কংগ্রেসের সভাপতি

 কংগ্রেসের সভাপতি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বয়সে শতবর্ষ পার এবং দেশের বৃহত্তম সংগঠন কংগ্রেসের ঘরে এখন নানান বিভ্রান্তির মধ্যেই চলিতেছে অন্য তৎপরতা। কংগ্রেস দলের রাশ কাহার হাতে থাকিবে— গান্ধী পরিবারের হাতে , নাকি তৈরি হইবে পরিবারের বাহিরের নেতা , এই লইয়া দলের ভেতরেই নানান সময়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়াছে , বিশেষ করিয়া গত আট – নয় বৎসরে কংগ্রেস ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া যাইবার পর । নানান ধরনের গ্রুপ তৈয়ার করিয়া এআইসিসির বৈঠকে চোটপাট কিংবা নীরবে বিদ্রোহ হইয়াছে । উহা এখনো চলিতেছে । সর্বশেষ জি ২৩ – এর কথা এই ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য ।

এই গ্রুপের অন্যতম , কপিল সিবাল বর্তমানে অন্য দলের সাংসদ হইয়া রাজ্যসভা ভূষিত করিতেছেন । অন্যান্য যাহারা এখনো দলের সহিত সংস্রব ত্যাগ করেন নাই তাহারা আবার দলের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ করিয়া দিয়াছেন । ক্ষীণ করিয়া দিয়াছেন । তাহারা প্রকারান্তরে চাহিতেছিলেন দলের নেতৃত্ব গান্ধী পরিবারের বাহিরে থাকুক । কারণ সোনিয়া গান্ধী অসুস্থতার জন্য সর্বক্ষণের হইয়া কাজ করিতে পারিতেছেন না । আবার দলে এমন অনেক নেতা রহিয়াছেন যাহারা অভিজ্ঞতা , বয়স এবং দলের প্রতি আনুগত্যে একেক জন দৃষ্টান্তস্বরূপ । তাহারা আগাইয়া আসিয়া দলের দায়িত্ব গ্রহণ করুন । সেই সময়ে তাহাদের এই বক্তব্যকে গান্ধী পরিবারের অনুগত নেতারা দল বাঁধিয়া এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নস্যাৎ করিয়াছিলেন।

যদিও এই গ্রুপের কেহই গান্ধী পরিবারের দান , দলে তাহাদের উচ্চ অবস্থান , তাহাদের প্রতি দেশবাসীর আবেগ কোনটাই অস্বীকার করিতেছেন না , তথাপিও দলের অভ্যন্তরে এক ব্যবধান তৈয়ার হইয়া যায় । এই রকম এক পরিস্থিতিতে এইবার দল সভাপতি নির্বাচন করিতে চলিয়াছে দিনক্ষণ পাকা । এইবার কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি রহিয়াছে । বলাই বাহুল্য । চিত্র এইবার অন্যরকম । সোনিয়া গান্ধী অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব লইতে চাহিতেছেন না । রাহুল গান্ধী ২০১৯ – এর লোকসভা নির্বাচনের ব্যর্থতার দায় কাঁধে লইয়া সভাপতি পদ ছাড়িলেন আর লইতে রাজি নহেন। দলের অভ্যন্তরে জি ২৩ – এর বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া যাহারা গান্ধী পরিবারের জন্য লড়াই করিলেন তাহাদের অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হইয়াছে ।

দলে সভাপতির পদ লইতে অরাজি রাহুল গান্ধী । আবার জি ২৩ – এর বাহিরের লোকেরা মিনমিন করিয়া প্রিয়াঙ্কা বদরার নামও তুলিতে চাহিয়াছিলেন , যদিও বিষয়টা তেমন জমিল না । বেশিদূর আগাইল না তাহাদের এই প্রক্রিয়া । অতএব সেপ্টেম্বরে দলের সভাপতি নির্বাচন এক নতুন মোড়ে আনিয়া দাঁড় করাইবে কংগ্রেসকে । এর আগে গান্ধী পরিবারের বাইরের লোক হিসাবে দেশবাসী সীতারাম কেশরীকে দেখিয়াছিলেন । সোনিয়া গান্ধী দলের দায়িত্ব লওয়ার পর দেশের মানুষ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা সীতারাম কেশরীকে আর দেখিতে পাইলেন না । সোনিয়ার নেতৃত্বে দুই – দুইটি ইউপিএ সরকার প্রতিষ্ঠা হইল দেশে ।

মাঝে আট – নয় বৎসরে গঙ্গা যমুনা কৃষ্ণা কাবেরি দিয়া অনেক জল গড়াইয়া গিয়াছে । আর কংগ্রেস দিনে দিনে হাড়সর্বস্ব হইয়াছে । আজ কংগ্রেসের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আসিয়া দাঁড়াইয়াছে তাহা আর একা গান্ধী পরিবারের চ্যালেঞ্জ রহিল না । সোনিয়া গান্ধী , রাহুল গান্ধী সভাপতির চেয়ার হইতে নিরাপদ দূরত্বে চলিয়া আসায় এইবার সমান চ্যালেঞ্জ লইতে হইবে বাদবাকি যাহারা— গোলাম নবি আজাদ , আনন্দ শর্মা , মণীশ তিওয়ারি , ভূপিন্দর সিং হুদার মতন নেতাদের । অস্বীকার করিবার উপায় নাই কংগ্রেসের ঘরে রহিয়াছেন পি চিদাম্বরম , মল্লিকার্জুন খাড়গে , অম্বিকা সোনি, দিগ্বিজয় সিং , বীরাপ্পা মৈলি , এ কে অ্যান্টনি , জয়রাম রমেশের মতন নেতাগণের ।

আবার শশী থারুরের মতন নবীন বিজ্ঞ নেতাও কেবল কংগ্রেসেই রহিয়াছেন ।এইবার হাল তাহাদেরই ধরিতে হইবে । দলখানা যেহেতু কংগ্রেস তাই প্রশ্ন থাকিয়া যায় শেষতক্ না গান্ধী পরিবারেরই কাউকে দেখিতে হয় এই পদে । যদি তাহাই হয় তাহা হইলে কংগ্রেসের যতটা না মঙ্গল তাহার চাইতেও সুযোগ অধিক তৈরি হইবে নরেন্দ্র মোদির জন্য । কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শাসকদল বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে পরিবারতন্ত্র ছাড়া আর কোনও জুতসই অস্ত্র নাই রাজনীতিতে । যদি কংগ্রেস সত্যসত্যই গান্ধী পরিবারের বাহিরের কাউকে দলের নেতা বানাইয়া লয় তাহা হইলে বিরোধী দলকে আক্রমণের কৌশল পাল্টাইতে হইবে মোদি কিংবা বিজেপির নয়া অবতার যিনিই হইবেন তাহাকেই । আর এই আক্রমণ নি : সন্দেহে তীব্র হইবে না । কারণ ৭০ বৎসরের শাসনের দায় নিশ্চয়ই ওই নবাগত অগান্ধী কোনও নেতার হইবে না । কিন্তু কংগ্রেসে এমন দিন কি আসিবে ?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.