কাস্ট সেন্সাস!!
ভারতীয় রাজনীতিতে ফের একবার নব্বই দশকের মণ্ডল রাজনীতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে।নব্বই দশকে মণ্ডল রাজনীতির হাওয়া তুলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ভিশ্বনাথ প্রতাপ সিং(ভি পি সিং)।সেই জাতপাতের রাজনীতির যুগ পেরিয়ে ভারত যখন বিশ্ব অঙ্গনে নতুন করে আধিপত্য বিস্তার করতে চলেছে, ঠিক তখনই ভারতে ফের জাতপাতের রাজনীতিকে পরিকল্পিতভাবে হাওয়া দেওয়া হচ্ছে।আর এর পিছনে রয়েছে আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন।রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ফের একবার মণ্ডল রাজনীতির হাওয়া উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে এবার মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে কংগ্রেস দল। বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।পাঁচ মাস আগে কর্ণাটকে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রথম জাত গণনার দাবি তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে ওবিসি জনগোষ্ঠীর প্রতি ন্যায় বিচারের।ক্ষমতায় আসার পর রাহুলের সেই প্রতিশ্রুতি পালন হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও খবর নেই। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ অন্যতম।ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার কয়েকদিন আগে রাহুল গান্ধী মধ্যপ্রদেশে দলের কর্মসূচিতে জানিয়ে আসেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে দেশে ওবিসিদের প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য জাতসুমারি করাবে কংগ্রেস।কারণ, তাদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানেন না।রাহুল গান্ধীর মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার নিজের ওবিসি পরিচয় তুলে ধরে দাবি করছেন, ওবিসিদের জন্য তার জমানায় যত কাজ হয়েছে, তা আগে হয়নি।এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যারা চালান, সেই সরকারী সচিবদের নব্বইজনের মধ্যে মাত্র তিনজন ওবিসি।পাঁচ রাজ্যে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর,গত মঙ্গলবার ফের মধ্যপ্রদেশে ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন,কাস্ট সেন্সাস হচ্ছে দেশের এক্সরে।দেশের প্রকৃত চেহারা এর মধ্য দিয়েই ফুটে উঠবে। দেশে দলিত, ওবিসি, উপজাতিদের প্রকৃত সংখ্যা এর মধ্যে দিয়েই বেরিয়ে আসবে। যারা কি না খুবই অসহায় বোধ করছে।রাহুল আরও বলেছেন, কেন্দ্রকে বাধ্য করানো হবে কাস্ট সেন্সাস করানোর জন্য।শুধু কংগ্রেসই নয়, ইতিমধ্যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তার রাজ্যের কাস্ট সেন্সাস প্রকাশ করে জাতপাতের রাজনীতির পালে আরও হাওয়া দিয়েছেন।সেই হাওয়া দেশের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরাতেও এসে লেগেছে। বিভিন্ন মহলে এই নিয়ে আলোচনার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি ফের একবার পরিকল্পিতভাবে জাতপাত রাজনীতির ভাবাবেগ উসকে দিতে চাইছে।যাতে জাতপাতের সমীকরণে ভোটে ফায়দা তোলা যায়।তা না হলে কংগ্রেস জমানায় কাস্ট সেন্সাস হলো না কেন?শাসক দল বিজেপি এই অভিযোগ তুলে কংগ্রেসকে ইতিমধ্যে নিশানা করেছে।এটা ঠিক যে, মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে কংগ্রেস দশ বছর কেন্দ্রে সরকার চালিয়েছে।তখন কিন্তু কাস্ট সেন্সাস নিয়ে কংগ্রেসের মুখে একটি শব্দও শোনা যায়নি।এমন কি মনমোহন সরকারের আমলে উত্থাপিত মহিলা সংরক্ষণ বিলে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি মেনে নেয়নি কংগ্রেস।২০১০ সালে যে কারণেই তৎকালীন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব, আর জে ডি সভাপতি লালুপ্রসাদ যাদবরা বিলের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন।কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাস করা মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার সময় কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী মহিলা সংরক্ষণের মধ্যে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন। এর থেকেই স্পষ্ট দেশে নতুন করে কাস্ট সেন্সাসের জিগির তোলার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে রাজনীতি ও ক্ষমতা দখলের প্রয়াস।ক্ষমতায় ফিরলে তখন আর কারও মনেও থাকবে না।কেউ কোনও শব্দও করবে না। উদ্যোগ তো দূরের কথা। এটাই ভারতীয় রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট।