কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চলে হরিণ শিকারির দৌরাত্ম্য

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বন্যপ্রাণী শিকারিদের দৌরাত্ম্য কাঞ্চনপুর সদর রেঞ্জ এলাকায় । বিশেষ করে কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চলে হরিণ শিকার বেড়ে গেছে । তাছাড়াও দশদার দক্ষিণাঞ্চল তৈছামা , কালাপানী , মনুছৈলেংটার গভীর বনাঞ্চল থেকে অনবরত বৃষ্টির জন্য হরিণ দলবেঁধে মাঝেমধ্যে সমতলের এলাকাগুলিতে চলে আসছে । আর তখনই শিকারিরা হরিণ শিকার করছে । ব্যাপকহারে হরিণের মাংস বিক্রির খবর আসছে কাঞ্চনপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে । কিন্তু বন দপ্তর কার্যত জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছে ।
এছাড়াও কাঞ্চনছড়া , চণ্ডীপুর , জমারায়পাড়া এলাকার বনাঞ্চলে পশু শিকারিরা হরিণশিকার করে প্রতিনিয়ত হরিণের মাংস বিক্রি করছে কাঞ্চনপুর এবং তার আশপাশ এলাকার বাজারগুলিতে । ফলে কাঞ্চনপুর রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে হরিণ প্রায় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । অথচ একটা সময় কাঞ্চনছড়া , মনুছৈলেংটা , জমারায়পাড়া , মিত্রজয়পাড়া , চণ্ডীপুরের বনাঞ্চলে বিশালসংখ্যক হরিণ দেখা যেত ।

দেখা গেছে গত বছর করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে শহর গ্রামের বাজারে মানুষের কোলাহল কম হয়ে গিয়েছিল । আর তখন মানুষের তৈরি ইট বালির রাস্তায় এবং মাঠে ময়দানে গ্রাম পাহাড়ে পা রেখেছে বহু বন্যপ্রাণী , পশু পাখি । তখন কাঞ্চনপুরের গ্রাম পাহাড়ের রাস্তায় উঠে এসেছে ব্যাপক সংখ্যক বালিহাঁস হরিণ , বন্য মুরগির দল । এখনও দেখা যাচ্ছে সূর্য ডোবার সাথে সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে বালি হাঁস কাঞ্চনপুরের আকাশে ঘুরে বেড়ায় । বালি হাঁসের কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা । সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে পাখিদের সংখ্যা বাড়ে । আশেপাশে বিদ্যুতের তার আর গাছগাছালিতে পাখি ভরে যায় আর শুরু হয় এদিক ওদিক ওড়াওড়ি । কাঞ্চনপুরের গ্রাম জঙ্গল ও পাহাড়ের গাছে গাছে মাঠে ময়দানে জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় আর কোলাহলে এক অভূতপূর্ব মনোরম দৃশ্য এখনও প্রায়ই দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত । প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও এত বিশালসংখ্যক পরিযায়ী পাখি কোথা থেকে এলো তা কেউ বলতে পারছে না । শুধু কাঞ্চনপুরের গ্রাম , জঙ্গল , পাহাড় নয় কাঞ্চনপুর সদর এলাকায়ও প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী পশু পাখির আনাগোনা ও কোলাহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে । প্রতিদিনই সকাল থেকেই বালি হাঁস , বক সহ নানা রং বেরঙের পাখি দেখা যায় । কাঞ্চনপুরে এত বিশাল সংখ্যক বালি হাঁস কোত্থেকে এলো তা কেউ বলতে পারছে না । জানা গেছে , বহু বছর আগে বিশেষ করে ষাট থেকে সত্তরের দশকে কাঞ্চনপুরের গ্রাম পাহাড়ে নানা রংয়ের পাখির আনাগোনা ছিল । ধনেশ পাখি রাজহাঁস , টিয়া , ময়না , শকুন গ্রাম পাহাড়ের গাছে মাঠে ময়দানে ও জলাশয়ে দেখা যেতো । তাছাড়াও কাঞ্চনপুরের জঙ্গলে হরিণ , শজারু , বন্য শূকর , খরগোশ প্রচুর দেখা যেত শেয়াল আর বন্য শূকরের উৎপাতে রাতে এলাকার মানুষ ঘুমোতে পারতো না । কিন্তু কাঞ্চনপুরের পাহাড় জঙ্গলে সীমাহীন গাছপালা কাটা এবং ক্রমাগত বন্যপ্রাণী শিকারের ফলে পাখি আর বন্য শূকর প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে । বন্য মুরগের সংখ্যাও অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে । বনাঞ্চল ধ্বংসের সাথে বন্যপ্রাণী শিকারিদের দৌরাত্ম্যে রং – বেরঙের পাখির সংখ্যাও কমে গেছে । দু’হাজার সালের পর থেকে কাঞ্চনপুরের বনে জঙ্গলে পশু পাখি কমতে শুরু করে । শিকারিদের উৎপাতে পশু পাখি কমতে থাকে । কিন্তু করোনা মহামারির জন্য আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বড়লোক অর্থবান থেকে সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি জীবনে আটকে থাকায় কাঞ্চনপুরের গাছে বনাঞ্চলে রং – বেরঙের পরিযায়ী পাখির দল ভিড় করেছে । ষাট – সত্তরের দশকের মতো পশুপাখির কূজন কোলাহল শোনা গিয়েছিল।
বালি হাঁসের দল এ গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যেত । কিন্তু বর্তমানে বন দপ্তর জগন্নাথের ভূমিকা নেওয়ায় পশু পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে । শিকারিদের উৎপাতে লুপ্ত হতে বসেছে হরিণ এবং বন্য মোরগ । একটা সময় কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চলে বন্য শূকরের উপদ্রব ছিল । কিন্তু শিকারিদের প্রতিনিয়ত শিকারের ফলে কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চলে বন্য শূকরও প্রায় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । অভিযোগ উঠেছে বন দপ্তরের বড় মাঝারি থেকে ছোটবাবুদের কোয়ার্টারে বন্য শূকরের মাংস পৌঁছে দিচ্ছে পশু শিকারিরা । ফলে তারা কাঞ্চনপুরের বনাঞ্চল থেকে অবাধে হরিণ মুরগি শুকর শিকার করতে পারছে । আশ্চর্যের বিষয় হলো , বন্যপ্রাণী শিকারিদের বিরুদ্ধে কোনও ধরণের ব্যবস্থা নিতে কাঞ্চনপুর বন দপ্তরের অনীহা । বনাঞ্চলে বন ধ্বংসের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী নিধনকারীদের সাথে বন দপ্তরের মিতালি কার্যত রহস্যজনক । এ বিষয়ে কাঞ্চনপুর বন দপ্তরের বিভাগীয় বন আধিকারিক সুমন মল্লের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি ।

Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

20 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

20 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

20 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

20 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

20 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

2 days ago