জম্মু-কাশ্মীরে সেনা নার্সিং কলেজের ওয়েবসাইট হ্যাক করল পাকিস্তানের হ্যাকাররা!!
কুইন আনারসকে বিশ্ববাজারমুখী করতে,কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে ১৩২ কোটির প্রকল্প গৃহীত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরার রাজ্যফল হিসেবে ঘোষিত কুইন ভ্যারাইটি আনারস আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। রাজ্যের এই মিষ্টি ও সুস্বাদু ফলটিকে বিশ্ব দরবারে জনপ্রিয় করে তুলতে এবার রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথ উদ্যোগে ১৩২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকার প্রকল্পে এগিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার মহাকরণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মধ্যে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ত্রিপুরার কুইন আনারসকে ‘স্টেট ফুট’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পাশাপাশি এই ফলটি ভূগোল নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি লাভ করে। এই ঘোষণার পর থেকেই কুইন আনারসকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার প্রয়াস শুরু হয় এবং এবার তারই এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রূপে ধরা দিল এই প্রকল্প।
মন্ত্রী রতনলাল নাথ এই বৈঠকে বলেন, ‘ত্রিপুরার আনারস শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি সম্পূর্ণ অর্গানিক।এর মিষ্টতা ও স্বাদ অন্য ফলের থেকে স্বতন্ত্র।এই ফলকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরতে আমাদের চাষিদের পাশে থাকতে হবে।’ তিনি জানান, আনারস চাষে হরমোন ব্যবহারের সঠিক প্রয়োগ, চাষের প্রসার এবং বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি।
এই ভিডিও বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফণীভূষণ জমাতিয়া, ভূমি ও উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা দীপক দাস এবং নাগিছড়া উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ, যিনি কুইন আনারসের গুণগতমান, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বাজার সম্ভাবনা নিয়ে বিশদ উপস্থাপনা করেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আনারস চাষের আধুনিকীকরণ ও আন্তর্জাতিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ভাবনা হওয়া উচিত বাজারকেন্দ্রিক।এজন্য প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে যাতে চাষিদের আয় বাড়ানো যায়।’তিনি আনারসের প্যাকেজিংয়ে বাঁশের ব্যবহারের পরামর্শ দেন যা একদিকে যেমন ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্পকে প্রসার দেবে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব ও আকর্ষণীয় প্যাকিজং তৈরি হবে। মন্ত্রী রতনলাল নাথ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ত্রিপুরা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘আপনার সরাসরি পরিদর্শন রাজ্যের চাষিদের মনোবল বাড়াবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনবে।’ জবাবে মন্ত্রী সিন্ধিয়া ত্রিপুরায় এসে আনারস বাগান ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বর্তমানে রাজ্যে ২০২৪-২৫অর্থবছরে ১২,০৯৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হচ্ছে এবং প্রায় ১,৭৭,৪৩৩ টন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। কুইন ভ্যারাইটি ছাড়াও কিউ ভ্যারাইটি আনারস উৎপাদিত হচ্ছে যার থেকে নির্যাস নিয়ে ‘লাইভ সিরাপ’ কৌটোবন্দি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এই সব আনারসই সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক মুক্ত ও জৈব চাষ পদ্ধতিতে উৎপন্ন।
মন্ত্রী রতনলাল নাথ আরও জানান,বেকার যুবক-যুবতীরা আনারস চাষে যুক্ত হলে তারা লাভবান হতে পারেন এবং একে ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবেও গ্রহণ করতে পারেন। ‘রাবার ও চাষ পরিবেশের ক্ষতি করছে, সেখানে আনারস চাষ পরিবেশবান্ধব এবং সহজে পরিচালনাযোগ্য’,বলেন তিনি। ড্রোন প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আনারস চাষে নজরদারি ও গুণগতমান রক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে
সময়মতো কীটনাশক প্রয়োগ, ফলনের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং বাজার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে বলে রাজ্য সরকার মনে করছে।
আলোচনার শেষে জানা যায়, রাজ্য সরকার খুব শীঘ্রই দিল্লীতে কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে বসে এই প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা নির্ধারণ করবে। ত্রিপুরার কুইন আনারস বিশ্বজুড়ে পরিচিত করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা নি:সন্দেহে রাজ্যের কৃষকদের জীবনে এক নতুন আশার আলো জ্বালাবে।
ত্রিপুরার কুইন আনারস শুধু একটি ফল নয়, এটি রাজ্যের গর্ব। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটতে চলেছে, যার নেপথ্যে রয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যাদের নেতৃত্বে নতুন দিগন্তে পা রাখতে চলেছে ত্রিপুরার কৃষি। এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষ করে আনারস চাষিরা এই উদ্যোগে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত বলে জানা গেছে।