কাশ্মীরে সিঁদুরে মেঘ!!

 কাশ্মীরে সিঁদুরে মেঘ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবে।সেটাই স্বাভাবিক।মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণের আওতায় আনতে যাওয়ার ভয়াবহ পরিণতি আমাদের চোখের সামনে।

এমন আবহে জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে জনজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য বিল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।এই পদক্ষেপে মণিপুরের পুনরাবৃত্তি হবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও কালের গর্ভে।তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সরব হয়েছে জম্মুর গুর্জ্জর সমাজ।এরা বিজেপির বড় ভোট ব্যাঙ্ক। গুর্জ্জর সমাজের যুক্তি, একাধিক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হলে সরকারী চাকরি ও শিক্ষায় তারা বঞ্চিত হবে।গুর্জ্জর সমাজের সমর্থন না পেলে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে ভোটের ফল যে ভালো হবে না সে সত্য বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতারা।মণিপুরে সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে চলা সংঘর্ষে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রক্ত ঝরেই চলেছে।কয়েকশো মানুষ নিহত হয়েছেন।ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে জম্মু কাশ্মীরে না হয়,সেজন্য গত মাসের শেষ সপ্তাহে দলের সব স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ। গুর্জ্জর ও পাহাড়ি উভয় গোষ্ঠীর মানুষকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, সংরক্ষণ এমনভাবে করা হবে যাতে কারোর সমস্যা না হয়।চলতি বছরেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। পাশাপাশি পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনও নির্ধারিত হয়েছে সেখানে।এক্ষণে সতর্কবাণী একটাই, সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে ঘিরে জম্মু কাশ্মীরে যেন মণিপুরের পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মণিপুরের প্রেক্ষাপটেই কাশ্মীরে পাহাড়ি গোষ্ঠীকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি দেখা দরকার।ফলে এ নিয়ে বিতর্ক যে বাড়বেই তাতে তিলমাত্র সন্দেহ নেই।কী সেই বিতর্ক, তার অন্দরে যাওয়ার আগে একটি কথা স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়।বর্তমান জাতীয় রাজনীতির পরিসরে যে বিষয়গুলি দিয়ে জাতীয়তাবাদের আবেগ -যজ্ঞে ঘৃতাহুতি করা যায়, তার মধ্যে কাশ্মীর অঞ্চলটি অন্যতম।আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর রেখে আগামী কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি অতিপ্রয়োজনীয় কার্যসূচি হয়ে উঠবে জাতীয়তাবাদ। এই সূত্রেই যে কাশ্মীরকে চর্চার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসা হবে, তা বুঝতে তাত্ত্বিক হওয়ার দরকার নেই।কোন সময়ে কোন কাজটি করলে তার থেকে সর্বাধিক ফল লাভ করা যাবে, সব রাজনীতিকই সেই হিসাবে চলতে চান। রাজনীতিতে সবচেয়ে জরুরি সময়জ্ঞান।সাম্প্রতিক অতীতের নানা ঘটনাক্রম বলছে, এই কাজে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ধারেকাছে পৌঁছানোর দক্ষতা বা যোগ্যতা আর কোনও দলের নেই।ফলত যথার্থ সময় বুঝেই কাশ্মীর নিয়ে চারটি বিল সম্প্রতি আইনসভায় নিয়ে আসা হয়েছে,যাদের মূল উদ্দেশ্য ও বিধেয়,সেই রাজ্যটিতে বিধানসভা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া এবং অঞ্চলটির চরিত্রে বড় মাপের পরিবর্তন নিশ্চিত করা।এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর জম্মু ও কাশ্মীর তপশিলভুক্ত জনজাতি সংরক্ষণ (সংশোধনী), ২০২৩’ বিলটি।কোনও অঞ্চলের জনজাতি কারা, তার হিসাব একমাত্র সম্ভব সেই অঞ্চলের শাসকদের পরামর্শক্রমে। ১৯৮৯ সালের আগে জম্মু ও কাশ্মীরেও জনজাতিদের তালিকা ছিল না।১৯৮৯ সালে সেখানে প্রথমবার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি হয়। ১৯৯১ সালে সেটি সংশোধিত হয়। সেই তালিকাই এবার সংসদে নতুনভাবে সংশোধিত হল, যার মধ্যে চারটি নতুন জনজাতির নাম যুক্ত হয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ষোল। এর ফলে নিশ্চিতভাবেই এই জনজাতিদের সমর্থন পাবে বিজেপি।সেখানে ভোট হলে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার নব্বইটি আসনের মধ্যে সংরক্ষিত আসনগুলি আসবে তাদের দখলে।এমনিতেই ডিলিমিটেশনের ফলে জম্মুর আসন সংখ্যা অনেকাংশে বাড়বে, অন্যদিকে কমবে কাশ্মীরের আসনসংখ্যা। তার মধ্যে নবসংরক্ষিত পাহাড়ি, গুর্জর, পাদ্দারি, নাগসেনা জনজাতির সমর্থন ক্ষমতার পাল্লা একদিকে বেশি ঝুঁকি দিতে সক্ষম হবেই। এখানেই সমস্যা। সংরক্ষণ মোটেই ভোট পাওয়ার ছলাকলার নয়, একটি সাংবিধানিক অধিকার। মণিপুরের ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, সংরক্ষণের এই অমিতশক্তিধর অস্ত্রটি নির্বিচারে ব্যবহার করলে তা আক্ষরিক অর্থে আগুন ধরিয়ে দিয়ে একটি রাজ্যকে কার্যত দুইটি রাজ্যে খণ্ডিত করে দিতে পারে। আশা করা যায়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোনও মানুষই কাশ্মীরে মণিপুরের পুনরাবৃত্তি চাইবেন না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.