কোটার মধ্যে কোটা!!

 কোটার মধ্যে কোটা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সম্প্রতি ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে। এর রেশ এখনও চলছে। আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই প্রখর ছিল যে, একসাথে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এই আন্দোলন মোকাবিলা করতে গিয়ে হাসিনা সরকারকে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। আন্দোলনের জেরে দুশোর উপর প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। সরকারী সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। একদিকে আন্দোলনকারীদের হিংসা, অন্যদিকে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলী, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চার্জ-সব মিলিয়ে গোটা বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসিনা সরকারকে গোটা দেশ জুড়ে কারফিউ জারি করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও নামতে হয়েছিল। যদিও, এই কোটা (সংরক্ষণ) বিরোধী অহিংস আন্দোলন, এক সময় চুড়ান্ত ভারত বিরোধী সহিংস আন্দোলনে পরিণত হয়ে যায়।যে কারণে পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করে। উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলি সুযোগ বুঝে আন্দোলনে ঢুকে পড়ে এবং গোটা বিষয়টিকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যায়। এখনও বাংলাদেশ অশান্ত।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যখন কোটা নিয়ে এই পরিস্থিতি, তখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতেও কোটা নিয়ে নানা মহলের নানা অভিমত শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের সুপ্রিম কোর্ট দেশে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিভুক্তদের সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় চলতি সংরক্ষণ নিয়ে ১ আগষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে যা নিয়ে গোটা দেশ জুড়েই জল্পনা শুরু হয়েছে।দেশের শীর্ষ আদালত তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিদের মধ্যে সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে শ্রেণিবিন্যাসে সায় দিয়েছে।সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের ছয়জন বিচারপতিই এসসি, এসটি কোটা পুনর্বিন্যাসের পক্ষে রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘কোটার মধ্যে কোটা’। পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মধ্যে প্রকৃত অর্থে যারা আরও পিছিয়ে রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে, তারা যাতে শিক্ষা ও চাকরিতে অধিক সুবিধা পায়, এর জন্যই এই রায় বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই এসসি, এসটিদের মধ্যে উপশ্রেণীকে সংরক্ষণ দেওয়ার সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে রাজ্য সরকারগুলির হাতে। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও আরও বলা হয়েছে, ‘উপশ্রেণী চিহ্নিতকরণের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সমতার নীতি লঙ্ঘন করছে না। সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে এসসি, এসটিদের মধ্যে আলাদা শ্রেণিবিন্যাস করে আলাদা করে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই গুরুত্বপূর্ণ রায় মোতাবেক এখন এসসি, এসটিদের মধ্যে ‘ক্রিমি লেয়ার’ খুঁজে বের করে চিহ্নিত করতে হবে।পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে যারা বিভিন্নভাবে সুবিধা ভোগ করেন অথবা বিভিন্নভাবে সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের ‘ক্রিমি লেয়ার’ বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। তবেই সমতা আনা সম্ভব বলে মনে করেন সাত বিচারপতির মধ্যে দুই বিচারপতি গাভাই এবং বিক্রম নাথ। বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল মনে করেন, ‘একটি প্রজন্মেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত সংরক্ষণ’। তার মতে, সংরক্ষণের মাধ্যমে যদি কেউ উচ্চতর পদে থাকেন, তাহলে দ্বিতীয় প্রজন্ম সংরক্ষণের আওতায় পড়বে না। বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মাও সমর্থন করেন এই মত। নীতি কেমন হওয়া উচিত, বিচারপতি গাভাই এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এসসি এবং এসটি ক্যাটাগরির প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে যিনি সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন, তাঁর সন্তানেরা সেই সুবিধা পাবেন না। যাঁরা সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের এসসি এবং এসটি হিসাবে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে, এসসি বা এসটি অন্তর্ভুক্ত একজন আইএএস, আইপিএস অফিসারের সন্তান আর একই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত একজন গ্রাম পঞ্চায়েতে স্কুল পড়ুয়া কি একই সুবিধা পেতে পারে? তাই এসসি, এসটি উভয় ক্যাটাগরির শ্রেণি বিভাজন, অর্থাৎ ‘কোটার মধ্যে কোটা’র সম্মতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? এসসি, এসটিদের মধ্যে ‘ক্রিমি লেয়ার’ খুঁজে বার করার দাবি দীর্ঘদিনের। কেননা, সংরক্ষণের সুবিধা যারা পেয়েছে, তাঁরা এবং তাদের সন্তানেরাই বারবার সেই সুবিধা ভোগ করছে। আর যাঁরা বঞ্চিত, তাঁরা সংরক্ষণের আওতায় থেকেও বঞ্চিতের তালিকায় রয়ে গেছে।সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এখন রাজ্যগুলি কী পদক্ষেপ নেয়?কোন্ পথে হাঁটে সেটাই এখন দেখার। আরেকটা বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। কোটা দিয়ে মেধাকে অবরুদ্ধ করে বেশিদিন রাখা যাবে না। জলজ্যান্ত উদাহরণ বাংলাদেশ। ভারতেও এই আওয়াজ উঠলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.