কঠিন খেলায় ইউনুস!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে চিন সফরে রহিয়াছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদিগের চিন সফর নতুন বিষয় নহে। শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি চিন সফরে গিয়াছিলেন। কিন্তু অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই দফায় মহম্মদ ইউনুসের এই সফর বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই দেশের বরাবরের বান্ধব এবং ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিন দিকের সীমানার রাষ্ট্র ভারতের প্রতি বাংলাদেশের অসন্তোষ। রাজনৈতিক পতিত শক্তি আওয়ামী লীগের সহিত ভারতের ঘনিষ্ঠতা, শেখ হাসিনাকে আশ্রয়দান সেই দেশের একটি বড় অংশের রাজনৈতিক বিশ্বাসী মানুষের অপছন্দ। ইহার বাহিরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর গুলীতে বাংলাদেশির মৃত্যু এবং জলবন্টন লইয়া বাংলাদেশের যে স্বাভাবিক ও চিরাচরিত অভিযোগ তাহা এই সময়ে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ হিসাবে দিন দিন বাড়িয়া চলিতেছে। এক কথায় বাংলাদেশের সহিত ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে অবস্থান করিতেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার চিন সফর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলিতে পারে, যাহা দীর্ঘ মেয়াদে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিবে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হইলে চিনের সহিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চিন দ্রুত নবগঠিত ইউনুস সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। এক কথায় ভারতের সহিত ঢাকার যে দূরত্ব তাহাকে চিন তাহার বাণিজ্যের সুবিধার্থে কাজে লাগাইতে ক্ষণিকমাত্র দেরি করে নাই। গত অক্টোবরে দুইখানা চিনা যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশের সমুদ্রতটে ভিড়িয়া মহম্মদ ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানাইয়া গিয়াছে, যাহা দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলিয়াছে। ঢাকাকে দিল্লীর বিরুদ্ধে সুর চড়াইতে অতিরিক্ত হাওয়া দিয়াছে। পাশাপাশি, হাসিনা সরকারের পতনের পর চিনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে সক্রিয় প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক শুরু করিয়া দেয় এবং দলগুলির প্রতিনিধিদিগকে চিনে আমন্ত্রণ জানায়, যাহা দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে নতুন সময়ের আভাস দিতেছে। এই ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রকৃয়ার তাৎপর্যপূর্ণ অংশ বলা যাইতেছে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের চিন সফর।
চিনে পৌঁছাইয়া ইউনুস দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রথম পর্যায়ে চিনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়াছেন। তাহার সফর ও আলোচনার প্রথম ও প্রাথমিক পর্যায় শেষ হইয়াছে বলা যায়। এই আলোচনায় ঋণের সুদের হার কমাইবার আর্জি রাখিয়াছেন ইউনুস। ইহার বাহিরে তাহাদের কথা হইয়াছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, চিনা বিনিয়োগের বিষয় লইয়া। বাংলাদেশ যে জ্বলন্ত ইস্যু লইয়া সর্বদা কথা বলিয়া থাকে তাহা হইল আন্তঃরাষ্ট্র নদীর জল বন্টন। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র সংক্রান্ত ইস্যু এই সফরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিতে পারে। বাংলাদেশ তিস্তা প্রকল্পকে যে চোখে দেখিতেছে তাহার বাস্তবায়ন এই অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করিতে পারে, অবশ্যই ভারতের সঙ্গে। কারণ, ভারতও তিস্তার জলের ওপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে চিন ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণ করিতেছে, ইহাতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ রহিয়াছে। অবশ্য চিন বরাবর আশ্বস্ত করিতেছে এই সকল বাঁধ নিচের দিকের জলের প্রবাহে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলিবে না।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরিয়া জলবন্টনের ক্ষেত্রে ন্যায্য ভাগ পাইতেছে না বলিয়া যে অভিযোগ তুলিতেছে তাহা বর্তমানের কেবলমাত্র ভারতের তিস্তা লইয়াই সীমিত নহে, ভবিষ্যতে চিনের ব্রহ্মপুত্র লইয়াও হইতে যাইতেছে। ফলে ঢাকার অবস্থান হইতে বিষয়টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনুস সম্ভবত চিনের সম্মুখে বিষয়টির গুরুত্ব জানাইতে চাহিবেন। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন এই সময়ে গভীর কোনও আলোচনা এড়াইয়া গিয়া কম বিতর্কিত বিষয়গুলিতে কথা বলিতে চাহিবে আসু বাণিজ্যের ভিত্তিতে। ফলে এই কথা স্পষ্ট যে বাংলাদেশকে তার জলের ভাগের অধিকার নিশ্চিত করিবার জন্য সতর্কতার সঙ্গে কৌশল ঠিক করিতে হইবে, যাহাতে চিন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় থাকে। প্রসঙ্গত, ইউনুসের এই সফরে চিনের সহিত চুক্তি ও প্রতিশ্রুতির প্রচেষ্টা আলোচনা যখন চলিতেছে তখন ঢাকায় তাহার দপ্তর যোগাযোগ করিতেছে দিল্লীর বিদেশমন্ত্রকে। ঢাকা জানিতে চাহিতেছে, ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিতব্য বিমস্টেক বৈঠকের অন্য পরিসরে মোদির সঙ্গে ইউনুসের বৈঠকের সম্ভাবনা কতটা।
ইহার কারণ হইলো ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। চিনের সহিত সম্পর্ক বাড়াইতে যাইয়া ইউনুস কোনভাবেই ভারতের সহিত দূরত্ব আরও বাড়াইত চাহিতেছে না। চিনের সহিত সম্পর্ক দিয়া ভারতকে পরোক্ষ চাপে রাখিবার কৌশল ঢাকার থাকিলেও থাকিতে পারে, কিন্তু নয়াদিল্লীর সহিত সম্পর্কের দূরত্ব যে সমূহ সমস্যা ডাকিয়া আনিবে তাহা ঢাকার অজানা নহে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকর সফর লইয়া প্রথম হইতেই পরামর্শ দিতে শুরু করিয়াছে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলিকে অবশ্যই স্পষ্ট করা দরকার যে, বাংলাদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে চিনের বিনিয়োগ লইয়া তাহাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নাই। বরং এই উন্নয়ন পশ্চিমা দেশগুলির জন্যও উপকারী হইবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হইবে চিন- যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো পক্ষ না লইয়া উভয়ের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার সেতুবন্ধণ হইয়া যদি কাজ করা যায়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

11 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

11 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

11 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

12 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

12 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

13 hours ago