এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখুন

 এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখুন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

তীব্র গরমে বাইরে প্রখর রোদ একই সঙ্গে দাবদাহ ঘরে থেকেও যেন শান্তি নেই।এয়ার কন্ডিশনার ছাড়া ঘরে টেকা দায়। কিন্তু উচ্চবিত্তরা ঘরে এসি লাগিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। তবে বিপাকে পড়েন নিম্নবিত্তের মানুষেরা।তাদের একমাত্র ফ্যানেই ভরসা।তাই তাদের প্রচণ্ড গরমে একটু শান্তির জন্য হলেও খুঁজতে হয় বিকল্প ব্যবস্থা।জেনে নিন এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখার বেশ কিছু সহজ উপায়।দেওয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার :-মনে রাখবেন, রং যত গাঢ় হয়, তত আলো শোষিত হয় এবং যত হালকা হয়, তত আলো বেশি প্রতিফলিত হয়।ঘরে যত বেশি আলো শোষিত হয়, তত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব হালকা রং ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দিনের বেলা ঘর তাপ ধরে রাখবে না। ফলে আলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ঠান্ডা হতে শুরু করবে।সুতির পর্দা ব্যবহার করুন:-জানালায় ভারী সুতির পর্দা ব্যবহার করুন।এ ধরনের পর্দা ঘরে আলো প্রবেশ করতে বাধা দেয়। ঘর থাকবে ঠান্ডা। জানালার পর্দা হিসেবে খসখস ব্যবহার করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যাবে।বহু পুরোনো সময় থেকে খসখস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।গরম প্রতিরোধ করার জন্য খসখস জলে ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারলে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে।এছাড়া হালকা রঙের বিছানার চাদর ও বালিশের কভার ব্যবহার করুন। এতে করে বিছানাপত্র তাপ ধরে রাখবে না। ঘরও থাকবে তুলনামূলক ঠান্ডা।ঘরে গাছ রাখুন:-শুধু ঘর ঠান্ডা করতেই নয়, ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতেও ঘরে গাছ রাখা একটি কার্যকর উপায়। ঘরের ভেতর যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো আসে না সেখানেও আপনি বিভিন্ন ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে পারবেন। ঘর সংলগ্ন বারান্দা থাকলে ইনডোর, আউটডোর দুই ধরনেরই গাছই লাগাতে পারেন। গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেওয়ার ফলে ঘরের তাপমাত্রা কমবে ফলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। এক্ষেত্রে এয়ার পিউরিফায়ার হিসেবে স্নেক প্লান্ট, পিস লিলি, বোস্টন ফার্ন,পথোস, ব্যাম্বু পাম, স্পাইডার প্লান্ট রাখতে পারেন।
ঘরে কম আসবাবপত্র রাখুন:- ঘরে বেশি আসবাবপত্র থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঘরে গরম ও অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করে। প্রয়োজনীয় অল্প কিছু আসবাব দিয়ে ছিমছাম ভাবে ঘর সাজান যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে। ফলে ঘরের গুমোট ভাব কাটবে এবং ঘর কিছুটা হলেও ঠান্ডা থাকবে।
ঘরের লাইট বন্ধ রাখুন:- আমরা বাড়িতে প্রচুর বৈদ্যুতিক পরিচালিত জিনিস ব্যবহার করি। আর সেইসব বৈদ্যুতিক পরিচালিত জিনিসগুলি ব্যবহার করার ফলে সেগুলি থেকে তাপ নির্গত হয়, তার ফলে ঘরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তবে জিনিসগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় লাইট। যেহেতু লাইট সবসময়ই জ্বালানো থাকে তার ফলে ঘর গরম হয়ে যায় খুব সহজেই।তাই ঘরে আলোর পরিমাণ যত কম থাকে, ঘর তত বেশি ঠান্ডা থাকে।রাতে চেষ্টা করবেন ঘর যতটা সম্ভব কম আলোকিত রাখতে। টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা গেলে ভাল। এতে করে ঘর তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।একজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন:-ঘরের গরম হাওয়া বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন একজস্ট ফ্যান। একজস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে ঘরের গরম হওয়া বেরিয়ে যাবে ফলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। একইসঙ্গে জানলায় ঝুলিয়ে
রাখতে পারেন ভিজে কাপড় বা ভিজে তোয়ালে। তাহলে এই গরমেও ঘরের ভেতর আরামদায়ক অনুভূতি পাবেন। রান্নাঘরের কথা ভুললে চলবে না। এই গরমে রান্না করতে গিয়ে হাঁসফাঁস না করে বরং এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন। এতে রান্নাঘরের গরম বাতাস বাইরে বের হয়ে যাবে। যদি সম্ভব হয়, দিনের তাপমাত্রা বাড়ার আগেই রান্না শেষ করুন।একইভাবে বাথরুমেও এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন, তাতে বাথরুমের
তাপমাত্রাও কমবে।টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বরফ:-
ঘর ঠান্ডা করার অন্যতম কার্যকর উপায় হল বরফ।টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে এক বাটি বরফ বা ফ্রিজের ঠান্ডা জল রাখতে পারেন।এর ফলে বরফের ঠান্ডা বাতাস ফ্যানের সাহায্যে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘর জুড়ে ঠান্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে। বরফ গলে গেলেও ঘরের মধ্যে ঠান্ডা অনুভূতি বজায় থাকে অনেকক্ষণ। রাতে ভাল ঘুমের জন্য ঘুমানোর ঠিক আগে এই কাজটি করতে পারেন। সবথেকে ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য তার আগে ঘরের দরজা জানলাগুলো বন্ধ করে দিন।
দুপুরবেলা জানলা বন্ধ রাখুন:-
দিনের বেলা জানলা দিয়েই
সবেথেকে বেশি পরিমাণ তাপ ঘরে প্রবেশ করে। তাই দিনে সরাসরি সূর্যের তাপ আসে এরকম জানলা বন্ধ রাখুন। পশ্চিমমুখী জানলা থাকলে দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জানলা বন্ধ রাখুন। এতে ঘরে তীব্র রোদের তাপ ঢুকতে পারবে না। আর তার ফলে ঘর থাকবে ঠান্ডা। তাপপ্রবাহ কমে গেলেই ঘরের জানলা খুলে দিন। যাতে ভালভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য ঘরে ভেন্টিলেশন হওয়া খুবই প্রয়োজন।তাই দরজা খোলা রাখুন।ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন:-ঘরের মেঝে যদি ঠান্ডা রাখেন,তবে ঘরও ঠান্ডা রাখতে পারেন আপনি। ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে একটু ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন। প্রয়োজন হলে একবারের পরিবর্তে ঘর মুছতে পারেন বেশ কয়েকবার। মেঝের পাশাপাশি জানলার কাচও জল দিয়ে মুছুন। এতে বেশ কিছু সময় ঘর ঠান্ডা থাকবে।গরমের ধরন বদলে গেছে। বাড়িতে আগে ফ্যানের বাতাসেই দিব্যি গোটা গ্রীষ্মটা কাটিয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু এখন তাপমাত্রা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। তাই এখন এসি ছাড়া বাড়িতে থাকা মুসকিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসি কেনার ক্ষমতা যদি না থাকে তবে অবশ্যই উপরের এইসব পদ্ধতিগুলি একবার প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।এই পদ্ধতিগুলি মাধ্যমে সহজে গরমে ঘর ঠান্ডা রাখতে পারবেন,তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ভাল থাকবে আর আপনার বিদ্যুৎ খরচাও কমবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.