কংগ্রেসের কমলপ্রীতি!!
অনলাইন প্রতিনিধি:-লোকসভা ভোটের মুখে একদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারত ন্যায় যাত্রায় বের হয়েছেন, অন্যদিকে কংগ্রেস নেতাদের দল ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।কংগ্রেসের এখন কোন নেতা কবে বিজেপি দলে শামিল হবেন তা বলা মুশকিল।বিজেপি লোকসভা ভোটের মুখে এবার চরম আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যেটা তার হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে।অথচ গত বছর মে মাসে কর্ণাটক এবং বছরের শেষে হিমাচল প্রদেশ বিজেপি থেকে কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়ে বিজেপিকে একটা ধাক্কা দিয়েছিল। এমনকী পাঁচ রাজ্যে গত নভেম্বর – ডিসেম্বর মাসে যে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে কংগ্রেস বিজেপিকে ধাক্কা দেবে এমন একটা ভাব দেখা গেছিল।এর উপর জুলাই আগষ্ট মাসেই বিজেপির বিরোধী হিসাবে বিরোধী দলগুলির একটা সম্মিলিত জোট ইন্ডিয়া জোট গঠিত হয়।ইন্ডিয়া জোট গঠনের পর বেশ বেকায়দায় পড়ে বিজেপি।যেটা বিজেপির চালচলন, হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছিল।ইন্ডিয়া জোটের প্রতি প্রথম আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং।ইন্ডিয়া জোটকে ইন্ডিয়া মুজাহিদিনের সাথে তুলনা টেনেছিলেন মোদি। তখন ইন্ডিয়া জোট তার কাছে শক্তিশালী বলেই এবং চ্যালেঞ্জিং বলেই মনে হয়েছিল।এরপরই ইন্ডিয়া জোটকে ভাঙতে নানা কৌশল অবলম্বন করা হতে থাকে বিজেপির তরফে।তবে এতেও রয়েছে নানা যদি,কিন্তু ইত্যাদি।গত ডিসেম্বর মাসে পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস ধরাশায়ী হওয়ার পর আসলে ইন্ডিয়া জোট একটু একটু করে দুর্বল হতে থাকে।বিশেষ করে উত্তর ভারতের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ,ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বিজেপি প্রবলভাবে জয়ী হবার পর আত্মবিশ্বাস দলের প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়।বিজেপি ধরেই নিয়েছিল তাদের লোকসভা ভোট জেতা হয়ে গেছে। ফলাফল যদি উল্টো হতো তাহলে বিজেপির চিন্তা উল্টো বেড়ে যেতো। কিন্তু তা হয়নি। ফলে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ার রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়।
বছরের শুরুতে প্রথম ধাক্কাটা আসে বিহারে।’পাল্টিবাজ’ হিসাবে খ্যাতি নীতীশ কুমার ফের পাল্টি খেয়ে বিজেপির সাথে ঘর বাঁধলেন।এরপর ঝাড়খণ্ডে অপারেশন লোটাস করা হয়েছিল ইডির মাধ্যমে। সেই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পুরতে পারলেও সরকার ভাঙতে পারেনি কেন্দ্রের শাসক বিজেপি।অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রে শারদ পাওয়ারের কাছ থেকে নাম এবং প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।শারদ পাওয়ারের দল এখন আসল এনসিপি নয়।ফলে শারদ পাওয়ারকে একটা জোর ধাক্কা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এমনও শোনা যাচ্ছে শারদ পাওয়ার কংগ্রেসে মিশে যেতে পারেন। এমনও হতে পারে শারদ পাওয়ারকে ইডি, সিবিআইর জুজু দেখিয়ে বিজেপিতে শামিল করিয়ে নেওয়া হতে পারে।এরই মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারত ন্যায় যাত্রায় বের হয়েছেন। তার এই যাত্রা চলাকালীন কংগ্রেসের একে একে নেতা নেত্রীরা বিজেপিতে শামিল হচ্ছেন। মহারাষ্ট্রের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা দল ছেড়েছেন।আরও কয়েকজন বিধায়ক দল ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আসামের ২ জন বিধায়ক সম্প্রতি দল ছেড়েছেন।মোট ৪ জন আসামের বিধায়ক দল ছেড়ে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন।এবার শোনা যাচ্ছে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সপুত্র দল ছাড়ছেন।যদি শেষ পর্যন্ত তাই হয় তাহলে কংগ্রেসের কাছে তা হবে এক বিশাল ধাক্কা।এভাবে কেন একের পর এক কংগ্রেস নেতারা দল ছাড়ছেন তা কংগ্রেসকে ভেবে দেখা প্রয়োজন।অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটও দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা ইন্ডিয়া জোট সম্পর্কে এখন আর উৎসাহী নন।এর অন্য কারণও রয়েছে।লোকসভা ভোটের মুখে আগ্রাসী মেজাজে রয়েছে বিজেপি। বিজেপি এবার টার্গেট নিয়েছে এককভাবে ৩৭০ আসন এবং এনডিএর ৪০০ আসন লাভ। তাই বিরোধীদের একেবারে সূচ্যগ্র মেদিনীও ছাড়তে নারাজ বিজেপি।অলআউট খেলতে নেমেছে বিজেপি। (এক) ইন্ডিয়াকে দুর্বল করা। (দুই) কংগ্রেসের নেতাদের বিজেপিতে শামিল করা। (তিন) ইডি; সিবিআইর জুজু দেখিয়ে যতটা পারা যায় বিরোধী নেতানেত্রীদের দমিয়ে রাখা।সব কৌশল অবলম্বন করে নির্বাচনে জিতে আসা আপাতত বিজেপির প্রাথমিক লক্ষ্য।একদিকে কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ চলছেই, অন্যদিকে ইন্ডিয়ার শক্তিও দুর্বল হচ্ছে।