কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নীরব, কলকাতা থেকে আসতে বিমানে অস্বাভাবিক চড়া ভাড়ায় বিপাকে যাত্রী!!

 কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নীরব, কলকাতা থেকে আসতে বিমানে অস্বাভাবিক চড়া ভাড়ায় বিপাকে যাত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারও বিমানে অস্বাভাবিক যাত্রীভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শুধু তা অস্বাভাবিক বললেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে না, ভাড়া নেওয়া হচ্ছে লাগামছাড়া, বিমান সংস্থার মর্জিমাফিক। বিমানে টিকিট মূল্য, ভাড়া কত টাকা নেওয়া হবে, বিমান সংস্থাগুলি যাত্রীর পকেট কেটে টিকিট কত টাকা লাভ করবেতার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিমান সংস্থাগুলিই। কেন্দ্রীয় সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের অসামরিক বিমান পরিবহণ দপ্তর (মন্ত্রক) তথা ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) এক্ষেত্রে যেন ঠুটো জগন্নাথ সেজে বসে রয়েছে। এমনটাই অভিযোগ ক্ষুব্ধ বিমানযাত্রীদের।

বিমানে এখন কলকাতা থেকে আগরতলায় আসতে যাত্রীপিছু ভাড়া নেওয়া হচ্ছে নাগালের বাইরে অস্বাভাবিক চড়া। সোমবার আগরতলায় ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়ার যেসব বিমান আগরতলায় এসেছে এবং যারা দুদিন-তিনদিন আগে টিকিট নিয়েছেন তাদের কাছ থেকে ন্যূনতম ষোল হাজার টাকা থেকে বাইশ হাজার টাকা নিয়েছে। এয়ার ইণ্ডিয়ার তরফে দাবি বিমানে এগজ়িকিউটিভ ক্লাসের ভাড়া বাইশ হাজার টাকা।কলকাতা থেকে আগরতলায় আসতে প্রকট যাত্রী ভিড় দেখা দেওয়ায় বিমান সংস্থাগুলি সেই সুযোগ নিয়ে ভাড়ায় – দুর্মূল্য করে নিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিমান সংস্থা ও ট্র্যাভেল এজেন্সিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার কলকাতা থেকে আগরতায় আসতে কোনও বিমানেই কনফার্মড টিকিট নেই। বুধবারের জন্য টিকিট বিক্রি হচ্ছে পনেরো হাজার-ষোল হাজার টাকায়।

এতো অস্বাভাবিক চড়া ভাড়া সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে টিকিট কেটে নিরূপায় ও অসহায় যাত্রীরা কলকাতা থেকে বিমানে আগরতলায় আসছেন। আগরতলা থেকে কলকাতায় যেতেও ভাড়া নেহাত কম নয়। চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগ, বিমান সংস্থাগুলির ভাড়া নির্ধারণের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায়ও ভাড়া বৃদ্ধি করার পুরো দায়িত্ব বিমান সংস্থার উপর ছেড়ে দেওয়ায় এখন সারা বছরই টিকিটের দুর্মূল্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, রাজ্যে পর্যটন বিকাশে পর্যটনের প্রচারে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিকে পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় সারা দেশ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজ্যের পর্যটনকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে বহু টাকা খরচ করে সৌরভ গাঙ্গুলীকে আনা হয়।

কিন্তু বিমান ভাড়ার যে অস্বাভাবিক দুর্মূল্য তাতে কী করে বিমানে পর্যটকরা বহি:রাজ্য ও বহি:দেশ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে আসবেন। এতো বিশাল অঙ্কের টাকা শুধু বিমান ভাড়া বাবদ দিয়ে পকেট ফাঁক করে কিভাবে রাজ্যে পর্যটক আসবেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলও গভীর সংশয় প্রকাশ করছেন। বহি:রাজ্য থেকে পর্যটক টানতে গেলে পর্যটকদের কাছে বিমান ভাড়া নাগালের মধ্যেই রাখতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশঙ্কা করছেন। এদিকে, বিমান সংস্থাগুলি কলকাতা-আগরতলা রুটের উভয় দিকে সারা বছর ধরে বিমান টিকিট দুর্মূল্য করে রাখায় ক্ষুব্ধ বিমান যাত্রীদের প্রশ্ন, এতো স্বল্প দূরত্বের আকাশপথে কেন যাত্রীর পকেট যথেচ্ছভাবে কাটা হচ্ছে। আগরতলা থেকে কলকাতার মধ্যে আকাশপথে দূরত্ব হলো মাত্র ৩২৭ কিলোমিটার। আকাশে উড়ার সময় লাগে মাত্র পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ মিনিটের মতো। বিমানের রানওয়ে ঘুরে ওঠা- – নামার সময় লেগে যায়। এই স্বল্প দূরত্বের পথে এতো কম সময় উড়া বিমানে কিভাবে যাত্রীপিছু ভাড়া বা টিকিটের মূল্য – এতো অস্বাভাবিক নেওয়া হচ্ছে তা ভেবে যাত্রীরা বেকুব – বনে যাচ্ছেন।

প্রচণ্ড বিস্মিতও। যেখানে সোমবার সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগরতলা থেকে দিল্লীর আকাশ পথে দূরত্ব হলো অনেক বেশি ১৫০১ কিলোমিটার। আর এই দুরত্ব যেতে সময় লাগে দু’ঘন্টা চল্লিশ মিনিট। কিন্তু আগরতলা থেকে দিল্লীর ভাড়া বা টিকিটের মূল্য নেওয়া হচ্ছে নয় হাজার টাকা থেকে নয় হাজার পাঁচশো টাকার মতো। সোমবার সন্ধ্যায় যারা টিকিট নিয়েছেন তারা এই মূল্যে টিকিট নেন। তাতে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন কলকাতা-আগরতলা রুটের বিমান টিকিট মূল্য নাগালের বাইরে লাগামছাড়া নেওয়া হয়। বাঙালি পর্যটকরা মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসে। কিন্তু এই পথে বিমানে গভীর রহস্যজনকভাবেই অস্বাভাবিক ভাড়া সবসময় দাঁড়িয়ে থাকায় পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকরা কিভাবে আসবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, বিমান ভাড়া নাগালের মধ্যে যাতে থাকে সে লক্ষ্যে দু’বছর আগে বিজেপি জোট সরকার আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে বিমান জ্বালানি তথা অ্যাভিয়েশন টার্বাইন ফুয়েল (এটিএফ) থেকে জিএসটি (বিক্রয় কর) একলাভে ষোল শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র এক শতাংশে নিয়ে আসে। তাতে বিমানবন্দরে অন্যান্য অনেক বিমানবন্দরের চেয়ে বিমান জ্বালানির মূল্যও অনেক কমেছে। স্বল্প মূল্যের জ্বালানি বিমানগুলি জ্বালানি পর্যন্ত ভরে উড়ে যাচ্ছে। স্বল্প মূল্যের জ্বালানি ভরে নিয়ে সেই জ্বালানি দিয়ে বিমানগুলি দেশের অন্যান্য আকাশপথে যাতায়াত করছে। কিন্তু বিস্ময় ও প্রচণ্ড পরিতাপের বিষয় হলো, সস্তায় জ্বালানি ভরে নিলেও বিমানগুলি ভাড়া কমাচ্ছে না। সব সময়ই আকাশছোঁয়া ভাড়া বা টিকিটের মূল্য দাঁড়িয়ে থাকছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ও রাজ্যবাসী রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.