ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি গাজন নৃত্য!!

 ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি গাজন নৃত্য!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলা বর্ষে শেষ মাস হচ্ছে চৈত্র মাস। আর এই চৈত্রেই সারা মাস ব্যপী অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি শিব পার্বতীর গীত, তথা গাজন নৃত্য। স্থানীয় ভাষায় এই লোকসংস্কৃতিকে “ঢাকির নাচ” ও বলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ঐতিহ্যবাহী পৌরাণিক লোকসংস্কৃতি অবলুপ্তি হতে হতেও এখনো খানিকটা বেঁচে আছে। বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামীন শিল্পীরাই। এরাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে আজও বেশ জনপ্রিয় গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি ঢাকির নাচ। আজও রাত জেগে ঢাকির নাচ তথা গাজন নৃত্য উপভোগ করতে জমজমাট ভীর লক্ষ্য করা যায়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম এই লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে একেবারেই আগ্রহহীন। এরা এখন মুঠো ফোনে দিনরাত মুখগুজে থাকতে বড্ড বেশি আগ্রহী। এরা জানেই না, নৌকা বিলাশ কি? নিমাই সন্যাস কিংবা রাধা কৃষ্ণের যুগল মিলনই বা কি? রামায়ন, মহাভারত নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। তাদের কাছে গাজন নৃত্য,ঢাকির নাচ অচেনা ও অবাক বিস্ময়কর বিষয়। তবু্ও বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চলতেই থাকে। চৈত্র মাস সুচনা হতেই অমরপুর শহর ও শহর সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে শিব পার্বতীর গাজন নৃত্য তথা ঢাকির নাচ শুরু হয়ে গেছে।চৈত্র মাস আর গাজন শিল্প তথা ঢাকির নাচ একে অপরের পরিপূরক। বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে মোবাইল ইন্টারনেটের রমরমার সাথে পাল্লা দিয়ে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই বাঙালির অন্যতম পার্বন শিব ঠাকুরের গাজন নৃত্য চলছে প্রত্যেক দিন সন্ধারাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত। গ্রামের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে,এক গ্ৰাম থেকে অন্য গ্ৰামে,শহরের বিভিন্ন পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে রাতভর ঘুরেঘুরে চলছে পালা কীর্তনের সাথে ঢাকির নাচ।


হর পার্বতীর নৃত্য। মা কালীর অসুর নিধন সহ পৌরাণিক কাহিনী ভিত্তিক গীতিনাট্য। বিনিময়ে বছরের এই কটাদিন শিল্পীদের কিছু রোজগারপাতিও হয় বৈকি। তবে প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য । আগেকার দিনে হ্যাজাক লাইটে কিংবা হ্যারিকেনের আলোছায়াতে ঢাকির নাচ হলেও বর্তমানে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চার্জ লাইটে কিংবা বৈদ্যুতিক আলোতেই ঢাকির নাচ পরিবেশিত হচ্ছে। তখনকার সময়ে হরগৌরী কিংবা অন্যান্য মহিলা চরিত্র গুলিতে পুরুষ শিল্পীরাই নারীর ভূমিকা সাবলীল ভাবে পালন করতেন। পুরষ শিল্পীই পার্বতীর ভুমিকা অনবদ্য ভাবেই অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতেন। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে কিছুকিছু ক্ষেত্রে পেশাদার শিল্পীরাই গাজন নৃত্যে অংশগ্রহণ করছেন। মহিলা শিল্পীরাই পার্বতীর, কালীমার কিংবা লক্ষী সরস্বতী, রাধা দেবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। পুরো চৈত্র মাস ব্যাপী শিল্পীদের গাজন নৃত্য তথা ঢাকির নাচ চলার পর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে দেবাদিদেব মহাদেব তথা শিব ঠাকুরের আরাধনা ও চরক পূজোর মধ্য দিয়েই গাজন নৃত্য তথা ঢাকির নাচের আনুষ্ঠানিক সমাপন হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.