ওষুধ নেই, সঙ্কটে কেন্দ্রীয় কারাগারের অসুস্থ কয়েদিরা!

 ওষুধ নেই, সঙ্কটে কেন্দ্রীয় কারাগারের অসুস্থ কয়েদিরা!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একেবারে বিনা ওষুধে মরতে বসেছেন বিশালগড় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের অসুস্থ কয়েদিরা। এমনই গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে অসুস্থ কয়েদিদের পরিবারের তরফ থেকে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশ্বস্ত সূত্রে খবর বরাতপ্রাপ্ত ওষুধ সরবরাহকারী এজেন্সি (দোকান) প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে গত মাসখানেক ধরে কেন্দ্রীয় কারাগারে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে। অসুস্থ কয়েদিরা জীবনদায়ী ওষুধ পাচ্ছেন না। ফলে যেকোনও সময়ই অসুস্থ কয়েদিদের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ সঙ্কটাপন্ন অসুস্থ কয়েদিদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণের ব্যবস্থা করে থাকে। এক্ষেত্রে জরুরি কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী সঙ্কটাপন্ন অসুস্থ কয়েদিদের এজিএমসি অ্যাণ্ড জিবিপি, আইজিএম, টিএমসি এবং আইএলএসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রদেয় ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখিত ওষুধের কোনও সরবরাহ নেই। অথচ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস অন্তর কারা দপ্তরকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে।রাজ্য এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কারাগারে বন্দি অসুস্থ কয়েদিদের বিনামূল্যে যাবতীয় চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক।কারা কর্তৃপক্ষই এই কাজ করবে।অথচ বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা যাচ্ছে ঠিক উল্টো চিত্র। কারাগারের বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, বর্তমানে বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শ্রীমন্ত ত্রিপুরা, বাবুল দাস, সত্যরঞ্জন দাস সহ আরও একাধিক অসুস্থ কয়েদি রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমন্ত ত্রিপুরা বাইপাস হার্ট সার্জারির রোগী। বাবুল দাস লিভার ক্যান্সার সহ হৃদরোগ এবং উচ্চ মধুমেহ রোগে আক্রান্ত। সত্যরঞ্জন দাসও উচ্চ মধুমেহ এবং কিডনির রোগে আক্রান্ত। প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ইনসুলিন সহ একগুচ্ছ জীবনদায়ী ওষুধের উপর প্রাণ নির্ভরশীল। কিন্তু তারা ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধ পাচ্ছেন না। এগুলি শুধু উদাহরণমাত্র নেশাদ্রব্য সেবন মামলায় বহু কয়েদি কিংবা বিচারাধীন আসামী বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এদেরও নেশাদ্রব্য সেবনের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত করতে একাধিক ওষুধের প্রয়োজন। অথচ ওষুধ নেই!এই পরিস্থিতি এক বা দুই দিনের নয় ৷দীর্ঘ সময় ধরে এই পরিস্থিতি চলছে। অথচ কর্তৃপক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।এক্ষেত্রে কর্তব্যে চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে বিশালগড় কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট তপন শীলের বিরুদ্ধে। মূলত চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী যাবতীয় ওষুধ ক্রয়ের দায়িত্ব হচ্ছে ফার্মাসিস্ট তপন শীলের। কিন্তু অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট রোগীরা ওষুধের জন্য দাবি জানালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট রোগীদের ওষুধের বদলে প্রাণায়াম ও চিরতার জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন!আরও বিস্ময়ের ঘটনা হলো, এই ফার্মাসিস্ট তপন শীলের গত বছর নভেম্বর মাসেই ভিআরএসে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দপ্তর নাকি তাতে নঞ্জুরি দেয়নি। ফলে কারাগারে কোনও অঘটন ঘটে গেলে তার কোনও দায়ও নেই। এসব তিনি বলেও বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে সরকারী আবাসনে থাকেন না। শঙ্কর চৌমুহনীতে ভাড়াবাড়িতে থাকেন। এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার পর্যায়ের কোনও অফিসারও নেই। কারা দপ্তরে এবং কারাগারগুলিতে দুর্নীতি ও অচলাবস্থা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে বহুবার তথ্যমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত প্রায় দেড় বছর ধরে কারা দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন রামপ্রসাদ পাল। এবার তাকে মন্ত্রিসভা থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। কারা দপ্তরের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শান্তনা চাকমাকে। নতুন মন্ত্রীর হাতে কারা দপ্তরের কারা দপ্তরের রাহুমুক্তি ঘটে কিনা, এখন সেটাই দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.