কংগ্রেসের আপাত স্বস্তি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এক অদ্ভুত জটিলতা গ্রাস করেছে রাজস্থান কংগ্রেস রাজনীতিতে।২০১৮ সালে রাজস্থানে কংগ্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উভয়ের মধ্যে শুরু হয় আদায় কাঁচকলার সম্পর্ক।মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে পূর্বতন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের বিরোধের কথা কারও অজানা নয়। বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজস্থানে এই দলীয় কোন্দল মিটিয়ে উভয়ে কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়াইয়ে নামবেন এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই বেঁকে বসেছেন পাইলট।মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে তিনি কোনওভাবেই গেহলটের সঙ্গে পুরনো বিবাদ মেটাতে নারাজ সেটা দলীয় নেতৃত্বকে খোলাখুলি বলেই প্রকাশ্যে আন্দোলনে নেমেছেন।২০২০ সালে পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নেয়।যদিও রাহুল গান্ধী তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু কখনোই রাজস্থানে পাইলট- গেহলট বিবাদের যবনিকা পড়েনি। সম্প্রতি কর্ণাটক জয়ের পর উভয়ের বিবাদ মেটাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব।কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল, লোকসভা ভোটের আগে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশ সহ যে ৪ রাজ্যে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন হবে তাতে বিজেপিকে ৪-০ গোলে হারাতে না পারলে ২৪-এ লোকসভা দখলের স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে।কারণ শচীন পাইলট যদি বেপরোয়া হয়ে রাজস্থানে ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে দেন,তাহলে রাজস্থানেই শুধু কংগ্রেসের জন্য জোর ঝটকা লাগবে না,লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের এই ভাঙন কংগ্রেস সহ সম্ভাব্য বিরোধী জোটের জন্য বুমেরাং হতে পারে।শুধু তাই নয়, কর্ণাটক জয়ের মধ্য দিয়ে -কংগ্রেসের হাত ধরে বিরোধীরা যে অক্সিজেন পেয়েছিল, সেটা এক লহমায় শচীনের সিদ্ধান্তে চুপসে যেতে পারে। তাই কংগ্রেসের কাছে প্রথম ও অন্যতম লক্ষ্য ছিল শচীনকে কংগ্রেসে ধরে রাখা। দিল্লীতে সেই লক্ষ্য নিয়ে গত মাসের শেষদিকে খাড়গে এবং রাহুল গান্ধী বিবাদমান দুই নেতাকে মুখোমুখি বসিয়ে ফটোসেশনের মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা দিলেও, আচমকাই শচীন পাইলট পিতা রাজেশ পাইলটের মৃত্যু বার্ষিকীতে রাজস্থানের দৌসায় ভূমিপুত্র পিতার স্মরণসভায় কংগ্রেসের জন্য যে দুশ্চিন্তার কাঁটা গত ক’দিন ধরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তাতে কংগ্রেসের নিশ্চিতভাবেই এই পরিস্থিতিতে হাড়হিম হয়ে যাওয়ারই কথা।বিশেষ করে পিতার মৃত্যুদিনে সাতসকালেই শচীন পাইলট যে ট্যুইট করেছিলেন-“আমার বাবা জীবনে কখনো আপস করেননি”- এই বার্তা কংগ্রেসের ঘুম উবে যাওয়ার জন্য যথেষ্টই ছিলো। কিন্তু শেষমেষ কংগ্রেসের রাজনৈতিক আকাশে জল্পনার যে কালো মেঘ জমা হয়েছিল তা মুহূর্তেই উড়িয়ে দিয়ে পৃথক দল গঠনের সম্ভাবনা মোটামুটি স্থগিত রাখার ইঙ্গিত দিয়ে শচীন যে বার্তা দিলেন তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।সরকার পরিচালনায় কিছু ঘাটতি ও গাফিলতির কথা বললেন।ক্ষোভের কথা বললেন, পাশাপাশি অন্যকে দোষারোপ না করে এই ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি অবিলম্বে শুধরে নেওয়া যে উচিত সেই বার্তাও দিলেন। রাজস্থানে ভোটের ঠিক ছয় মাস আগে শচীন পাইলটের এই অবস্থান কংগ্রেস নেতৃত্বের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।সাম্প্রতিক রাজস্থান রাজনীতির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, বিজেপিতে যদি নেতৃত্বের সঙ্কট তীব্র হয়ে থাকে, তবে কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল দলীয় নেতৃত্বের মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ।বিজেপির সামনে এই মুহূর্তে রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার কোনও বিকল্প নেই। অথচ এই বসুন্ধরাকে বিভিন্ন কারণেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের না পসন্দ।ফলে বসুন্ধরা বনাম বিজেপি মোদি-শাহ জুটির দ্বৈরথ মোটামুটি সবারই জানা।আর এই কারণেই রাজস্থানে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট যথেষ্ট তীব্র। একদিকে রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সরকারের আমলে সংঘটিত হওয়া একাধিক দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে গেহলট সরকার নীরব।অন্তত এমনটাই অভিযোগ বিক্ষুব্ধ শচীন পাইলটের শিবিরের।যেমন রাজস্থানে সরকারী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ‘পূর্বতন সিন্ধিয়া সরকারের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান এই দুর্নীতির তদন্তের অস্ত্রেই ইতিপূর্বে ২২ বিধায়ককে দিয়ে বসুন্ধরা রাজে গেহলট সরকারকে ক্ষমতায় অক্সিজেন জুগিয়ে গেছেন।আর শচীন পাইলট দুর্নীতি তদন্তের এই ইস্যুকে প্রধান হাতিয়ার করে ‘গেহলটের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগে চলেছেন।কিন্তু প্রশ্ন হলো, নতুন দল গড়ার জল্পনায় জল ঢাললেও, কংগ্রেসের তরুণ নেতা শচীন পাইলটের এই অবস্থান আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত কতটা স্থায়িত্ব পাবে সেই আশঙ্কা কিন্তু এখনই পুরোপুরি নির্মূল হচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শচীনের এই সিদ্ধান্তে আপাতত কংগ্রেসের জন্য স্বস্তি এনে দিলেও, ভবিষ্যতে দল ছাড়ার প্রশ্নে বিজেপিতে তার যোগদানের যে কোনও সম্ভাবনা নেই সেটাও মোটামুটি পরিষ্কার। তবে ভোটের আগে শচীনের আপসহীন কোনও সিদ্ধান্ত যদি নিতে দেখা যায়, তবে সেটা যে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসকে জাতীয় রাজনীতিতে আইসিইউতে ঠেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট-তা হলফ্ করেই বলা যায় ৷

