কলেজ শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনা!!

 কলেজ শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে
কলেজ শিক্ষকদের গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার গায়েব করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।কারণ এখন পর্যন্ত কাগজেকলমে প্রচারে থাকা কর্মচারী দরদি রাজ্য সরকার রাজ্যের কলেজ শিক্ষকদের ২১ মাসের ইউজিসির বর্ধিত বেতন করলো না।ফলে রাজ্যের প্রায় ৩৮৭ জন কলেজ শিক্ষক শিক্ষিকা তাদের চাকরিজীবনে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আর পাচ্ছেন না। যদিও ইউজিসি বেতনক্রমের সম্পূর্ণ অর্থ সরাসরি প্রদান হয় কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে।এমনকী রাজ্য সরকারকেও ২১ মাসের বেতনের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার প্রদান করেছিল বলে খবর।তবে সারা দেশের মধ্যে একমাত্র রাজ্য ত্রিপুরায় সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেতনক্রম প্রদানকালে ২১ মাসের বেতন গায়েব করে দিল রাজ্য সরকার।
অভিযোগ, কলেজ শিক্ষক ব শিক্ষিকাদের ২১ মাসের বর্ধিত বেতন প্রদানের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিল রাজ্য সরকার।তবে তা কলেজ শিক্ষক শিক্ষিকাদের আজ পর্যন্ত প্রদান হয়নি। ফলে বিপুল পরিমাণ আয়কর রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা হল না।যদি অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের এই অর্থ প্রদান করা হতো তবে তারা সরকারকে অবশ্যই আয়কর দিতেন।এমনকী অর্থ রাজ্যের বাজারেও ব্যয় করতেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, প্রতিশ্রুতি ছিল শিক্ষক শিক্ষিকাদের অবিলম্বে ২১ মাসের বেতন প্রদান করবে রাজ্য সরকার।অবাক করার বিষয় হলো, গত পাঁচ বছরেও সরকারের এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হলে না।অভিযোগ, উল্টো সাধারণ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বছরে ৩০ দিনের আর্নলিভ (অর্জিত ছুটি) পর্যন্ত প্রদান করেনি রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতা নিয়ে অধ্যাপক অধ্যাপিকার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
২০১৯ সালের জুন মাসে রাজ্য সরকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য ইউজিসি পে-স্কেল কার্যকরের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে নোটিফিকেশন জারি করেছিল।এর আগে অবশ্যই ২০১৯ সালের ৭ মার্চ রাজ্য মন্ত্রিসভা ত্রিপুরার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য ইউজিসি পে-স্কেল ২০১৬ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। এরপর এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে রাজ্যব্যাপী প্রচারও চলে। নির্বাচনও হলো। পুনরায় সরকার হয়ে গেল। তবে পরিতাপের বিষয় রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপিকারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত পে-স্কেল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে পেলেন না।তা গায়েব করে দিল সরকার এমনই অভিযোগ করলেন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা।রাজ্য সরকার ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর থেকে ইউজিসি বেতনক্রমের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দিলেন। এর ফলে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ অন্যান্য পেশাগত কলেজের বহু শিক্ষক শিক্ষিকা কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত ইউজিসি পে-স্কেল থেকে বঞ্চিত হলেন।
শুধু তাই নয়,সরকারের এই দায়সারা মনোভাবের খেসারত ও ক্ষতি চাকরি ও অবসর জীবনেও বহন করতে হচ্ছে অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের।
জানা গিয়েছে, ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের এভাবে ঠকানো হলো।১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৪ এবং ২০০৬ সালে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইউজিসি এবং এআইসিটিই পে- স্কেল পেয়ে আসছেন তাদের নির্দেশিত ১ জানুয়ারী তারিখ থেকেই। রাজ্যের পূর্বতন কোনও সরকারই এই স্কেল নিয়ে অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের বঞ্চিত করেননি।
দেশের সবগুলি রাজ্যে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকেই ইউজিসির বেতনক্রম কার্যকর হলেও এবারই সর্বপ্রথম ত্রিপুরা ব্যতিক্রম।আরও অবাক করার বিষয় হলো,এই বেতন প্রদানে যে অর্থ লাগবে তার পঞ্চাশ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারকে প্রদান করবে বলে ঘোষণা করেছে।কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিমাণ অর্থ দিতে রাজি থাকলেও রাজ্য সরকার তা প্রদানে রাজি হয়নি।কিন্তু কেন এই প্রশ্নের কোনও উত্তর বিগত পাঁচ বছরেও পাওয়া যায়নি। কারণ যেখানে দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যে এমনকী ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে বেতনক্রম চালু হলো।এমনকী বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকারের অবহেলার জন্য ত্রিপুরার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সময়কালের অর্থাৎ ২১ মাসের বকেয়া ইউজিসি বেতনক্রম আর পাচ্ছেন না। যা রাজ্যে ইউজিসি বেতনক্রমের ক্ষেত্রে আগে কখনও ঘটেনি।
২০১৭ সালের ১ অক্টোবর স্কেল কার্যকরী হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিমে প্রমোশনপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের।এমনকী ২০০২ সালে চাকরিপ্রাপ্ত যে অধ্যাপক অধ্যাপিকারা এই সময়ের মধ্যে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হয়েছেন তাদেরও একটি ইনক্রিমেন্ট হারাতে হলো।ফলে তাদের ইউজিসি পে-স্কেল থেকে একপ্রকার সরিয়েই দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা চাকরিতে দুই বছর জুনিয়র শিক্ষক শিক্ষিকাদের সমকক্ষ হয়ে গেলেন।একইভাবে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সময়কালে যে অধ্যাপক অধ্যাপিকারা অবসরগ্রহণ করেছেন তারাও পেনশনের ক্ষেত্রে ব্যাপক আর্থিক বঞ্চনার মুখোমুখি হলেন। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারীর পর পিএইচডি এবং এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত অধ্যাপক অধ্যাপিকাদেরও তাদের প্রাপ্ত ইনসেনটিভ থেকে বঞ্চনা করা হলো ইউজিসি নির্দেশিত এক পুরানো নোটিফিকেশন দেখিয়ে।উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই ইউজিসি নির্দেশিত নোটিফিকেশনে পুরানো সিদ্ধান্তকে কার্যত অগ্রাহ্য করা হয়েছিল।কিন্তু তাও মানেনি সরকার।ফলে ইউজিসি বেতনক্রম প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হলেন অধ্যাপক অধ্যাপিকারা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.