কেজরির মুক্তি ও ইডি সিবিআই!!

 কেজরির মুক্তি ও ইডি সিবিআই!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ফের জামিনে মুক্ত হলেন জেলবন্দি দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ১৭৭ দিন পর জেলমুক্ত হলেন তিনি।গত ২৩ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। পরে লোকসভা ভোট চলাকালীন মে মাসে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।২ জুন ফের তিনি জেলে যান। এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার জামিন হয়।দিল্লীর আবগারি দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু না সিবিআই,না ইডি- তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত জুতসই কোনও প্রমাণ খাড়া করতে পারেনি তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ- তাকে জামিন দিতে হবে।
শুধু তাই নয়,এই মামলায় সাম্প্রতিক কালে জামিন পেয়েছেন আপ নেতা সঞ্জয় সিং,দিল্লীর প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া,তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা প্রমুখ।ইডি তাদের বিরুদ্ধে কোনও জুতসই ইস্যু খাড়া করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়েই সুপ্রিম কোর্টকে তাদের জামিন দিতে হয়েছে।এবারে কেজরিওয়ালের জামিন দিতে গিয়ে সিবিআইকে রীতিমতো তুলোধোনো করেছে সুপ্রিম কোর্ট।বহুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছিল।বিশেষ করে মোদি জমানায়।বিরোধীদের উপর সিবিআই,ইডি জুজু দেখিয়ে সরকার ভাঙানো, দল ভাঙানো ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের।সুপ্রিম কোর্ট এবার সিবিআইকে ‘তোতাপাখি’ হিসাবে সম্বোধন করায় এবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি যে শাসকের অঙ্গুলিহেলনে চলে তা বুঝতে কারও আর বিশেষ বাকি রইল না।কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।তাকেও ইডি গ্রেপ্তার করেছিল জমি দুর্নীতি মামলায়।কিন্তু কোনও জুতসই প্রমাণ বা চার্জশিট জমা দিতে ব্যর্থ ইডি।ফলে সুপ্রিম কোর্ট তাকেও জামিন দিয়েছে।
এর আগেও আপ নেতা সঞ্জয় সিংকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।তার বিরুদ্ধেও কোনও প্রমাণ খাড়া করতে পারেনি ইডি।তেমনি মণীশ সিসোদিয়াকেও সম্প্রতি জামিন দিতে বাধ্য হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি আবগারি মামলায় তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতাকেও জামিন দেওয়া হয়েছে।প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিবিআই বা ইডি কোনও কিছুই প্রমাণ করতে পারছে না।ফলে তারা জামিন পেয়ে যাচ্ছে।সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জামিন দিতে গিয়ে সিবিআইকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছে।সুপ্রিম কোর্ট বলেছে,সিবিআই যে তোতাপাখি নয়,তা তাদেরই প্রমাণ করে দেখাতে হবে। সুতরাং প্রকাশ্যে সিবিআইকে ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট বিরোধীদের এতদিনকার যে অভিযোগ একেই মান্যতা দিল কার্যত তা বলা যায়।
মোদি জমানায় দীর্ঘদিন ধরেই যথেচ্ছভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছে।লোকসভা ভোটের মুখে ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার অভিযোগ উঠেছিল।সে সময় কংগ্রেস অভিযোগ করে যে,ভোটে যাতে কংগ্রেস না লড়তে পারে সে ব্যবস্থাই করেছে কেন্দ্রের শাসক।শুধু তাই নয়, যেখানে যেখানে বিরোধী দলের সরকার সেই সরকারের নেতা মন্ত্রীদের পেছনে ইডি, সিবিআই লেলিয়ে দেবার বহু উদাহরণ রয়েছে।হিমাচল থেকে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড থেকে দিল্লী- সর্বত্রই বিরোধীদের ঘরে ইডি,সিবিআইর অভিযান হয়েছে।অন্যদিকে, নেতাদের দল ভাঙিয়ে আনার জন্য সিবিআই, ইডিকেও অপব্যবহারের ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।তাই ইডি, সিবিআইর বিশ্বাসযোগ্যতাও দিন দিন কমছে।এমনকী ইডি, সিবিআইর তদন্ত এবং এর পরবর্তীতে সাজার হারও অত্যন্ত নগণ্য।এই অবস্থায় ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি কেন্দ্রীয় এজেন্সির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সাধারণ্যে প্রশ্ন রয়েছে।প্রশ্ন উঠেছে, শাসকের ঘরের কোনও নেতা মন্ত্রীর ঘরে কি ভুলেও ইডি, সিবিআইর পা পড়েছে? তারা সবই কি ধোয়া তুলসীপাতা?
সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি কেজরিওয়ালের জামিন দিতে গিয়ে সিবিআইকে তুলোধোনো করেছে।কেননা, এর আগে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের – বিরুদ্ধে আবগারি মামলায় তদন্ত করছিল ইডি এবং ইডি তাকে গ্রেপ্তার করে।কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লী হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করার পর সিবিআইর অপর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং জামিনের বিরোধিতা করা হয়। অবশেষে বেশ কিছুদিন তাকে তিহারে কাটাতে হয়, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের জামিনের নির্দেশ দেবার আগ পর্যন্ত।সুপ্রিম কোর্ট তাই সিবিআইকে তিরস্কার করেই বলেছে, কেজরিওয়াল যাতে জেলের বাইরে না আসতে পারেন সেটাই উদ্দেশ্য ছিল সিবিআইর। ইডির গ্রেপ্তারির পর সিবিআই তাকে এ জন্যই গ্রেপ্তার করেছিল।
এবার তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা তোতাপাখি নয়।এই প্রমাণের দায়িত্ব তাদেরই।কেন্দ্রীয় সরকার তা প্রমাণ করবে না। সুতরাং নাক কান কাটা গেলে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির যাবে।আদৌ কি ইডি, সিবিআই এর থেকে কিছু শিক্ষা নেবে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.