কালীপুজোর পরেও দেখা মিলল না শ্যামা পোকার!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-কালী পুজো আসছে,বছর কয়েক আগে পর্যন্ত তা টের পাওয়া যেত লক্ষ্মী পুজোর পর থেকে শ্যামা পোকাদের দৌরাত্মে। হেমন্তে আবির্ভাব হতো ওদের।বেশ কয়েক বছর ধরেই কমে আসছে শ্যামা পোকা,এ বছর প্রায় দেখাই গেল না।পতঙ্গবিদ থেকে পরিবেশবিদদের মনে প্রশ্ন খুব শিগগির কি বিলুপ্ত পোকামাকড়ের তালিকায় নাম উঠবে শ্যামা পোকার?
শ্যামা পোকার পোশাকি নাম গ্রিন লিফহপার।ধান উৎপাদনকারী রাজ্যেই এক মাত্র দেখা যায় এই শ্যামাপোকা।এদের প্রধান খাদ্য হল ধানগাছের রস। বাংলায় এই পোকাকে দীপাবলি উৎসবের বাহক বলেও ধরা হয়।আলোর উৎসের প্রতিই এদের ঝোঁক। আলো নিভে গেলে অনেক সময় শ্যামাপোকাকে খসে পড়তে দেখা যায়।
এই পোকা কিন্তু ধানের রোগ বয়ে আনে,ফলে ধানগাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।গাছের পাতার রং ফিকে হয়ে যায়।সেই জন্যই এই পোকা মারতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, শ্যামা পোকাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে এটা অন্যতম কারণ তো বটেই। এই গ্রিন লিফফপার পতঙ্গের দুটি প্রজাতি-নেফোটেটিক্স ভাইরেসেনস এবং নেফোটেটিক্স নিগ্রোপিকটাস।যা ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের অনেকের কাছেই এই পতঙ্গ ‘শ্যামা পোকা’ নামে পরিচিত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও সমুদ্র বিজ্ঞানী তুহিন ঘোষের মতে,শ্যামা পোকা বিলুপ্তির আরো একটি কারণ,জলবায়ুর বদল।খুব আর্দ্র পরিবেশ ছাড়া শ্যামাপোকা বাঁচতে পারে না। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বছর দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কম হওয়ায় শুষ্ক আবহাওয়ায় ক্রমেই কমছে শ্যামাপোকার সংখ্যা।তাছাড়া, কলকাতা এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ধানচাষ এখন আর হয় না নগরায়নের দৌলতে।সে কারণেও শ্যামা পোকার সংখ্যা কমছে।বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই -ধরনের সবুজ পোকার আক্রমণ দেখে অভ্যস্ত মানুষ গত কয়েক বছর ধরে, এই পোকা কোথায় গেল তানিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।এটা কিন্তু, কোনও পতঙ্গ চলে যাওয়ার ব্যাপার না। আসলে পতঙ্গ প্রজাতির ওপরই পরিবেশগত এবং অন্যান্য জটিল বাহ্যিক কারণ প্রভাব ফেলেছে। তাই শ্যামা পোকার মত এই সব পোকা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কৃষি বিভাগের প্রক্তন যুগ্মপরিচালক (কীটতত্ত্ব) ড. সন্তোষ কুমার রায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন,’সবুজ শাক বা ধান গাছের সঙ্গে যুক্ত একটি পোকা।তাই যেখানেই ধান বা শাক জন্মাবে, সেখানেই এই জাতীয় পোকাকে দেখতে পাওয়া যায়। ফলে উৎসবের মরসুমের সূচনা আসলে ফসলের উৎপাদনের সময়কে চিহ্নিত করে। সেই জন্য এই সব পতঙ্গকে ওই সময় বেশি দেখা যায়। এই জাতীয় পোকা প্রত্যক্ষভাবে ফসল খেয়ে বা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটিয়ে বহু ফসল নষ্ট করে থাকে।’
এই পোকা হল টুংরো রোগের বাহক।যে রোগ জমির ধানের ক্ষতি করে।ধানের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।পাতার রস খেয়ে তাকে বিবর্ণ করে দেয়। গাছের রস চুষে ধান খায়। সরাসরি রস চুষে বা পরোক্ষভাবে ভাইরাল রোগের সংক্রমণ ঘটিয়ে ফসলের ক্ষতি করে। বিশেষ করে এই সব পোকা টুংরো ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে ভাইরাসের প্রচণ্ড সংক্রমণের ফলে ফসল শুকিয়ে যায়। যা পশ্চিমবঙ্গের মতো ধান উৎপাদনকারী রাজ্যের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক হতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীদের আর একাংশের মতে, বাস্তব সত্য হলো শ্যামাপোকা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি,তবে এদের সংখ্যা আশঙ্কা জনকভাবে কমেছে।বিশেষত এ বছর শ্যামা পোকার একদমই দেখা মেলেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্যামাপোকার এই কমে যাওয়ার কারণ প্রকৃতির পরিবর্তন এবং বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ডানার’ প্রভাব। ধান চাষের মরসুমে শ্যামাপোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং অক্টোবরে এর উৎপাত শুরু হয়।সেপ্টেম্বরের নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক জায়গায় ধানগাছ এষ্ট হয়েছে।শ্যামাপোকা সাধারণত স্থানগাছের গোড়ায় জন্মায়, এবং ব আানগাছ নষ্ট হলে স্বাভাবিকভাবেই স্যামাপোকার সংখ্যা কমে যায়।পুজোর আগেই নিম্নচাপের বৃষ্টি এবং পুজোর পরে ঘূর্ণিঝড় ডানা ধানচাষে মারাত্মক ক্ষতি করেছে, যার প্রভাব পড়েছে শ্যামাপোকার ওপরেও।
প্রশ্ন আসছে, শ্যামাপোকা যদি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে কি বাস্তুতন্ত্রের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের অভিমত হলো, শ্যামা পোকা বিলুপ্ত হলেও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তেমনভাবে নষ্ট হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্যামা পোকা কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর এবং এদের সংখ্যা কমলে কৃষকদের লাভই হবে। কারণ, শ্যামা পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে চাষিদের প্রচুর কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, যা চাষিদের জন্য অতিরিক্ত খরচের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।শ্যামা পোকা কমে গেলে এই কীটনাশকের প্রয়োজনও কমে আসবে।এছাড়া, পরিবেশে এমন অনেক বন্ধু পোকা রয়েছে যারা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, লেডিবাগ পোকা, প্রার্থী মাকড়সা ও অন্যান্য প্রজাতির পোকা শ্যামাপোকার চেয়ে বাস্তুতন্ত্রে ভালো প্রভাব ফেলে এবং এরা ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শ্যামাপোকা কমে গেলে এই বন্ধু পোকাগুলি আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়া, পরিবেশে এমন অনেক বন্ধু পোকা রয়েছে যারা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, লেডিবাগ পোকা, প্রার্থী মাকড়সা ও অন্যান্য প্রজাতির পোকা শ্যামাপোকার চেয়ে বাস্তুতন্ত্রে ভালো প্রভাব ফেলে এবং এরা ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শ্যামাপোকা কমে গেলে এই বন্ধু পোকাগুলি আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ডিজিটাল ঘৃণা!!

বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছিল, চট্টগ্রামে বা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে কেউ একটি…

17 hours ago

নারিকেলকুঞ্জে ত্রিপুরা ট্যুরিজম প্রোমো ফেস্ট ২৪’র উদ্বোধন!

অনলাইন প্রতিনিধি :-৩ ডিসেম্বর বিকেলে ধলাই জেলার গন্ডাতুইসা মহকুমার নারিকেলকুঞ্জে ত্রিপুরা ট্যুরিজম প্রোমো ফেস্ট ২০২৪'র…

17 hours ago

এডিসির উন্নয়নে দেশের সরকার আমাদের সাথে একমত : প্রদ্যোত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেএডিসির মান উন্নয়নে সরাসরি অর্থ প্রদানের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের…

18 hours ago

আইসিইউ স্বল্পতা, বিভাগে পরিকাঠামো মেডিসিন সংকটে দুর্ভোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শতবর্ষের বেশি প্রাচীন রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভিএম নাম পরিবর্তনে আইজিএম হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোর…

18 hours ago

মিডডে মিলের অন্তর্জলি দিয়ে স্কুলের ভেতরে চলছে শ্রাদ্ধের রান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ঘটনাটি ঘটেছে কাটোয়ার গাফুলিয়া দাস পাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলেই মঙ্গলবার সকাল…

1 day ago

জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত “দৈনিক সংবাদ “

অনলাইন প্রতিনিধি :-" INDIAN CHANGEMAKERS AWARD 2024 " শীর্ষক জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত হলো দেশের উত্তর…

2 days ago