কম সময় বেশি কাজ
স্লগ ওভারের ব্যাটিং শুরু করিতে হইবে এই সময়ে । নির্ধারিত ৬০ মাসের মধ্যে এখন আর বাকি ছয় মাস । এই সময়ে যে রান তোলা যাইবে তাহার প্রতিটি রান প্রতিপক্ষের জন্য পাহাড়ের উচ্চতা লইয়া চাপ হইয়া আসিবে। কারণ ৫৩ মাসের শেষে চার বিধানসভার উপনির্বাচনের যে ফলাফল দেখা গিয়াছে তাহাতে প্রধান প্রতিপক্ষ রিক্তহস্ত হইয়াছে । এই নির্বাচনকে সেমিফাইনাল বলা হইতেছে । প্রতিপক্ষ ভোটের ফলাফলে এতটাই নি:স্ব , রিক্ত হইয়াছে যে আকস্মিকতা কাটাইতে পারিতেছে না ।
নিয়ত পরনিন্দা , পরচর্চায় তাঁহারা এতটাই নিমজ্জিত হইয়া পড়িয়াছিলেন যে নিজের ঘরের দিকে ফিরিয়া চাহিতে সময় পাইলেন না । ফলে পলাশীর প্রান্তরে কয়েক পশলা বৃষ্টিতে সিরাজের গোলাবারুদ ভিজিয়া গেল বলিয়া তাঁহারা গুটিকয় কোম্পানির সেনার বিরুদ্ধে যুঝিতে পারিলেন না বলিয়া স্কুলের পাঠ্যবইয়ে যেরকম পড়ানো হইত সেইরকম ফাঁপা তত্ত্ব দাঁড় করানো হইতেছে । মানুষ সকলই বুঝিতে পারিতেছেন এবং তাহাদের কথায় যৎপরোনাস্তি কৌতুক অনুভবে হাসিতেছেন ।
অর্থাৎ প্রতিপক্ষ যথেষ্ট দুর্বল হইয়াছে । এই সময়ে নিজের রান তুলিবার দিকে মনোযোগী হইতে হইবে ।
মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা বলিয়াছেন , আগামী ছয়মাস কাজ সম্পূর্ণ করিবার কাল । কাজ সম্পাদন এবং সম্পন্ন করিবার কাল । হেলায় সময় নষ্ট করিবার বিন্দুমাত্র অবকাশ আর নাই । মুখ্যমন্ত্রীও ভোটে জিতিবার পর উন্নয়নের দিশায় কাজে নামিয়া পড়িতে গুরুত্ব আরোপ করিলেন । বলিলেন , আগামী ছয়মাস রাজ্যবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করিয়া যাইবে তাহার সরকার । মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করিবে সরকার । ইহাই এই মুহূর্তে একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হওয়া উচিত সরকার এবং শাসক দলের ।
সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণে শাসক দলের দায় এবং ভূমিকা অধিক থাকিবে । এই সকল ক্ষেত্রে অর্থাৎ রাজ্যের উন্নয়নকল্পে যেকোনও উদ্যোগ আয়োজনে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করিতে পারিলে কাজগুলি সহজ হয় ।
তাহাদের মুখ বন্ধ করিবার উপায় একটাই , সে হইলো কাজ করিয়া দেখানো । একটাই মোক্ষম জবাব , সে হইলো কাজ । কত কাজ ? কতটা করা সম্ভব ছয় মাসে ? বরং প্রশ্নটা এইভাবে করিলেই সঠিক হয় , কতটা কাজ করা সম্ভব পাঁচ বৎসরে ? বিজেপি নির্বাচনের আগে কাঁড়ি কাঁড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়াছে । তাহার সকল তো পাঁচ বৎসরেই পূরণ সম্ভব নহে , ছয় মাসে কী মতে ?
ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য করিয়া গড়িয়া তোলা পাঁচ কেন , পঞ্চাশ বৎসরেও সম্ভব নহে । তবে চেষ্টা থাকিবে , উহা দেখিতে পাইবেন মানুষ ৷ ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত করিবার যে প্রতিশ্রুতি তাহা কখনোই সম্ভব নহে । কারণ উহা একটি সামাজিক , অর্থনৈতিক ইস্যু । গত চার বৎসরে এই রাজ্যে নেশা , মাদকের রমরমা বাড়িয়াছে । তবে সরকার যাহা করিতে পারে তাহা হইল মাদকের ব্যবহার লইয়া প্রশাসনের কড়া ভূমিকা থাকিবে , নেশামুক্তিতে আরও আন্তরিক হইবে প্রশাসন । অর্থনৈতিক যেই সকল প্রতিশ্রুতি রহিয়াছে সেইগুলি পূরণ করা সহজ যদি অর্থের সঙ্কুলান থাকে । এই অর্থ আসিবে দিল্লী হইতে , ছোট এবং অনুৎপাদক রাজ্য ত্রিপুরার নিজের সাধ্য নাই আর্থিক প্রতিশ্রুতি পূরণের । সেইক্ষেত্রে ডবল ইঞ্জিন ভরসা ।
আগামী ছয় মাস সেইদিক হইতে কাজ বেশি , সময় কম । কম সময়ের মধ্যে সর্বাধিক কাজের নজির তৈরি করিয়া দলকে আবার ভোটের ময়দানে লইয়া যাইবেন মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা । এই অভিযানে তিনি প্রথম রাউন্ডে অনেকটাই সফল হইয়াছেন । এই আমলের সব চাইতে ভাল ভোট এবং নির্বিঘ্ন ভোট গণনা সম্পন্ন করাইয়াছেন । তবে তাহাকে আরও কঠোর হইতে হইবে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের বিষয়ে । মুখ্যমন্ত্রী হইয়া প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তিনি হিংসার সংস্কৃতি বদলাইবার আহ্বান রাখিয়াছিলেন ।