কলঙ্কিত পরম্পরা!

 কলঙ্কিত পরম্পরা!

Vector icon isolated on white background.

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনে এক ব্যক্তির মৃত্যু। তাও বৃদ্ধ লোক নহে । সবে প্রৌঢ়ত্বে আসিয়াছেন। এই সংবাদে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ সহজেই বুঝিতে পারিতেছেন আতঙ্ক মানুষকে কীভাবে গ্রাস করিতেছে।নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস মানুষকে ভয়ার্ত করিতেছে। আক্রমণ এতই তীব্র যে স্বাভাবিক মানুষ এই চাপ লইতে পারিতেছেন না। সম্প্রতি মানুষ ভয়ের কবল হইতে বাহির হইয়া ভোট দিয়াছিলেন। নির্বাচন কমিশন তাহার প্রতিশ্রুতি মতন ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করিয়া দিতে পারিয়াছিল। মানুষ ভোট দিতে পারিয়া খুশি হইয়াছিলেন। হায়, খুশি বা সুখের আয়ু যে এত কম কে জানিত ? ভোটের ফল প্রকাশ হইবার পরপর নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস এমন চেহারা লইল যে সবাই নির্বাচন কমিশনের ভোট সুপবন মুহূর্তে ভুলিয়া গেলেন। সাধারণ মানুষ হতবিহ্বল। সেই কলঙ্কিত পরম্পরা যেন আমাদের ছাড়িয়া যাইতেই চাহে না। ত্রয়োদশ বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির সরকারের বিদায়লগ্নে আবার বিজেপির সরকারই প্রতিষ্ঠিত হইতেছে। তাহা হইলে কিছুই তো পালটায় নাই। পরিবর্তন না হইয়া প্রত্যাবর্তন ঘটিয়াছে। তাহা হইলে কেন আক্রমণ হইতেছে? যাহারা ভোটে হারিয়াছেন তাহাদের উপর কেন আক্রমণ নামিয়া আসিবে? আর যদি ইহাই ভবিতব্য তাহা হইলে ২৫ বৎসরের বাম পরম্পরার চাইতে বিজেপির সংস্কৃতি কীভাবে পৃথক হইল ? বামেদের সরকার বিদায় লইয়া নতুন বাম সরকার প্রতিষ্ঠিত হইত আবার রাজনৈতিক সন্ত্রাস, নির্বাচনোত্তর হিংসাও ঘটিত। সেই দিনের ঘটনা আর এই দিনের ঘটনা সকলই সমান ব্যথার। মানুষ কখনোই এই ধরনের পরিবেশ চাহেন না। অপছন্দই করেন। মানুষ যে শান্তি আর সৌহার্দের জন্য ভোট দিয়াছেন এই কথা বিজয়ী দল সর্বদাই স্বীকার করিয়া থাকে, কিন্তু শান্তি বজায় রাখিতে সদর্থক ভূমিকা লয় না। ইহা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতন সমতলের নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের সহিত এইবার যোগ হইয়াছে তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত নির্বাচনি ক্ষেত্রগুলিতে কোথাও কোথাও মথার সমর্থকদের হামলাবাজি।
তাহাদের আক্রমণের শিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজেপির সমর্থক মানুষজন। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফলে সংখ্যায় প্রথম দল বিজেপির সমর্থকদের উপর হামলা চালাইতেছে দ্বিতীয় দল মথা । ইহা এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি। যেহেতু এই সংঘাতের ঘটনাগুলি হইতেছে রাজ্যে কনফ্লিক্ট জোন হিসাবে কথিত এলাকায়, তাই সাধারণ মানুষ ঘরপোড়া গরুর ন্যায় লাল মেঘ দেখিয়া আগুন ভাবিতেছেন। প্রমাদ গনিতেছেন। এক কথায় হিংসামুক্ত ভোটের যে সুখানুভূতি রাজ্যবাসীর মনে জাগিয়াছিল তাহা যেন কর্পূরের মতন উবিয়া গেলো। যে পুলিশ ভোটপর্ব চলাকালে সাইরেন বাজাইয়া নিরাপত্তা টহল দিয়াছিল সেই টহলকে মানুষ আশীর্বাদ বলিয়া মানিয়া লইয়াছিল, আবার ভোট শেষ হইতেই সেই সাইরেন শুনিয়া মানুষ অজ্ঞান হইতেছে ভয়ে, মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িতেছে।
তাহা হইলে একই পুলিশের প্রতি কি মানুষ দুইরকম প্রত্যাশা বা আশঙ্কা করিতেছে? আবার পুলিশইবা কোথায়, যখন হামলার ঘটনা ঘটিতেছে? অভিযোগ উঠিতেছে, হামলার সময়ে পুলিশ নাকি নিরাপদ দূরত্বে থাকিতেছে। হামলা শেষ হইয়া গেলে ময়দানে আসিতেছে। কী করিয়া সম্ভব ? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানাইতেছেন বারবার। যাহারা হিংসার সহিত জড়িত, যাহারা গুজব ছড়াইয়া মানুষকে সন্ত্রস্ত রাখিতেছে তাহাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা লওয়া হইবে। কাহাকেও ছাড়িয়া দেওয়া হইবে না। কড়া ব্যবস্থা লওয়া হইবে। কিন্তু ইহার পরেও কী করিয়া পুলিশের দিকে আঙুল তুলিতেছেন আক্রান্ত মানুষের দল? আমাদের রাজ্যের কলঙ্কিত এই পরম্পরা আর কতকাল আমাদের বহিয়া চলিতে হইবে ?
দীর্ঘকাল কংগ্রেস, সিপিএমের রাজনীতি চলিয়া আসিয়াছে এই রাজ্যে। নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস সেই আমলেই জন্ম লয়। বিজেপি আসিয়াছিল সেইসব পচাগলা সংস্কৃতি হইতে রাজ্যবাসীকে রেহাই দিবার প্রতিশ্রুতি লইয়া । কিন্তু হায়, বিজেপির নয়া সংস্কৃতিতেও হিংসার পরম্পরা আর ছাড়িয়া গেল না রাজ্যের মানুষকে। আর দুই দিন পর রাজ্যে নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকিবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই লইয়া যখন চলিতেছে সার্বিক প্রস্তুতি তখনও গ্রামেগঞ্জে চলিতেছে নির্বাচনি সন্ত্রাসের আবহ, এতটাই দুর্ভাগ্য এই রাজ্যের মানুষের।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.