কোর্টের নির্দেশে শিল্প নিগমে চেয়ারম্যান , এমডির রুম সিল

 কোর্টের নির্দেশে শিল্প নিগমে চেয়ারম্যান , এমডির রুম সিল
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা বোধজংনগর শিল্পনগরী পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । আর একই দিনে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের ( টিআইডিসি ) চেয়ারম্যান টিঙ্কু রায় , নিগমের এমডি , অ্যাকাউন্টস অফিসার এবং চেয়ারম্যান ও এমডির পিএ – এই চারজনের চেম্বার তালা দিয়ে সিল করে দিয়েছে আদালত । ঘটনা ঘিরে রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড ! জমি অধিগ্রহণ মামলায় আদালতের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও , সঠিক সময়ে জমির মালিককে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করা হয়নি । যার খেসারত দিতে হলো টিআইডিসিকে । আদালত স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছে । সেই নির্দেশ মোতাবেক শনিবার চারজনের চেম্বার তালা দিয়ে সিল করে দিয়েছে । জানা গেছে , ২০১৬ সালে জনৈক গৌতম কুমার দাস এবং অন্যদের দায়ের করা মামলায় সংশ্লিষ্ট আদালত গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং ক্ষতিপূরণের নির্দেশ প্রদান করে ।

কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান না করায় জমির মালিক পুনরায় আদালতে আদেশ কার্যকর করার জন্য পৃথক একটি মামলা দায়ের করেন ২০২০ সালে । কিন্তু বিস্ময়ের ঘটনা হলো , ২০১৯ সালে এলএ কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে টিআইডিসি ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল মামলা দায়ের করে । আরও বিস্ময়ের ঘটনা হলো , ওই আপিল মামলার সাথে পৃথক ভাবে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশের জন্য কোনও আবেদন করেনি টিআইডিসি । এরমধ্যে টিআইডিসি গত ৩১ মার্চ ২০২২ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে ১ কোটি ২৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার চেক জমা দেয় । সেই সাথে ২০২১ সালে আপিল মামলা করার প্রায় এক বছর পর পৃথকভাবে স্থগিতাদেশের আবেদন জানায় । সেই আবেদন এখনও শুনানি হয়নি । কিন্তু এর আগেই গত ১৮ জুলাই এল এ কোর্ট এক্সিকিউশন মামলায় জমির মালিককে ৪ কোটি ৭৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭১৫ টাকা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করে । সেই নির্দেশও কার্যকর করা হয়নি । যার জেরে শনিবার ২০ আগষ্ট আদালতের নির্দেশে টিআইডিসির চেয়ারম্যান সহ চারজনের চেম্বার তালা দিয়ে সিল করে দেওয়া হয় ।

উল্লেখ্য , এই জমি অধিগ্রহণ মামলা নিয়েও ত্রিপুরা শিল্প নিগমে বড় ধরনের দুর্নীতি চক্র গজিয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকেই অভিযোগ পাওয়া গেছে । রাজ্যে শিল্প উন্নয়নের নামে শিল্প নিগমে গত সাড়ে চার বছর ধরে যে দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে , তার তথ্যমূলক সংবাদ দৈনিক সংবাদে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে । যার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা ভিজিলেন্স তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু সেই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি । রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর এমন এক অযোগ্য ব্যক্তিকে নিগমের মাথায় বসানো হয়েছে , যে নাকি শুধু কমিশন বাণিজ্যটাই ভালো বোঝে বলে অভিযোগ । এমডি থেকে শুরু করে কারোরই কিছু করার ক্ষমতা নেই । আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অযোগ্য লোকের হাতে পড়ে লাভজনক সংস্থা টিআইডিসি আজ পথের ভিখারি তকমা পেতে চলেছে । শুধু এই সাড়ে চার কোটিই নয় , যতটুকু খবর , টিআইডিসির ঘাড়ে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ মামলার দায় রয়েছে । এর পেছনেও বড় ঘোটালা রয়েছে বলে খবর । জমির প্রকৃত মূল্য ২৫ লক্ষ হলেও , সেটাকে এক থেকে দুই কোটি , এমনকি আরও বেশি পাইয়ে দেওয়ার বা আদায় করা হচ্ছে । এই কৌশলের পেছনে অনেকের স্বার্থ জড়িত রয়েছে । জানা গেছে , যে জমি অধিগ্রহণের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে চারজনের চেম্বারে তালা পড়লো , সেই জমির প্রকৃত মূল্য কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষের বেশি হবে না । ফলে জমির মালিকের হাতে কত টাকা পৌঁছবে সেটাই দেখার ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.