মণিপুর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্বতী এক ছোট্ট প্রত্যন্ত রাজ্য। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বারবার বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত একাধিক ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে তার নাম। কিন্তু এবার মণিপুরে যা ঘটে গেল এর কোন সীমা পরিসীমা নেই। এতটা পাশবিক, এতটা ঘৃণ্য। গোটা দেশের ১৪০ কোটি জনতার মাথা হেঁট হয়ে যায় যে ঘটনায়, তা কোনও শব্দ দিয়ে উল্লেখ করা যাবে না। গোটা দেশ গত দুই দিন ধরে যে ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড়, তাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলেও চাপা দেওয়া যাবে না। গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে গোষ্ঠী হিংসায় জ্বলেপুড়ে খাক্ হয়ে যাচ্ছে দেশের এক প্রদেশ। সেই রাজ্যেই একদল উন্মত্ত পিশাচ দুই নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় সম্পূর্ণ নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দিবালোকে। সেই সাথে চলেছে নির্যাতন আর আদিম হিংস্র উল্লাস। শুধু দুই মা-বোনকে নগ্ন করে রাস্তা হাঁটানো নয়, তাদের উপর অভিযোগ উঠেছে গণধর্ষণেরও। হাড় হিম করা এই ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে দেশ বিদেশের সামাজিক মাধ্যমে। যৌন লাঞ্ছনায় কাতর দু’জন নারী অসহায় কান্নায় অভিযুক্তদের থেকে রেহাই পেতে বারবার আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু পিশাচের উল্লাসে তাদের আর্তনাদ চাপা পড়ে যাচ্ছে। ভাবতে পারা যায়, এ কোন্ সমাজে আমরা আছি? এ দৃশ্য দেখার মতো নয়। এ দৃশ্য কল্পনা করতে গেলেও কেঁপে উঠবে আমার-আপনার অন্তরাত্মা। অথচ একদল মানুষ এই পৈশাচিকতার সাক্ষী রাখলো আমাদের সভ্যতা, আমাদের সমাজের সামনে। চতুষ্পদী পশুরাও যে কাজ করতে দুবার ভাববে, দ্বিপদী কিছু পিশাচ সেই নৃশংসতাই ঘটিয়ে দিল আমাদের ভারতে। উন্নয়নশীল ভারত যখন দ্রুততার সাথে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের সাথে একাসনে বসে নিজেকে উন্নত ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর আত্মনির্ভর ভারত চন্দ্রজয়ের জন্য যখন চন্দ্রযান- ৩-এর সাফল্য নিয়ে আশায় বুক বেঁধে আগামীর প্রহর গুনছে, তখনই নারীত্বের এমন বীভৎস এবং কুৎসিত অবমাননার ঘটনা বিশ্ব দরবারে ভারতের অবস্থানকে কোন্ জায়গায় টেনে নিয়ে যাবে তা নিশ্চয় ভাববার বিষয়। এ শুধু নারীত্বের অবমাননাই নয় । মানবিকতার বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে যুদ্ধ। কারণ মণিপুরে হাড়হিম করা যে ভিডিও ঘিরে উত্তাল দেশ, সেই ঘটনাটিও কিন্তু কাল কিংবা পরশুর নয়। ৭৭দিন আগেকার ঘটনা। ৩রা মে যেদিন থেকে মণিপুরে গোষ্ঠী হিংসা শুরু হলো, তার পরদিনই ৪ঠা মে এই বীভৎস নারকীয় ঘটনাটি অথচ ঘটনার পরপরই লাঞ্ছিত মহিলাদের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। গোটা সমাজ ও দেশবাসীর কাছ এই সত্যটা প্রকাশ্যে এলো এতদিন পর। গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা মণিপুরে যখনই এই নিষেধাজ্ঞা উঠলো, তখনই ভয়ঙ্কর এই ঘটনা সামনে এল। সঙ্গত কারণেই এখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ডাবল ইঞ্জিনের পুলিশ কেন অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও এই নৃশংস বর্বরতাকে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছে গত ৭৭ দিন। ইতিপূর্বে একাধিকবার মণিপুরে সশস্ত্র দুষ্কৃতীর হাতে থানা ও আধাসেনার অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুটের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু একটি ক্ষেত্রেও কেন ব্যবস্থা হয়নি। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে মণিপুরে হিংসার এই তাণ্ডবলীলায় বারবার সরকারের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীহিংসায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? ভারতের এক অঙ্গরাজ্য ৭৮ দিন ধরে জাতি হিংসায় অগণিত মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ চললেও কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী মৌনব্রত পালন করে গেছেন? মণিপুরে দীর্ঘ আড়াই মাসের হিংসাপর্বে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-এর ভূমিকা খোদ দলেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে। গোষ্ঠী হিংসার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং তার সরকারের আচরণ পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট-এই অভিযোগ শুধু কুকি বা খ্রিস্টান জনজাতি গোষ্ঠীগুলিরই নয়। এই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর স্বজাতি মণিপুরি মেইতেইয়েরও। জনজাতিদের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকারের অবহেলার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দলের রাজনৈতিক লাভালাভের অঙ্ক কষার কারণেই পরিস্থিতি যে আজ বাস্তবিকভাবেই অন্য খাতে মোড় নিয়েছে সেটা দেরিতে হলেও কেন্দ্র এখন বুঝতে পারলেও তা মানতে চাইছেন না। মণিপুর কাণ্ড নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে সাংবিধানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে যে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে তা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যে ক্ষত এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়ে গেছে, সেটা শুকোতে গেলে সরকার ও প্রশাসনকে তার আগের প্রতিটি কাজের ও ব্যর্থতার সংশোধন করতে হবে। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে রাজধর্ম পালন করতে হবে। তবে এটা ঘটনা, সরকার কিংবা শাসক তখনই রাজধর্ম পালনে সক্ষম হবেন, যখন শাসক সৎ এবং নিষ্ঠাবান হবেন। সেই সাথে অবশ্যই তাকে জ্ঞানী হতে হবে। শুধু লাভালাভের অঙ্ক দিয়ে কোন শাসকই রাজধর্ম পালন করতে পারে না। আর রাজধর্ম পালন করতে না পারা শাসকের জন্য ইতিহাসের নিয়ম মেনেই উপযুক্ত পরিণতিই অপেক্ষা করে থাকে
অনলাইন প্রতিনিধি :-হাওড়া থেকে পুরী যাচ্ছিলেন ঢাকুরিয়ার হিমাদ্রি ভৌমিক (বয়স ৫৭)। পথেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রবিবার রাত থেকে কুড়িবার কেঁপে উঠে পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচি। রিখটার স্কেলে কম্পনের…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বন্যায় ভয়াবহ অবস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতে। টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত অসম। সূত্রে খবর, ভয়াবহ…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পদপিষ্টে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনাতে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের দিকে তোপ দেগে দিয়েছেন বিজেপি।…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার বেঙ্গালুরুতে আরসিবি টিমের বিজয়োৎসব চলছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে। সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আরসিবি…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের উপজাতি জনসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভারত সরকার। দেশের সরকারের নির্দেশিত…