ক্ষত আড়ালের প্রয়াস!

 ক্ষত আড়ালের প্রয়াস!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত বিজেপির রাষ্ট্রীয় কার্যকারিণী বৈঠকের প্রথমদিনই প্রদেশ বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা . মানিক সাহা । একাধারে তিনি দলের প্রদেশ সভাপতিও । প্রায় তিন বছর ধরে তিনিই প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন । ফলে তাকেই প্রদেশের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে হবে । এটাই সাংগঠনিক নিয়ম । খবরে প্রকাশ , হায়দ্রাবাদের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত বৈঠকের উদ্বোধনী দিনে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসাহা তার সাংগঠনিক প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পন্ন হয়ে যাওয়া সবক’টি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন ।

Picsart_22-07-03_13-32-26-627

চারটি বিধানসভা আসনে সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করেছেন । খবরে আরও প্রকাশ , ৫৭ – যুবরাজনগর কেন্দ্রে দলের প্রার্থীর জয়কে উল্লেখযোগ্য অর্জন ’ বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসাহা । তার দাবি , গত ২৯ বছরে শক্তিশালী বাম দুর্গে পরিণত হয়েছিল যুবরাজনগর । ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে প্রবল গেরুয়া হাওয়া সত্ত্বেও সেখানে ৬০০ ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছিল বিজেপিকে । এবার সেখানে ৫১.৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে এনেছে পদ্মশিবির । ৪৬ – সুরমা তপশিলি সংরক্ষিত কেন্দ্রের জয়কে চ্যালেঞ্জিং বিজয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ।

ওই কেন্দ্রে এক তৃতীয়াংশ জনজাতি ভোটার থাকা সত্ত্বেও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তিপ্রা মথা প্রার্থীকে বড়সড় ব্যবধানে হারাতে সক্ষম হয়েছে পদ্মশিবির । ৮ টাউন বড়দোয়ালীতে কংগ্রেস – সিপিএমের গোপন আঁতাত এবং ভোট হস্তান্তরের রাজনীতির পরও বিজেপি প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে । ৬ আগরতলা কেন্দ্রেও বিজেপির বিজিত প্রার্থী শক্ত লড়াই করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন । ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য সিপিএমের ভোট কংগ্রেসের দিকে চলে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন প্রদেশ সভাপতি ডা . মানিক সাহা । খবরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রদেশ সভাপতির প্রতিবেদন গতানুগতিক বলা যায় ।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে , দলের রাষ্ট্রীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি শ্রীসাহা রাজ্যের সাংগঠনিক দুর্বলতা , দলের অন্দরে গোষ্ঠী রাজনীতি , নেতৃত্বের দুর্বলতা , সিদ্ধান্ত ও কৌশল নির্ণয়ে ঘাটতি , ব্যক্তিস্বার্থহীন দলের প্রতি নিষ্ঠাবান ও অনুগত নেতা – নেত্রীদের ঘাটতি – এই সবকিছু সাংগঠনিক প্রতিবেদনে খুব সচেতনভাবেই আড়াল করে গেছেন । কারণ , এইগুলি তুলে ধরলে তার দায় প্রদেশ সভাপতির উপরেই বর্তায় । দল সাড়ে চার বছর ধরে ক্ষমতায় আছে । তারপরও উপনির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে জয়লাভ করতে হয়েছে ।

একটিতে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে । রাজ্য রাজনৈতিক মহলের মতে , ওই একটি আসনের পরাজয় , বাকি তিনটি কেন্দ্রের জয়ের সাফল্যকে খাটো করে দিয়েছে । প্রকাশ্যে তিন কেন্দ্রের জয়কে ফটো সেশন করে বড় করে দেখানোর প্রয়াস জারি থাকলেও , আগরতলা কেন্দ্রের পরাজয়ের রক্তক্ষরণ কিন্তু আটকানো যাচ্ছে না । এই দায় কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের । ৬ আগরতলা কেন্দ্রে ভোটের প্রচারে একমাত্র আন্তরিকভাবে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ছাড়া বাকিদের সেইভাবে দেখাই যায়নি । উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ প্রচারে সেইভাবে অংশ নেননি ।

বেশ কয়েকজন সহ – সভাপতি , সাধারণ সম্পাদক বলতে গেলে চেয়ার থেকে নেতা – নেত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ , তিনগুণ । তাদের ভূমিকা কী ? তারা সাংগঠনিক যোগ্যতা প্রমাণে পুরোপুরি ব্যর্থ নয় কি ? আর দল যাকে প্রার্থী করলো , তিনি তো মনোনয়নের একদিন আগে জানতে পেরেছেন তিনি প্রার্থী হচ্ছেন । একপ্রকার জোর করে ধরে বেঁধে তাকে ভোটযুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে । তিনি দলের সহ – সভাপতি হলেও , বরাবরই আড়ালে ছিলেন । প্রত্যক্ষভাবে দলীয় কর্মসূচিতে বা অন্য কোনও সামাজিক কাজে তাকে দেখেনি কেউ । অথচ ভোটের ফলাফল শেষে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে । -বাম ভোট বিভাজনে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী ।

এর থেকেই তো স্পষ্ট বাম ভোটারদের কাছেও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসাবে মনে হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীকে । এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে । এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই । রাজনৈতিকভাবে শাসকের কৌশল ধাক্কা খেয়েছে । প্রকট হয়েছে দুর্বল পরিচালনা । ফলে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রদেশ বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ক্ষতগুলি আড়াল করার যতই চেষ্টা হোক , উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রের জয়কে যতই বড় করে দেখানোর চেষ্টা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা হোক না কেন , মানুষ কিন্তু সব জানে বোঝে । সত্যকে খানিকটা সময় হয়তো চাপা দিয়ে রাখা যাবে , কিন্তু হাতে সময় খুবই কম । মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ সভাপতি সেটা ভালো করেই জানেন । ফলে দুর্বলতাগুলি শোধরানোর কাজ যত দ্রুত শেষ করতে পারবেন , ততই মঙ্গল হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.