ক্ষত কমানোর প্রয়াস!

 ক্ষত কমানোর প্রয়াস!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এলে বছরে ২ কোটি চাকরির বন্দোবস্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি দীর্ঘ ৪ বছর পূরণ করতে পারেননি বলে কর্মসংস্থান নিয়ে মোদি সরকারকে একাধিকবার নিশানা করেছে দেশের বিরোধী দলগুলো।তারপর বিশ্বজুড়ে কোভিড পরিস্থিতি এবং পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা সমস্যার জেরে অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে।ভারতেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক মাত্রায়।পেট্রোপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যশস্যসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, কর্মচ্যুতি সব মিলিয়ে গত চার বছরে বেকারত্বের মতো সমস্যা ভারতের মতো বিশাল দেশে যুব সমাজের ভবিষ্যৎকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

সামনেই ২০২৪ সালে রয়েছে দেশের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। এর আগে আগামী দেড় বছরে দেশের ৮ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। হাতে আর বেশি তেমন সময়ও নেই।অথচ কেন্দ্রে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখলের প্রশ্নে এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী।কিন্তু সরকারের সামনে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো কর্মসংস্থানহীনতা,দেশের সামনে শিক্ষিত বিশাল সংখ্যায় কর্মপ্রার্থীদের ভিড় এবং সর্বোপরি আর্থিক মন্দা।ফলে আগামী নির্বাচনগুলোতে বেকারত্বই যে হতে চলেছে বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। এই ত্র্যহস্পর্শের মধ্যেই সরকারের সামনে বিকল্প বলতে শুধু একটাই।আর তা হলো-কর্মসংস্থান, কর্মসংস্থান এবং কর্মসংস্থান।

এই কঠিন বাস্তবতা উপলব্ধি করেই ভোটের বাজারে নামার আগে জল মেপে নিয়ে গত জুন মাসে দেশের প্রধানমন্ত্রী নতুন কর্মসংস্থানের ঘোষণা দেন। এটা যে সরকারের উপর তৈরি রা হওয়া ক্ষত সামান্য হলেও সারিয়ে নেওয়ার প্রয়াস তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য জানান, আগামী দেড় বছরে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে ১০লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।সেই ঘোষণামতোই প্রথম পর্বে স দীপাবলির আগেই ৭৫ হাজার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র প্রদানের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে রোজগার মেলা। সরকারী ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছিল, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার অনুযায়ী এই রোজগার মেলা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি পদক্ষেপ এবং আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং যুবকদের অর্থপূর্ণ সুযোগ প্রদানে এই প্রক্রিয়া অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে।

সরকারী ঘোষণার পর গত অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রথম পর্যায়ে ৭৫ হাজার নিয়োগপত্র বিতরণ করার পর মঙ্গলবার দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৭১ হাজার নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে চাকরির নিয়োগপত্র বিতরণ করা হয়েছে। যে পদগুলোর জন্য এই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে এর অধিকাংশই কেন্দ্রীয় সরকারের ৩৮টি মন্ত্রকের বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগের জন্য।এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ, ইউপিএসসি, এসএসসি, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, ইনকাম ট্যাক্স, মোবাইল টাস্ক ফোর্সসহ শিক্ষক,নার্সিং ও প্যারামেডিকেল পদ, রেডিওগ্রাফার, ফার্মাসিস্ট সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিয়োগপত্র রয়েছে।

যদিও হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাটের ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রীর এই রোজগার মেলাকে বিরোধীরা ভোটের নাটক হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাই, বেসরকারী সংস্থাগুলোতে কর্মীসংকোচন— সবকিছু মিলিয়ে দেশেে অর্থনীতির উপর যে গভীর সঙ্কট নেমে এসেছে,তা থেকে জনগণকে সাময়িক স্বস্তি ও পরিত্রাণ দিতে সরকারী স্তরে কর্মসংস্থান যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি পদক্ষেপ এই বিষয়ে কোনও সংশয় নেই।এটা ঘটনা, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে দীর্ঘদিন ধরে বিরাট সংখ্যক শূন্যপদ খালি পড়ে থাকলেও সরকার সেই পদ পূরণ করার জন্য কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

সরকারী পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে গ্রুপ এ গেজেটেড অফিসারের জন্য ২৩ হাজারের উপর শূন্যপদ পড়ে আছে। এছাড়া গ্রুপ বি গেজেটেড ২৬ হাজার, গ্রুপ বি নন-গেজেটেড ৯২ হাজার,গ্রুপ সি নন-গেজেটেড সাড়ে ৮ লাখ শূন্যপদ রয়েছে।শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেই গ্রুপ বি নন-গেজেটেড শূন্যপদ ৪০ হাজার এবং গ্রুপ সি সোয়া দুই লক্ষ খালি পদ পড়ে আছে। রেল মন্ত্রকে শূন্যপদের সংখ্যা গ্রুপ সিতে প্রায় তিন লক্ষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গ্রুপ সি নন-গেজেটেড খালি পদের সংখ্যা সোয়া লক্ষের কাছাকাছি। স্বাভাবিক কারণেই এই বিশাল সংখ্যক শূন্যপদ দীর্ঘদিন ধরে পূরণ না হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে যেমন গতিশীলতা হ্রাস পেয়েছে,তেমনি দেশে বিরাট সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা গ্রাস করেছে,যা সার্বিক ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যেকোনও কল্যাণকামী সরকারের সামনে অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ হলো তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ প্রদান এবং নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা।গত কিছু বছরে সরকারের কর্মসংস্থানের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি অবহেলিত থেকে গেছে। সেই বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে রোজগার মেলা দেশের কর্মঠ,দক্ষ, প্রতিশ্রুতিবান যুব সমাজকে নতুন পথের বার্তা দেবে,দেশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে এবং সর্বোপরি দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করবে এটাই হলো আশার কথা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.