কীসের ইঙ্গিত?
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশেনর ঘোষিত সূচি অনূযায়ী ৩০ জানুয়ারী মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। ৩১ জানুয়ারী হবে মনোনয়ন পরীক্ষা। ২ ফেব্রুয়ারী মনোনয়ন প্রত্যাহারের অন্তিম দিন। এর পরই স্পষ্ট হবে,২০২৩ হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচনে কোন দলের কতজন প্রার্থী লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে এমন অনেক কিছু ঘটনা ‘সরবে ও নীরবে’ ঘটে গেছে, এবং ঘটে চলেছে তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মনে এই নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।
এই ঘটনার ঘনঘটাগুলি কীসের ইঙ্গিত? ত্রিপুরার রাজনীতিতে সিপিএম কংগ্রেস একে-অপরের চিরশত্রু। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে গিয়ে এবার নির্বাচনে দুই দল এক জায়গায় এসে আসন সমঝোতার কথা বলে ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়। যা রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই জোটের নীরব বিরোধিতা করে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আগেই নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন। পরবর্তীকালে যেটা ঘটলো, সেটাও রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সম্ভবত এই প্রথম বামেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরও সস্তা অজুহাত দিয়ে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে।
১০নং মজলিশপুর থেকে প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে এবং ২৬ আশারামবাড়ি কেন্দ্র থেকে প্রাক্তন মন্ত্রী অঘোর দেববর্মার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই দুই জনই মানিক সরকার গোষ্ঠীর। মানিকবাবু যেভাবে নীরবে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন, ঠিক সেইভাবেই নিজের অনুগামী দুই শীর্ষনেতাকে আড়াল করে নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।এবং এটা যে বেশ ইঙ্গিতবহ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।তবে কি কুড়ি বছরের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, তাঁর শাসনকালে যেভাবে নিজেকে দুর্নীতি থেকে দূরে রেখেছেন, নিজের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবিতে কখনো দাগ লাগাতে দেননি, এই ক্ষেত্রেও কি তিনি সেই নীতি অবলম্বন করলেন? তাই যদি হয়-এর প্রভাব কিন্তু ভোটের বাক্সেও পড়বে।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন দেখা গেল গোটা রাজ্যেই কি তথাকথিত বাম-কংগ্রেস জোটের হ য ব র ল অবস্থা। এটা জোট না ঘোঁট, এ নিয়েই সর্বত্র জল্পনা শুরু হয়েছে। আসন সমঝোতাও যদি হয়ে থাকে, তাহলে এই সমঝোতার নমূনা! যা দেখে গোটা রাজ্যে মানুষের হাসির খোরাক হয়ে উঠেছে সিপিএম-কংগ্রেস দুই দলই। বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতায় প্রথমে ১৩ আসন কংগ্রেসকে দেওয়া হয়। কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে ১৭ আসনে। এ নিয়ে ক’দিন ধরে চাপানউতোর বলে। সোমবার দেখা গেল কংগ্রেসকে দেওয়া আসনে সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে। যেমন আগরতলা, চড়িলাম, টাউন বড়দোয়ালী, বনমালীপুর, তেলিয়ামুড়া, ধর্মনগর এই সব কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিজেপিকে হঠাতে তথাকথিত জোট বা আসন সমঝোতার কী প্রয়োজন ছিলো? কী প্রয়োজন ছিলো জোটের নামে ঘোঁট তৈরি করার ? কী প্রয়োজন ছিলো মানুষের সামনে হাসির খোরাক হয়ে ওঠার?ভোটের আগেই তথাকথিত জোটের যে ছবি রাজ্যবাসী দেখলেন,ভোটের পর কী হবে? তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ত্রিপুরার রাজনৈতিক সচেতন মানুষ তা ভালো করেই জানেন। সব মিলিয়ে ভোটের আগে এইসব ইঙ্গিত কিন্তু মোটেও সুখকর নয়।