এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আজ লোকসভা নির্বাচনের মহাযজ্ঞের তৃতীয় পর্ব।এই পর্ব গত হলে ৫৪৩ আসনের মধ্যে লোকসভার প্রায় অর্ধেক আসনে ভোট সম্পন্ন হবে। গণতন্ত্র নিয়ে গর্ব করে আমাদের দেশ।প্রয়োজন বুঝে রাজনৈতিক নেতারা ভারতকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলে প্রচার করেন। কিন্তু উত্তরে কাশ্মীরের ইন্দিরা কল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী, পূর্বে অরুণাচলের কিবিথু থেকে পশ্চিমে গুজরাটের গুহরমোতি পাহাড় থেকে সমুদ্র, অতি বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল থেকে ধু ধু মরুভূমি,গহীন বনাঞ্চল থেকে অত্যাধুনিক শহর,সব মিলিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রটি আদতে কাদের?ভারত নামক দেশটিতে কাদের অধিকার? শত বিরোধ,সহস্র মনোমালিন্য সত্ত্বেও দীর্ঘ বছর ধরে ভারত জানত,বৈচিত্রের মধ্যে একতাই এই দেশের প্রধানতম পরিচয়।গত কয়েক বছর দেশের নানা প্রান্তের নানা ঘটনায় অনেকের মনেই এমন সংশয় তৈরি হয়েছে, আমরা কি দেশের প্রধানতম পরিচয়টি সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছি? নির্বাচন হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি, দলটির বিশ্বাসযোগ্যতা, প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বস্ততা, দলের নেতৃত্বগুণ, সরকারে থাকলে কর্মযজ্ঞের খতিয়ান, বিরোধী থাকলে তদর্থে ভূমিকা ইত্যাদি মাপকাঠিতে। কিন্তু কোনও দল রাজনীতি, সমাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয় ব্যতিরেকে ঈশ্বর অথবা আল্লার নামে ভোট চাইলে জনতার বোঝা দরকার,এ কাজ একজন ভিক্ষাজীবীকে শোভা পায়,কোনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে নয়।
লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত আগে সিএসডিএস-লোকমত-এর একটি সমীক্ষা এ ব্যাপারে অবশ্য আমাদের আশ্বস্ত করেছে।সমীক্ষা জানিয়েছে, এখনও দেশের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের নয়, ভারতের উপরে সব ধর্মাবলম্বী মানুষের সমান অধিকার।শুধু সংখ্যালঘু মানুষরাই নন, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতি দশজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে আটজন বিশ্বাস করেন, শুধু হিন্দুদের নয়, এ দেশ সব ধর্মাবলম্বীর।মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন যে, ভারত শুধুই হিন্দুদের।এত মানুষ এখনও ভারত নামক ধারণাটির প্রতি যে বিশ্বস্ত, সমীক্ষায় উঠে আসা কথাটি বারংবার নিজেদের এবং চতুষ্পার্শকেও স্মরণ করিয়ে দেওয়া মনে হয় আমাদের সকলের কর্তব্য।লক্ষণীয় যে, সিএসডিএস- লোকমত কৃত এই সমীক্ষাতেই দেখা গেছে, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে বর্তমান সরকারের অন্যতম সেরা কৃতিত্ব বলে বিবেচনা করেন।একই সঙ্গে বহুত্ববাদী ভারত ও রামমন্দিরের পক্ষে রায় দেওয়াকে আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে।তবে তার সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি হলো, মন্দিরপন্থী জনতারও একটি বড় অংশ মন্দির এবং দেশকে এক করে দেখতে রাজি নন।সমীক্ষা বলছে, মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দু ধনী শ্রেণীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষরাই প্রবল হিন্দুত্বের সমর্থক।অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষিত, তরুণ এবং দরিদ্রতর মানুষরা অনেক বেশি বহুত্ববাদে বিশ্বাসী।এতে অবাক হওয়ার উপাদান বিশেষ নেই, কারণ গরিব মানুষ মাত্রই জানেন যে, ধর্মের বদলে পেটে ভাত থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যার একটি অংশকে বাদ রাখলে বাকি অংশের উন্নয়নের গতি বাড়ে না, বরং কমে। যেমন দেহের সব রক্ত মুখে সঞ্চারিত হলে তা সুস্বাস্থ্যের পরিচায়ক নয়। শিক্ষা যে বোধ তৈরি করে কেতাবি ভঙ্গিতে, জীবন সে কথাটিই শিখিয়ে দেয় হাতেকলমে।
এই পর্যন্ত যদি হয় শাসকদলের প্রতি সতর্কবার্তা বা সুপারিশ, তবে সমীক্ষার দ্বিতীয় তাৎপর্যটি বিরোধীদের প্রতি। ভারতের প্রধানতম পরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখার প্রশ্নে তাদেরও কি সত্যিই আন্তরিকতা আছে?তাদের দেখে মনে হচ্ছে, তারা হয় চিরস্থায়ী পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে কিংবা হিন্দুত্বেরই ভিন্নতর পথে হাঁটতে চাইছে।অথবা, তৃতীয় কোনও ধর্মের ধ্বজা উড়িয়ে তৈরি করতে চাইছে অন্য কোনও ধর্মীয় রাজনৈতিক ভাষ্য।সেই দলগুলি এই সমীক্ষায় উঠে আসা মানুষের রায়ের কথাগুলি মনে রাখতে পারে।ধর্মীয় উগ্রতা, অসহিষ্ণুতা যে এখনও এই ভারতের অধিকাংশ মানুষের কাম্য নয়, একথা মনে রাখলে হয়তো বোঝা সহজ হবে যে, প্রবলপ্রতাপ রাজনৈতিক দলটিকে হারানোর জন্য ধর্মীয় ভাষ্য নয়,প্রয়োজন উন্নয়নের বিকল্প রূপরেখা। ইতিহাস সাক্ষী, উন্নয়ন যত অধরা হয়, ততই বাড়তে থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যের দাবি।ভারত নামক ধারণাটিকে অক্ষত রাখতে হলে বিরোধী রাজনীতিকে দেশের নাড়ির স্পন্দন বুঝতে হবে। হাতে সময় বলতে নির্বাচনের বাকি চারটি পর্ব
১৩, ২০, ২৫ মে এবং ১ জুন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

12 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

12 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

12 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

13 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

13 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

14 hours ago