কবরে গেল তিন কুইন্ট্যাল ল্যাংচা, প্রশ্ন ফিরবে কি ‘গুডউইল’!!

 কবরে গেল তিন কুইন্ট্যাল ল্যাংচা, প্রশ্ন ফিরবে কি ‘গুডউইল’!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-একটা অভিযানে যাবতীয় বিশ্বাস ভেঙে খানখান।জাতীয় সড়ক ধরে বর্ধমানে যাতায়াতের পথে যারা শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ‘বাংলার ব্র্যান্ড মিষ্টি’ ল্যাংচা কিনতেন, রবিবারের পর তারাই ঘেন্নায় মুখ বেঁকাচ্ছেন।ল্যাংচা কেনার আগে দশবার ভাবতে হবে বলে জানিয়েছেন বহু ক্রেতা। একজন ক্রেতা তো বলেই বসলেন, ‘আমি মাসে দু’বার তারাপীঠ যাই।প্রতিবার ফেরার পথে একশো-দেড়শো পিস ল্যাংচা নিয়ে যাই আত্মীয় পরিজনের জন্য। সেগুলোর গুণগত মান নিয়েই তো এখন প্রশ্ন জাগছে। আমাদের বিশ্বাসের গলা টিপে খুন করেছে ব্যবসায়ীরা। আজও এখানে দাঁড়িয়েছি, তবে শুধু চা খেয়ে চলে যাচ্ছি। টাকা দিয়ে বিষ কিনতে যাব কেন?’
শক্তিগড়ে পুরনো ল্যাংচা বিক্রির অভিযোগে মোট ছয় কুইন্টাল ল্যাংচা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জাতীয় সড়কের পাশে শক্তিগড়ের ল্যাংচা কেন্দ্র থেকে এই ল্যাংচা তুলে জেসিবি মেশিনের সাহায্যে তিন কুইন্টাল ল্যাংচা মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।আসলে, গুদামে ভাজা শুকনো ল্যাংচা ভর্তি বস্তা ছত্রাকে আক্রান্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, যার খবর পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পুনরায় শক্তিগড়ে অভিযান চালান।তারা জেসিবি নিয়ে এসে মাটি খুঁড়ে সেই সমস্ত ল্যাংচা পুঁতে দিয়ে ধ্বংস করেন।
শনিবার থেকেই স্বাস্থ্য দপ্তর বর্ধমানের বিখ্যাত শক্তিগড় ল্যাংচা দোকানগুলিতে অভিযান চালাতে শুরু করে। জেলা পুলিশ, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর এবং আইন পরিমাপক দপ্তরও অভিযানে অংশগ্রহণ করে।অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা উপ-স্বাস্থ্য প্রধান ডঃ সুবর্ণা গোস্বামী এবং উপ-সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিইবি) এ এস চ্যাটার্জি।প্রতিনিধি দল দেখেন যে বেশিরভাগ দোকানের রান্নাঘর খুবই নোংরা, মিষ্টির পাত্রগুলির ঢাকনা নেই।কোথাও কোথাও মিষ্টিতে বিষাক্ত রং মেশানো হচ্ছে। অভিযানের দল অনেক দোকানের গুদামে সাত থেকে দশ দিনের পুরনো ছত্রাক পড়ে যাওয়া ল্যাংচা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।দলের প্রাথমিক অনুমান ছিল যে, এই সমস্ত পুরনো মিষ্টিগুলো আবার ভেজে, রসে ডুবিয়ে ২১ জুলাই বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল।কারণ ২১ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ দিবস পালন করে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মাঠকর্মী আসেন এবং যান জাতীয় সড়ক দিয়ে এবং শক্তিগড়ে ল্যাংচার বিশাল চাহিদা থাকে।
সুবর্ণা গোস্বামী জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত প্রায় তিন কুইন্টাল ভাজা ল্যাংচা পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে এবং বাকি তিন কুইন্টাল ল্যাংচা পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। সাতটি দোকানদারকে সোমবার আইনত নোটিশ দেওয়া হয়েছে, এবং কিছু দোকানের বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানায় ডায়েরি করা হয়েছে।জানা গেছে, সমস্ত অসাধু দোকানদারদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।তাদের প্রতিজনের ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
কার্যত ছাতা ধরা বা ছত্রাক আক্রান্ত পচা ল্যাংচার ঘটনায় আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন শক্তিগড়ের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।দীর্ঘদিনের মিষ্টি ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ ঘোষ জানিয়েছেন,’সততার সঙ্গে ব্যবসা করে এসেছেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। আমরাও সেই পথে চলেছি। কিন্তু, অল্পদিনে বেশি লাভ করতে চাওয়া কিছু ভুইফোড়ের জন্য আমাদের এই অবস্থা।’তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘ল্যাংচার ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে। মিষ্টি কিনলেও ল্যাংচা কিনছেন না কেউ। এটা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যের।’ব্যবসায়ী জাভেদ ইসলাম বলেন, ‘একবার বিশ্বাস হারালে সেটা ফিরে পেতে জীবন চলে যায়। আমাদের তিন পুরুষের দোকান। লোকে চোখ বন্ধ করে আমাদের থেকে কেনেন। আমরা কোয়ালিটি মেনটেন করি বলে আজও মানুষের ভালোবাসা পাই। কিন্তু এবার কয়েকজন ব্যবসায়ীর জন্য আমাদেরও ভুগতে হবে।’

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.