কাজের বাজারে মন্দা!!
কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা না দিয়ে এনডিএ সরকার বলাই অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য।কেননা এবার বিজেপি সরকারের কাছে একক গরিষ্ঠতা নেই।বরং শরিক দলগুলোর সাহায্য নিয়েই কেন্দ্রের মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে এবার হাঁটতে হচ্ছে।যদিও শরিক নির্ভর তৃতীয় মেয়াদের মোদি সরকারকে তারপরও রক্ষণাত্মক হওয়ার পরিবর্তে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী চেহারায় দেখা যাচ্ছে বলে অনেকই মনে করেছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর একশ দিনে পা রাখা তৃতীয় মোদি সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু বড় পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে। যেমন চলতি তৃতীয় মেয়াদেই এক দেশ এক ভোট নীতি কার্যকর করার পথে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির রিপোর্টকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানী আইন দেশে কার্যকরী করার জন্য বেশ খানিকটা রাস্তা এগিয়ে গেছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই দেশের ৪-৫ টি রাজ্যে এই সম্পর্কিত রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি আইন বলবত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩ বছর ধরে আটকে পড়ে থাকা দেশের জনগণনার কাজ আসন্ন দীপাবলির পরই শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্র। এবার লোকসভা ভোটের আগেই নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০০ দিনে কী কী কাজ করবে এর পরিকল্পনা ও রূপরেখা চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রী দেশের শীর্ষ আমলাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।লোকসভায় একা ২৪০টি আসন নিয়ে শরিকের কাঁধে ভর করে বিজেপি কেন্দ্রে ফের ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনের জন্য ৩ লক্ষ কোটি টাকার অবকাঠামো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক অনুমোদন দিয়েছিল।এর মধ্যে হাইস্পিড রোড,গ্রাম সড়ক যোজনায় নতুন রাস্তা তৈরি,তিনটি নতুন মেট্রো এবং বিমানবন্দর তৈরি, একটি বন্দর নির্মাণ সহ বেশকিছু পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা বলা হয়েছিল।এ তো গেল সরকারের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা।কিন্তু তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম ১০০ দিনে সরকার বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে কতটা কী করতে পেরেছে সেই জায়গায় নজর দিলে দেখা যাবে সেই অর্থে সরকার অনেকটাই হতাশায় এখনো হাবুডুবু খাচ্ছে।একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে,২০২৪-এর লোকসভা ভোটের ৮-১০ মাস আগে থেকে দেশজুড়ে চাকরি দেওয়ার জন্য রীতিমতো চাকরির মেলা বসে গিয়েছিল।মেলা না বলে বরং বলা যায় চাকরির সুনামি। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দপ্তরে এতদিন বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে যারা চাকরি নিশ্চিত করেছিলো,ভোটের প্রাক্কালে দেখা গেল, একরকম জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেই চাকরি প্রাপকদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য একটা গালভরা নামও দিয়েছিল- ‘রোজগার মেলা’।প্রতি একমাস অন্তর অন্তর আয়োজিত দেশের বিভিন্ন স্থানে একেকটি মেলায় অন্তত ১ লক্ষ পর্যন্ত চাকরির নিয়োগপত্র বেকারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।কিছু লোকসভার ভোট প্রক্রিয়া ও ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আচমকা কোন ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে গেল রোজগার মেলা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে দ্বিতীয় মোদি সরকারের রাজত্বেও সর্বশেষ রোজগার মেলা আয়োজিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারী মাসে। দেশের মোট ৪৬ টি স্থানে ৫২
হাজার চাকরি প্রার্থীর হাতে এই নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল।সেই ফেব্রুয়ারীর পর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ভোটে ভোটে কেটে গেল দেশের রাজনীতি।এখন সেপ্টেম্বর মাস প্রায় শেষ হয়ে অক্টোবর ছুঁইছুঁই।কিন্তু রোজগার মেলার আর দেখা নেই।ইতিমধ্যেই তৃতীয় মোদি সরকারের ক্ষমতায় বসার ১১০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।সরকারী তথ্য বলছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই অবধি কেন্দ্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রকে প্রায় ১৫ হাজারের মতো চাকরি পেয়েছেন।পরিসংখ্যানগত হিসাবে চাকরি দেওয়ার এই হার অনেকটাই নিম্নমুখী। নতুন করে রোজগার মেলারও আর খবর নেই। এমনিতেই দেশে কাজের বাজারে মন্দা।কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্ব নজিরবিহীন মাত্রায় বেড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ২০২৪-এর রিপোর্টে বলছে, দেশে প্রতি বছর ৭০-৮০ লক্ষ বেকার চাকরি খুঁজছে।কিন্তু ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে ০.০১%-এটাই অভিযোগ বিরোধীদের। প্রশ্ন হল, এর দায় কার?