলেও এসটিএফের কাজের ধরন অনেকটা ‘রাফ অ্যাণ্ড টাফ’ গোছের। সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে এই বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয় বলেই হয়তো এসটিএফ সাধারণ পুলিশের মতো নয়।ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা কেন এসটিএফ গঠন করলেন?ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

Tripura: Dr Manik Saha resigns as Chief Minister of state - Tripura: Dr Manik  Saha resigns as Chief Minister of state -


তিনি বলেছেন, এই রাজ্যে বিগত সময় থেকে অপরাধের, দুর্নীতির, সংঘবদ্ধ অপরাধের যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল,সেই কলঙ্কিত সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস, মাফিয়া সংস্কৃতি, তোলাবাজি, নিগো বাণিজ্য, জমি মাফিয়া, কমিশন বাণিজ্য ইত্যাদি ঘিরে সংঘটিত অপরাধ রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন নেশা পাচার,নেশা কারবারিরা সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এগুলোকে শক্ত হাতে মোকাবিলা না করলে, ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহার এই উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নি:সন্দেহে মহৎ।এই নিয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই। বিভিন্ন মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এসটিএফ গঠন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? উত্তর একটাই, ‘না’।সফলতাও অর্জন করতে হবে। আর এখানেই সব প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে রয়েছে।এসটিএফ টিম তো এই রাজ্যের পুলিশ কর্মী দিয়েই গঠন করা হবে।এই জন্যই চ্যালেঞ্জটা বেশি।বর্তমানে প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষের এই রাজ্যে সৎপথে অর্থাৎ বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ সীমিত।এই কথা সকলেই জানে।কল-কারখানাহীন সীমান্তবর্তী এই রাজ্যে একাংশ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বেআইনি জেনেও গাঁজা চাষকে বেছে নিয়েছে।যা আজও অব্যাহত।নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নেশা রাজ্যে আরও জাঁকিয়ে বসেছে।গাঁজা চাষের পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে লাভজনক চাষ আজও মানুষকে কিছু দেওয়া যায়নি।এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা সকলেই জানি,রোগ হলে চিকিৎসা করতে হবে।কিন্তু রোগ হওয়ার আগে সেটাকে প্রতিরোধ করাটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য হওয়া উচিত। অপরাধ দমন নিশ্চয়ই করতে হবে।তার সাথে সাথে সমাজে অপরাধী যাতে তৈরি না হয়,তার পথও খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই অপরাধ ও অপরাধীমুক্ত সমাজ গঠন করার পথ সহজ হবে। সফল হবে এসটিএফ গঠন করার উদ্দেশ্য। নতুবা বৃথা হবে উদ্যোগ। এসটিএফ গঠন করলেই যদি অপরাধ,অপরাধী, দুর্নীতি নির্মূল হয়ে যেত – তাহলে অন্য রাজ্যে অপরাধ বলতে আর কিছু থাকতো না ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.