কোন্ অঙ্কে ৪০০ পার!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ইতিমধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমে পড়েছে দেশের সবগুলি রাজনৈতিক দল।প্রচারের নানা কৌশলকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়েছে সব দলই।একেবারে বুথ স্তর থেকে দলীয় সংগঠন মজবুত করা, জনতা জনার্দনের মন জয় করা,কোনও কিছুতেই খামতি রাখতে চাইছে না শাসক-বিরোধী উভয় শিবির। এক্ষেত্রে দেশের শাসক শিবির অনেকটাই এগিয়ে আছে।এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।একেবারে বুথ লেভেল থেকে প্রযুক্তির চুড়ান্ত ব্যবহার-সবেতেই গেরুয়া শিবির অন্যদের তুলনায় কিছুটা হলেও এগিয়ে।শুধু তাই নয়,লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও নয়া স্লোগান তুলে ময়দানে হাজির হয়েছে শাসক শিবির।এবার তাদের স্লোগান হচ্ছে ‘আব কি বার চারশ পার,তিসরি বার মোদি সরকার’।এই স্লোগানের বাংলা তর্জমা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে স্লোগানের সুর ততই তেজি হচ্ছে।মোদ্দা কথা,এবার লোকসভা নির্বাচনে চারশ আসন জয়ের স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির।এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩৭০ আসন জয়ের দাবি করছে।বাকি আসন এনডিএ জোটের অন্য শরিক দলগুলো থেকে আসবে বলে আশাবাদী পদ্মশিবির।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রতিটি ভাষণে বিজেপিকে ৩৭০ আসনের টার্গেট বেঁধে দেওয়ার কথা বলছেন।অন্যদিকে এনডিএ জোটকে সব মিলিয়ে ৪০০-এর বেশি আসন আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে,কোন্ শক্তির উপর নির্ভর করে বিজেপির এই স্লোগান? আদৌ কি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই স্লোগানের?নাকি স্লোগান শুধু স্লোগানই থেকে যাবে? বিজেপি কি এই লক্ষ্যে অর্জন করতে পারবে?রাজনৈতিক মহলে এখন এই সব প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে।এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। তাকাতে হবে পরিসংখ্যানের উপর।পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪১৪টি আসন।সেবার কংগ্রেস পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কোনও লোকসভা নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের এটিই এখন পর্যন্ত সেরা পারফরম্যান্স বলে মনে করা হয়।এরপর গঙ্গা যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে অনেক উত্থানপতন হয়েছে।প্রায় সাড়ে তিন দশক পর,২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এবার একাই ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে।আর এনডিএ জোটের আসন সংখ্যার টার্গেট ৪০০ পার।
বিজেপির দাবি,এই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে যেন তেন প্রকারেণ ৫০ শতাংশ ভোট পদ্ম শিবিরের ঝুলিতে পুরতেই হবে।তবেই সম্ভব।বিজেপির দাবি,২০০৯ সালে পর থেকে তাদের ভোট উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে,২০০৯ সালে ১৮.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ১১৬টি আসন জিতেছিল বিজেপি।২০১৪ সালে ৩১.৩৪ শতাংশ ভোট শেয়ার নিয়ে ২৮২ টি আসনে জয়ী হয়ে একক ভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২৭৩ টি আসনের গন্ডি টপকে যায়।২০১৯ সালে ৩৭.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ টি আসনে জয় হাসিল করে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন।
অন্যদিকে,কংগ্রেসের ভোট শেয়ার ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ক্রমশই নিম্নমুখী হয়েছে।২০১৯ সালে ভোট শেয়ার মাত্র দুই শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেয়েছিল কংগ্রেস।২০১৯ সালে এনডিএ জোটের ভোট শেয়ার ছিল ৩৮.৪ শতাংশ।এতে জোট জয়ী হয় মোট ৩৬২ টি আসনে।এবার আসা যাক ৩৭০ এবং ৪০০ পার করার অঙ্কে।গত পাঁচ বছরে বিজেপির শক্তি আরও বৃদ্ধি হয়েছে।এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।মজবুত হয়েছে সংগঠন।এর উপর ভিত্তি করে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যদি বিজেপি মোট ভোটের ৫০ শতাংশ নিজেদের পকেটে পুরতে পারে,তবেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে,২০১৯-এর ভোটে ৭২ টি আসনে বিজেপি ছিল দ্বিতীয় স্থানে।বিজেপি’র দাবি এবার ৭২টির মধ্যে অন্তত ৪০ টি আসনে দল জয়ী হবে।২০১৯ নির্বাচনে পদ্ম শিবির যে ভোট পেয়েছিল,এবার যদি দুই থেকে তিন শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে, তাহলে বিজেপি একাই জয়ী হতে পারে ৩৫০ থেকে ৩৫৫ আসনে।আর যদি ৫০ শতাংশে পৌঁছতে পারে, তাহলে ৪০০ পারের স্লোগান বাস্তবায়ন হতে পারে।কাজটা অনেক কঠিন।তবে সব প্রশ্নের জবাব মিলবে ৪ জুন।ততদিন অপেক্ষা তো করতেই হবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

11 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

11 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

12 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

12 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

13 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

13 hours ago