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ছত্রিশগড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে জঙ্গির লড়াইয়ে খতম ২৭ মাওবাদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার সকালে অবুঝমাঢ়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে কমপক্ষে ২৭ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে…

48 mins ago

পাকিস্তানে স্কুল বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা, মৃত ৪শিশু আহত ৩৮!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বালুচিস্তানে স্কুল বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা ৷ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চার শিশুর ৷…

2 hours ago

কলকাতার আকাশে একঝাঁক ড্রোন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- কলকাতার আকাশে একঝাঁক রহস্যময় ড্রোন। ঘটনাটি ঘটে সোমবার। অন্তত আট থেকে দশটি…

3 hours ago

ফের ধ্বসে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-টানা বৃষ্টির কারণে ধ্বস নামে উত্তর সিকিমে ।এর জেরে বন্ধ লাচেন এবং লাচুংয়ের…

3 hours ago

টাটা গ্রুপের সাথে লিজ এগ্রিমেন্ট,কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে পুষ্পবন্ত প্যালেস : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পুষ্পবন্ত প্যালেসে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ নিয়ে বহু জল্পনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছিলেন, হোটেল…

4 hours ago

উত্তরপ্রদেশে রাজধানী-সহ দুই ট্রেনকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নাশকতার চেষ্টা। উত্তরপ্রদেশে অল্পের জন্য রক্ষা পেল রাজধানী এক্সপ্রেস এবং কাঠগোদাম এক্সপ্রেস। সোমবার…

1 day ago