ওপারে ভোটের দামামা!!

 ওপারে ভোটের দামামা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা হয়ে গেল।আগামী বছর ৭ জানুয়ারী ওই দেশের জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের জন্য একদিনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এই নির্বাচনি নির্ঘন্ট ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্ঘন্ট অনুযায়ী চলতি মাসের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আর মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোট কথায়, পুরোদস্তুর ভোটের দামামা বেজে গেছে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে।কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় আরক্ষা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। কারণ গত বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব বাংলাদেশে টানা অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে চলেছে। তাদের প্রধান দাবিই হচ্ছে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নজরদারির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের একাদশতম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শেষের আগে ৩ মাস অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। সেদিকে থেকে চলতি জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারী। এর অর্থ হলো ৯০দিনের মধ্যে বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক ছিল। সেই নিয়ম ও সময়সীমা মেনেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বুধবার ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছে। এ বছর বাংলাদেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ অর্থাৎ প্রায় ১২ কোটি। নির্বাচন হবে কাগজের ব্যালটেই। একাদশ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দল ২৫৭ আসনে জয়ী হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সহযোগী দল হুসেন মহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ২৬ টি আসনে জয় পায়।সেবার নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল ভোট গণনার শেষ পর্বে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়।যদিও নির্বাচনে গণনায় খালেদা জিয়ার বিএনপি ৭ টি আসনে জয়ী হয়েছিল।গত কয়েকমাস ধরেই নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নৃেত্বেত্বে ক্ষমতাসীন সরকারকে ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ভোট করার দাবি গত কয়েকমাস ধরেই জানিয়ে চলেছে ওই দেশের বিরোধী দলগুলো।কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্ভাবনার কথা একাধিকবার নস্যাৎ করেছেন বিগত দিনগুলোতে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ তথা উৎখাতের দাবিতে গত কয়েকদিন বন্ধ, অবরোধ কর্মসূচির সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ।এই সমস্ত কর্মসূচিকে ঘিরে লাগামহীন বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে।এই রকম এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হলো বাংলাদেশে। আসলে বাংলাদেশে যে ভোট গ্রহণের পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তা যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয় সেটা চাইছেন ওই দেশের প্রতিটি নাগরিক সহ গণতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ।কিন্তু সেটা বাস্তবে রূপায়িত করতে গেলে দরকার সবকটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক সহযোগিতা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ থাকাটা অন্যায় নয়। কিন্তু দেশের স্বার্থে সেই মতভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে সবাইকে এক ছাতার নীচে
আসতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিরোধ ও বৈরিতা চলছে সেই মতভেদকে ঘিরে সংঘাত নির্বাচনের উপরও আছড়ে পড়তে পারে।ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ইসলামিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে। পুলিশ আশঙ্কা করছে এই কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপি এবং জামাত ই ইসলামও অংশ নিতে পারে। যদিওআমেরিকা বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে বেশ উৎসাহ দেখিয়ে চলেছে।তাই শর্তহীন আলোচনায় বসতে বাংলাদেশের প্রধান ৩ দলকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছিলেন আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।কিন্তু নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আলোচনার সেই অবকাশটুকুও এখন নেই।এই অবস্থায় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভয়মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থেই তার লক্ষ্য পূরণ করুক—এটাই
থাকবে প্রতিটি গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের প্রত্যাশা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.