কূটনৈতিক অস্বস্তি!

 কূটনৈতিক অস্বস্তি!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রায় সপ্তাহখানেক আগে দিল্লী ও মুম্বাইয়ের বিবিসির অফিসে ৬০ ঘন্টাব্যাপী তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলো ভারতের আয়কর দপ্তর। যদিও ভারতীয় আয়কর দপ্তর থেকে বেশ জোরের সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, এটা কোনও অভিযান বা তল্লাশি ছিলো না। করছাড় সংক্রান্ত বেশকিছু বেনিয়ম করেছিলো বিবিসি। আর দপ্তর সেই কারণেই আয়কর “সমীক্ষা” করতে সেখানে লোক পাঠিয়েছিলো। ঘটনা তল্লাশি অভিযানই হোক কিংবা সমীক্ষা, বিবিসির অফিসে ভারতের আয়কর দপ্তরের এই আচমকা তদারকি এবং প্রায় ৬০ ঘন্টাব্যাপী সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা যে কোনওভাবেই লঘু বিষয় নয় সেটা দিন যত যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে।

অর্থাৎ বিবিসির দিল্লী অফিসে এবং মুম্বাই অফিসে আয়কর দপ্তরের এই তৎপরতা কার্যত এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের জন্য যথেষ্ট অস্বস্তি তৈরি করতে চলেছে সেটা কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণটা হলো ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের সরকার এই গোটা বিষয়টির উপর একেবারে শুরু থেকেই বেশ নজর রাখছিলো। আর সে কারণেই বিবিসি অফিসে ভারতের আয়কর অভিযানের ১ সপ্তাহ পর এই বিষয়ে মুখ খুললো ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটেনের সংসদে এই সম্পর্কিত একটি বিতর্ক চলাকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষের একজন এমপি ডেভিড রাটলে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ব্রিটিশ সরকার বিবিসির পাশে আছে।

কারণ সরকার এই বিবিসির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে। তাছাড়া বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ সরকার চায় বিবিসির সম্পাদকীয় স্বাধীনতা পাক। সংসদে বিতর্ক সভায় অংশ নিয়ে ডেভিড মনে করিয়ে দেন, বিভিন্ন সময়ে বিবিসি কনজারভেটিভ এবং লেবার পার্টিরও সমালোচনা করেছে। ডেভিড বলেন, এই স্বাধীনতাই হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের আসল প্রাণ। আর আমরা গোটা পৃথিবীর সমস্ত বন্ধুকে এই স্বাধীনতার বিষয়টি জানিয়ে দিতে চাই, যার মধ্যে ভারত সরকারও রয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই সংবাদমাধ্যমকে কোনও ভয় ছাড়া কাজ করতে দেওয়া হোক।
ডেভিড রাউলের এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি যে একজন ব্যক্তি সাংসদের বক্তব্য নয়, বরং বিবিসি ইস্যুতে এটাই যে ব্রিটিশ সরকারের আহ্বান সেটা পরিষ্কার।

কারণ তিনি শুধু একজন সাংসদই নন, বরং ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষের একজন প্রতিনিধি। পাশাপাশি ব্রিটেনে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে তিনি যে গর্বিত সেটাও তিনি উল্লেখ করতে ভুল করেননি। স্বাভাবিক কারণেই ব্রিটেনের সংসদে দাঁড়িয়ে সরকার পক্ষের একজন এমপির এই দৃঢ়চেতা বক্তব্য আসলে যে পরোক্ষে সরকারেরই ভাষ্য সেটা অনুধাবন করার জন্য কূটনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন সরকারের এই বার্তা যে কার্যত মোদি সরকারের জন্য অস্বস্তি বাড়াবে তা বলাই বাহুল্য। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে সেখানে জাতি দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ২৫ বছর আগের সেই সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা তুলে ধরে সম্প্রতি দুই পর্বে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিল বিবিসি। যার সম্প্রচার ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সেই থেকেই শুরু হয় বিবিসির সঙ্গে চাপানউতোর। এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বাইরে। কূটনৈতিক দুনিয়ায় পৃথক পৃথকভাবে এর প্রতিক্রিয়াও পরিলক্ষিত হয়। খোদ ব্রিটেনের শাসকদলের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে বেশ কজন এমপিকে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনকে খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর স্বপক্ষে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। অথচ এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই বিবিসির ভারতস্থিত দুই অফিসে আয়কর অভিযানের ঘটনা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নতুন মাত্রা ছড়িয়ে দেয়। অভিযানের ১ সপ্তাহ বাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সাংসদরা যখন সংশয় প্রকাশ করে বলেন, একটি তথ্যচিত্র তৈরির পরই এই আয়কর অভিযানের ঘটনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে— তখন বুঝতে হবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এসব সংবেদনশীল ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা কার্যত ভারতের জন্য বিশেষ করে মোদি সরকারের জন্য কূটনৈতিক অস্বস্তির মাত্রাই বাড়িয়ে তুলছে। যা কোনওভাবেই ভারতের দীর্ঘ ঐতিহ্য, পরম্পরা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পক্ষে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.