কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে তন্ত্র সাধনায় ব্যস্ত বিদেশিনীদের দল।

 কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে তন্ত্র সাধনায় ব্যস্ত বিদেশিনীদের দল।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-তন্ত্র সাধনার পাশাপাশি বিশ্বশান্তি কামনায় কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে হোমযজ্ঞ করতে সুদূর রাশিয়া থেকে তারাপীঠে এসে পৌঁছলেন একদল সাধক দল। দিল্লি, রাজস্থান, জয়পুর, কেরল থেকেও এসেছেন সাধকরা ভিড় জমিয়েছেন কামাখ্যার নাগাসাধুরা। তারাপীঠের রামনাথ অঘোর আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা সমীরনাথ অঘোরের আমন্ত্রণে এই পবিত্র ভূমিতে সাধনার উদ্দেশে আগমন বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার সাধিকা যোগী অন্নপূর্ণা নাথ। কৌশিকী আমাবস্যার আগেই ইতালি থেকে আরও একটি দল আসার কথা রয়েছে বলে জানান সমীরনাথ।দেবী তারার অপর নাম‘কৌশিকী’। প্রাচীনকালে দেবদেবী এবং মানুষ যখন অসুর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তখন মা তারা তাদের সুরক্ষার জন্য মহামায়া মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। মা দুর্গা দেবতাদের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর ঐশ্বরিক দেহকোষ থেকে একটি অবতার সৃষ্টি করেছিলেন, যা দেবী কৌশিকী নামে পরিচিত।
কথিত আছে, সাধকের জীবনে কৌশিকী অমাবস্যা উৎসবের মতো এবং মাতৃসাধনা সিদ্ধি অনুশীলনের একটি মহান দিন। সাধকরা সারা বছর এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কারণ, মা কৌশিকীর
দৈব কৃপায় যদি সাধক গুরুর দেওয়া দীক্ষামন্ত্র জপ অভ্যাস করেন, তাহলে এর আধ্যাত্মিক ফল দশগুণ বেশি হয়। কৌশিকী অমাবস্যার একদিন পরিচিত আরও একটি শুভদিন রয়েছে। ‘ঘোর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল অন্ধকার এবং ‘অঘোর’ অর্থ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। তাই, ঐশ্বরিক আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আলো অর্জনের জন্য সমস্ত সাধক দেবী কৌশিকীর কাছে প্রার্থনা করেন যা তাদের মহাসিদ্ধির পথে নিয়ে যায়।তাই প্রতিবছরই কৌশিকী তিথিতে দূরদূরান্তের সাধুসন্তদের সমাগম ঘটে। তারা নিশিরাতে সাধনায় বসেন। এবার বিদেশি সাধকরা আসায় তা অন্য মাত্রা পেয়েছে। দিন চারেক আগে তারাপীঠে সাধনার উদ্দেশ্যে এসেছেন রাশিয়ার সাধক দল। তাদেরই একজন যোগী অন্নপূর্ণা। যোগী অন্নপূর্ণা গত সাতবছর সাধনা চালাচ্ছিলেন।তিনি সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এবার কৌশিকী তিথিতে তিনি তারাপীঠ মহাশ্মশানকে সাধনার জন্য বেছে নিয়েছেন।তিনি বললেন, তার জন্ম হয়েছে রাশিয়াতে। সেখান থেকেই তিনি তারাপীঠে এসেছেন দর্শনের জন্য।এই বিদেশিনী বললেন, ‘এখানে মায়ের কৃপা নিতে এসেছি। আমি কোনও পরিকল্পনা করে এখানে আসিনি। এই জায়গাটা আমার মনে ছিল। আমার কোনও পরিকল্পনা নেই যে এখানে কতদিন থাকব। আমার একমাত্র পরিবার মা তারা। তিনিই আমার রক্ষা করেন। তিনি আমার মা। আমি মায়ের কাছে এসেছি।’ তারাপীঠ শ্মশানে রীতিমতো তাবু খাটিয়ে থাকছেন তারা। সেখানে চিতা সংলগ্ন স্থানে যজ্ঞস্থল করা হয়েছে। সোমবার থেকে টানা শনিবার
পর্যন্ত ভাণ্ডারা শুরু করছেন তারা হবে বিশ্বশান্তি কামনার যজ্ঞ। টানা শনিবার পর্যন্ত সেই যজ্ঞ চলবে। কৌশিকী তিথির নিশিরাতে তারা সাধনায় বসবেন। সমীরনাথ বলেন, ‘আখড়ার আমন্ত্রণে দেশ বিদেশের সাধকরা সাধনার জন্য এসেছেন। তারা আধ্যাত্বিক জ্ঞান অর্জন করতে চান। কুম্ভমেলা, গঙ্গাসাগর মেলার মতোই এই কৌশিকী উৎসবও পরিচিতি লাভ করুক এটাই চাই আমরা।”ভক্তদের বিশ্বাস, এই দিনেই সাধক বামাখ্যাপা তারা মায়ের দর্শন পেয়েছিলেন। সেই উপলক্ষে প্রতি বছর উপচে পড়ে ভিড়। তারাপীঠ মন্দিরের সভাপতি তথা আদি পুরোহিত তারাময় মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘কৌশিকী অমাবস্যায় মায়ের একবার মধ্যাহ্ন ভোগ হয় আর একবার নিশিথে ভোগ হয়। মধ্যাহ্ন ভোগে পোলাও, অন্ন, পাঁচ রকম ভাজা, খিচুড়ি, নানান ধরনের তরিতরকারি দেওয়া হবে। যেহেতু এটা তন্ত্রপীঠ তাই মাছ রাখা বাধ্যতামূলক। কারণবারি থাকে, সেইমতো তারা মাকে তন্ত্রমতে পুজো করা হয়।আর সন্ধ্যায় লুচি, সুজি, পায়েস, নানা রকম মিষ্টান্ন-ভাজা দিয়ে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। রাতে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয় এবং মন্দিরের ভেতর যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, সেই বলির পাঁঠার মাংস মাকে ভোগ দেওয়া হয়।’ প্রত্যেক বছর এই নিয়মেই মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। তবে এই দু’দিন বসে মানুষ ভোগ খেতে পারেন না, হাতেই প্রসাদ গ্রহণ করতে হয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.