ক্যানসার চিকিৎসায় ব্রাত্য কেমো ও রেডিওথেরাপি

 ক্যানসার চিকিৎসায় ব্রাত্য কেমো ও রেডিওথেরাপি
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ক্যানসার মানেই কেমোথেরাপি । আর তার পর রেডিয়েশন । চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমনই প্রচলিত ধারণা এবার বদল হতে চলেছে । মিরাকেলটি ঘটনার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের লড়াই চলছে শেষ ১৫ বছর ধরে।২০০৭ সালে ফিলিস লাচেত্তি নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মন্টেফিওর মেডিকেল সেন্টারে নার্স জানতে পেরেছিলেন , তার স্তনে অস্বাভাবিক লাম্প রয়েছে । পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও ক্যানসারের ঝুঁকিতে ছিলেন লাচেত্তি । তার বোন ও বাবা মারা যান লিউকেমিয়ায় । ভাই মারা যান থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে । চিকিৎসক পরামর্শ দেন , ম্যাসটেকটমি করার । অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের এই অংশ তাকে ফেলে দিতে হবে । ক্যানসার মুক্তির লড়াই এখানেই শেষ হয় নি লাচেত্তির । ক্যানসারের সংক্রমণ রোধে তাকে কেমোথেরাপি আর রেডিয়েশন থেরাপির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তাররা ।

টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে , যখন রেডিয়োথেরাপির যন্ত্রণা নিয়ে হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন লাচেত্তি , তখনই আশার আলো দেখিয়েছেন চিকিৎসক জোসেফ স্পারানো । আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যক্ষ জোসেফের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন ওই কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক মন্টে ফিওর । ক্যানসার রোগীরা কেমোথেরাপিকে এড়িয়ে কীভাবে সুস্থ থাকতে পারেন , সেই পথ বাতলালেন স্পারানো । তারপর দশকের দীর্ঘ দেড় গবেষণা । অধ্যাপক স্পারানো বলেছেন , ‘ বহু ক্যানসার আক্রান্তেরই কষ্ট হয় রেডিয়েশনের কঠিন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে । এ বার দু’টি গবেষণার রিপোর্টেই আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। দাবি করা হচ্ছে , কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পর কেমোথেরাপি আর রেডিয়োথেরাপি না করালেও চলবে । ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর লাচেত্তির মতো যাদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বা রেডিয়েশন দেওয়া হয়েছে , তাদের নিয়ে টানা ১৫ বছর কাজ করে চলেছে আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা ।

অস্ত্রোপচার বা রেডিয়েশনের পরে ক্ষেত্রবিশেষে কেমোর রোগীদের হরমোনথেরাপি দেন । এই থেরাপিতে ইস্ট্রোজেনের মতো হরমোনগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের । চিকিৎসা নিতে এসে লাচেত্তি ব্যাপারটিতে আগ্রহী হয়েছিলেন । রেডিয়েশনের যন্ত্রণা থেকে কার্যত পালিয়ে বাঁচতেই লাচেত্তি যোগ দিয়েছিলেন সমীক্ষায় । ১৫ বছর কেটে গেলেও এখন লাচেত্তি পুরোপুরি সুস্থ বলে দাবি করেছেন । একই সঙ্গে গবেষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন ,’ আপাতত আমি হরমোন থেরাপিই নিচ্ছি । ‘ এখনও পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ২ লাখ ৬০ হাজার মহিলাকে নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করা হয়েছে । দেখা গিয়েছে , অ্যান্টি ইস্ট্রোজেন হরমোন থেরাপি দিলে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে থাকে । নতুন একটি গবেষণা বলছে , কোলোন ক্যানসারে আক্রান্তদের ততটাও জরুরি নয় এই কেমো বা রেডিয়োথেরাপি । তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে হরমোন থেরাপি । আর একটি গবেষণা বলছে , স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও অস্ত্রোপচারের পর আর না – ও লাগতে পারে রেডিয়োথেরাপি ।

এই গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ‘ আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ’ – র একটি বৈঠকে ।কোলোন ক্যানসার সংক্রান্ত গবেষণার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই ‘ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন ‘ – এ প্রকাশিত হয়েছে । অস্ত্রোপচারের পর মিয়োসিস কোশবিভাজন বন্ধ করতে ওই জায়গাটিকে পুড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি হল কেমোথেরাপি এবং রেডিয়োথেরাপি । কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর শরীরে সহ্য হয় না দুটি থেরাপি । তাই এ বার গবেষকরা চেষ্টা করছেন বোঝার , কোন রোগীর কেমোথেরাপি আর রেডিয়োথেরাপি লাগবে , আর কোন রোগীর ক্ষেত্রে তা ততটাও প্রয়োজন নয় । সমস্যা হল , কেমোথেরাপি আর রেডিয়োথেরাপি দেওয়ায় রোগীর বমিভাব , মাথাঘোরা , স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে । ৪৫৫ জন রোগীকে নিয়ে করা সমীক্ষায় জানা গিয়েছে , অস্ত্রোপচারের পর রক্তপরীক্ষায় অনেকের রিপোর্ট বলছে , ক্যানসারমুক্ত হয়েছেন তারা । শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের বক্তব্য , এই দু’টি ধাপ বাদ দেওয়া গেলে অনেক ক্যানসার আক্রান্তের জীবন বদলে যায় ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.