ওয়াকফ বিল!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দীর্ঘ আলোচনা শেষে অবশেষে পাস হয়ে গেল বহুচর্চিত এবং প্রতীক্ষিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। সংসদের দুই কক্ষ অর্থাৎ লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হলো ওয়াকফ সংশোধনী বিল।এই বিল পাস হওয়ার আগে গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার পরপর দু’দিন মধ্যরাত পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কোনও বিল পাস হওয়ার আগে এতটা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়নি। এই বিল পাস হওয়াকে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত বলে আখ্যায়িত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর মতে এই বিল প্রান্তিক ও গরিব সংখ্যালঘু মুসলিমদের স্বার্থকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রান্তিক ও গরিব সংখ্যালঘু মুসলিম জনগণের জমি আরও শক্তিশালী হবে। সেই সাথে ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা আসবে বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দুই দিনের বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কারণে বর্তমানে থাইল্যান্ডে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘দুই কক্ষে বিল পাস হওয়া এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এতে আর্থসামাজিক ন্যায় বিচার এবং স্বচ্ছতার পথ খুলে গেল। যারা সমাজের প্রান্তিক, যারা সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হন, তাদের সাহায্য করবে এই বিল’। মোদি সরকার ‘তিন তালাক’কে অবৈধ বলে বিল এনেছিল ২০১৯ সালে।এই বিল নিয়েও বহু আলোচনা হয়েছিল। এখন ওয়াকফ সংশোধনী বিল মোদি সরকারের দ্বিতীয় বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুধু তাই নয়, ‘তিন তালাক’ এবং ‘ওয়াকফ সংশোধনী’ এই দুই বিল সংসদের উভয় কক্ষে পাস করিয়ে নেওয়াটাও যে মোদি সরকারের বড় সাফল্য, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক পণ্ডিতরা।উল্লেখ্য, বিল পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি তার এক্স হ্যান্ডলে যে প্রতিক্রিয়া এবং বক্তব্য তুলে ধরেছেন, গত দুই দিন সংসদের উভয় কক্ষে (লোকসভা ও রাজ্যসভা) বিজেপি সাংসদরা আলোচনা কালে সেই কথাগুলিই আরও বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু থেকে শুরু করে বিজেপির সাংসদরা এমনকী এনডিএ-এর শরিক দলের সাংসদরাও একই সুরে কথা বলেছেন। প্রায় প্রত্যেকেই বলেছেন, গরিব মুসলিমদের সুবিধা দেবে এই বিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেছেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ওয়াকফ সিস্টেমে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। যার ফল ভুগতে হয়েছে দরিদ্র, মহিলা এবং পাসওয়ান্দা মুসলিমদের। কেন ওয়াকফ বিলে সংশোধনী প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল? গত দুই দিন আলোচনাকালে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওয়াকফ সংশোধনী বিষয়ে বিরোধীরা অসত্য তথ্য ছড়াচ্ছে। এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়কেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে কোনও ধার্মিক হস্তক্ষেপ সরকার করবে না। অমুসলিমদের থাকা নিয়েও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখন এই বিল পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হলেই সেটি আইন হিসাবে সারা দেশে কার্যকর করা হবে। যদিও এই বিল কার্যকর হলে দেশজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে একাধিক মুসলিম সংগঠন।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াকফ আসলে কী যা নিয়ে এত আলোড়ন চলছে? এতেকরে সহজ করে বললে, ওয়াকফ হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যে সম্পত্তি ধর্মপ্রচার এবং সমাজের উন্নতিকল্পে দান করেন- সেটাকেই ওয়াকফ বলে। এই ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না বা ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা যায় না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ওয়াকফ আসলে ঈশ্বরের (আল্লার) সম্পত্তি আর ওয়াকফ বোর্ড হচ্ছে ওয়াকফ সম্পত্তি আর ওয়াকফ বোর্ড হচ্ছে ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করার বোর্ড বা কমিটি। এই বোর্ডের মূল কাজ হচ্ছে ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা। এই মুহূর্তে সারা দেশে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে ৮.৭ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তির রয়েছে। জমির পরিমাণ ৯ লক্ষ ৪০ হাজার একর। ভারতীয় রেল ও সেনার পর দেশে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডেরই।
কেন বিলের বিরোধিতা? সংখ্যালঘুদের একাংশের ধারণা, এই বিল পাস হয়ে গেলে ইসলামিক অর্থাৎ ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তগত করবে সরকার। বিরোধীদের যুক্তি, এই সংশোধনী বিল ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সত্তায় আঘাত। আগের ওয়াকফ বিলে কী রয়েছে সেটা আগে জানা দরকার। আগে বিলের ৪০ নম্বর ধারার আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের দখল করা কোনও জমি বা সম্পত্তিতে কোনরকম সরকারী পর্যালোচনা বা রিভিউ করা যায় না। পর্যালোচনা ছাড়াই ওয়াকফ বোর্ড জমি দখল করতে পারে। কোনও সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানা এবং ওয়াকফ বোর্ডের আইনি বিবাদ চললেও, তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না সরকার। সংশোধনী বিলে সরকার মূলত এই আইনেই ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার খর্ব করতে চাইছে। বিতর্কিত কোনও সম্পত্তির মালিকানা আদতে কার তা খতিয়ে দেখার আইনি এক্তিয়ার এখন সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। কোনও জমি বা সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের কিনা- সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমমর্যাদার কোনও সরকারী আধিকারিকের হাতে। পুরনো আইন অনুযায়ী কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবেই ঘোষণা করা হলে, চিরদিনের জন্য সেটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে থেকে যেত বা বিবেচিত হতো। নতুন বিলে সেটাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। সবশেষে একটাই কথা বলার। বিল তো পাস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরও হয়ে যাবে। এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সারা দেশে কার্যকর হবে তো?সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নিউ ব্রিটেন আইল্যান্ড!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে কাঁপল পাপুয়া নিউগিনির উপকূলের নিউ ব্রিটেন আইল্যান্ড। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা…

7 hours ago

৫৪৫ টাকায় অফিসের শৌচালয় ভাড়া তরুণীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- পড়াশোনা করে অল্প বয়সে চাকরি পেয়েছেন বটে, কিন্তু নতুন চাকরির টাকায় চড়া…

10 hours ago

জমি কেলেঙ্কারি, মুখ্যমন্ত্রীকে সময়সীমা দিলো কংগ্রেস!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- জমি কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুর চওড়া করলো প্রদেশ কংগ্রেস। বিরোধী দল কেলেঙ্কারিতে…

10 hours ago

কলেজ ছাত্রীকে অ্যাসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও মারধর, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- ধর্মনগর ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রীকে মারধর, শ্লীলতাহানি সহ মুখে অ্যাসিড মারার হুমকি দেয়…

10 hours ago

জাতি-জনজাতির কৃষ্টি রক্ষায় কাজ করছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বর্তমান সরকার হল মানুষের সরকার। এমনই দাবি এ মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার। শুক্রবার…

10 hours ago

নেপালে পর পর দুটি ভূমিকম্প!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শুক্রবার সন্ধ্যায় পর পর দুটি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নেপাল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা…

24 hours ago