বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে কৃষি দপ্তরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান
সময়ে শুধু ভারতবর্ষেই নয়, গোটা পৃথিবীতে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ করা বড় ধরনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে এই সমস্যা সব থেকে বেশি।বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে মাটির নিচে যে জল আছে, তা বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়াভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে দেশে ভূগর্ভস্থ জল সংকট দেখা দেবে।শুধু তাই নয়, দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে মরুভূমি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।ভারত সরকারের সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান রিপোর্টে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে ভূগর্ভস্থ
জল উত্তোলনের হার ৫৯ শতাংশ।এই হার দ্রুত বাড়ছে।এর মধ্যে কয়েকটি রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের হার ১০০ শতাংশ। ওই রাজ্যগুলি হলো হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান। এছাড়া কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ এই রাজ্যগুলির ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের হার প্রায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গে ৪৪ শতাংশ, আসাম ১৩ শতাংশ এবং ত্রিপুরা প্রায় ১০ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার একদিকে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ করার পাশাপাশি কৃষিজমিতে জলসেচ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশেষ যোজনা হাতে নিয়েছে।এটি হলো, প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঁচাই যোজনা(পিএমকেএসওয়াই)। এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হলো, জলাশয় উন্নয়ন, ভূমি সংরক্ষণ, ভূমির ক্ষয়রোধ করা, জলের সঠিক ব্যবহার, নতুন জলাশয় তৈরি, ভূমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, ঝরনার জল ধরে রাখা, গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জিং স্ট্রাকচার নির্মাণের মাধ্যমে সেচের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা, গ্রামীণ কৃষকদের জীবিকা উন্নয়নের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, জলাশয় তৈরির মাধ্যমে কৃষিজমির সেচের চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি।
ত্রিপুরা রাজ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে কৃষি দপ্তর। এর জন্য কৃষি দপ্তর একটি ‘স্টেট লেভেল নোডাল এজেন্সি’ গঠন করে প্রকল্প রূপায়ণের কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পটি রাজ্যে শুরু হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে, শেষ হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। অর্থাৎ চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষ হবে। হাতে আছে আর মাত্র দেড় মাস। এই প্রকল্প রূপায়ণে ভারত সরকার রাজ্যকে ৮৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মঞ্জুরি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার হাতে পেয়েছে ১৬১ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। প্রকল্প রূপায়ণের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ ৯ ফেব্রুয়ারী দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল এজেন্সির সমস্ত আধিকারিকদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। সোমবার এই বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী শ্রীনাথ জানিয়েছেন, রাজ্যের ৮টি জেলার ১৮ ব্লকে ৪৮টি মাইক্রো ওয়াটারশেড প্রজেক্ট আছে। ২০২১-২২ থেকে এই সময়ের মধ্যে টার্গেট ছিল ৭০০টি পুকুর খনন করার। আজকে পর্যন্ত ৬৫০টি পুকুর খনন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫০টি পুকুর খননের কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে। চেকড্যাম ২০০টি নির্মাণ করার টার্গেট ছিল, আজকে পর্যন্ত ১২৭টি নির্মাণ করা হয়েছে। অমৃত সরোবর ৫০টি করার কথা ছিল, ৪৪টি করা হয়েছে। ৮০০ হেক্টর ভূমিতে প্ল্যান্টেশন করার টার্গেট ছিল, ৭৪২ হেক্টর পর্যন্ত প্ল্যান্টেশন করা হয়েছে। ১০০০ স্বসহায়ক গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার টার্গেট ছিল, এখন পর্যন্ত ৬২৫টি গ্রুপকে ২৫,০০০ টাকা করে এবং ৪৫০টি গ্রুপকে ৫০,০০০ টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১২৫০ জনকে ১৫ এবং ২০ হাজার টাকার শূকর ছানা, পোল্ট্রি, মাছের পোনা, বাছুর ইত্যাদি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, রাজ্যে ২৫০টি ঝরনা ছিল। বর্তমানে অনেকগুলি শুকিয়ে গেছে, কিছু শুকিয়ে যাওয়ার পথে। এগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। একটি সার্ভে করে দেখা গেছে, একটি মরশুমে রাজ্যে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তাতে এক কানি জমির উপর দিয়ে ৭০ লক্ষ গ্যালন জল গড়িয়ে যায়। এই জল যদি নানাভাবে ধরে রাখা যায়, তাতে ভূগর্ভস্থ জলের সংকট অনেকটাই নিরসন করা যাবে। মন্ত্রী জানান, ভারত সরকারের এজেন্সির সার্ভে মোতাবেক প্রকল্প রূপায়ণে ত্রিপুরা ভালো জায়গায় রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে পারলে বকেয়া অর্থও রাজ্য পাবে। শুধু তাই নয়, রাজ্যে অর্গানিক চাষের সাফল্য দেখে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক রাজ্যের কৃষি দপ্তরকে প্রাকৃতিক চাষের (ন্যাচারেল ফার্মিং) দায়িত্ব দিয়েছে। আগামী দুই বছরে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ন্যাচারেল ফার্মিং করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।