অসাম্যের এই পৃথিবীতে একদিকে যখন চরম বিশ্বাস বৈভব-ঐশ্বর্য্য অসাম্যের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে।ঠিক তার পাশাপাশি, এই পৃথিবীতেই এমন প্রচুর মানুষ আছেন যারা না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন।একদিকে খাদ্যের অপচয়, অপরদিকে না খেতে পেয়ে মৃত্যু। পৃথিবীর সৃষ্টির সময় থেকেই এই বিলাস বৈভব বনাম ক্ষুধা-অপুষ্টির লড়াই জারি রয়েছে। বিজ্ঞানের এত উন্নতি, প্রযুক্তির সাফল্যের মধ্যেও অসাম্যের এই ব্যবধান বাড়ছে বই কমছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে এটি একটি স্থায়ী সমস্যা হয়েই পৃথিবীর বুকে চেপে বসেছে।
বিশ্বব্যাপী এই খাদ্য সংকট অর্থাৎ ক্ষুধা নিবৃত্তিকরণের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ২৮ মে দিনটিকে বিশ্ব ক্ষুধা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই দিবসটি বিশ্বজুড়ে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দূর্দশার কথা স্মরণ করে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ ও সচেতনতার অঙ্গ হিসাবে হাঙ্গার প্রজেক্ট এই কর্মসূচির উদ্যোগে নেয়। প্রায় ৮০০ কোটির জনসংখ্যার পৃথিবীতে ৭৯ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধার শিকার। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বলছে সোমালিয়া ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।এর পরেই রয়েছে ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনের মতে দেশ। আসলে বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশের মানুষই কোনও না কোনও কারণে অপুষ্টি আর ক্ষুধার শিকার। তবে এর মধ্যে আফ্রিকার ক্ষুধার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, আবহাওয়ার তারতম্য যুদ্ধ বিগ্রহ, সংঘাত, অস্থিতিশীল বাজার আর দূর্বল কৃষি বিনিয়োগ ও অর্থনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার থাবা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একট সময় ধারনা করা হোত-ক্ষুধা হলো মানুষের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ার কারণে উদ্ভুত সমস্যা। কিন্তু অর্থনীতিবিদ অমর্ত সেনের গবেষণার মাধ্যমে প্রচলিত এই দৃষ্টিভঙ্গির অবসান ঘটে। অমর্ত সেনই প্রথম একথা সফলভাবে প্রমাণ করেছিলেন যে, আধুনিক সময়ে ক্ষুধা হল একটি বন্টন সমস্যা, যেটা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারের আর্থিক নীতির কারণে হয়ে থাকে। এই গবেষণার জন্যই ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল অমর্ত্য সেন।
পৃথিবীর যে ৭৯ কোটি মানুষ ভালো করে দুবেলা পেট ভরে খেতে পান না তাদের মধ্যে এমন ২৫ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ আছেন। যার অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। পেট ভরা তো দূরের কথা তৃষ্ণা মেটানোর মতে অবস্থাতেও এরা নেই। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলছে, পৃথিবীতে এমন অনেক দেশের মানুষ আছেন যারা বিপুল পরিমাণ খাবার কেন নষ্ট করেন।
প্রতিদিন প্রচুর খাবার কেবল অপচয়ের কারণে ক্ষুধার্থ মানুষকে সেগুলো দেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, খাবার অপচয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের পরিকল্পনাহীন বাজার। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য কিনে ফেলা এবং সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে ফেলে দেওয়া। এর ফলে একদিকে যেমন খাদ্যের অপচয় হচ্ছে, তেমনি পরিবারের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণও তৈরি হচ্ছে। বিয়ে, জন্মদিন, অফিসপার্টি, পিকনিক সহ যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা এমন দৃশ্য বহুবার দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যেখানে প্লেটভর্তি খাবার অর্ধেক খেয়ে, বাকি অর্ধেক ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ নিজের প্রয়োজনের বাইরে খাবার টুকু যা অবশিষ্ট থাকে সেটা অবশ্যই ক্ষুধার্তদের মধ্যে পরিবেশন করা যেতো। এই সচেতনতা স্কুল-কলেজ-সমাজ সর্বত্রই গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে। বিশ্ব ক্ষুধা দিবস শুধুই একটি মাত্র দিন উদ্যাপনের জন্য নয়। এ হলো আমাদের সচেতনতা, মানবিকতা বাড়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলার একটা পরীক্ষা বা প্রয়াস। বিশ্ব ক্ষুধা নির্মূল করার জন্য সকলকে সমান পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব। গোটা পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ এইডস, ম্যালেরিয়া আর যক্ষ্মায় মারা যান। এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ শুধু না খেতে পেয়ে মারা যান। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার যেখানে ১০ শতাংশ মানুষ ক্ষুধার শিকার। তখন বুঝতে হবে পরিস্থিতি আদৌ ভালো নয়। বিশ্বে প্রতিবছর ১৭ কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। কারণ তাদের মায়েদের অপুষ্টি রয়েছে। এই অপুষ্টি ও পেটে ক্ষুধা নিয়ে যখন মানুষগুলো রাতে ঘুমোতে যায়, তখন কোনো দেশ যতই নিজের আর্থিক প্রবৃদ্ধির সাফল্যের হার নিয়ে গর্ব করুক না কেন, এতে করে পৃথিবীর মানুষের পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না। যদিও বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার প্রায় ৯৮ শতাংশ অনুন্নত দেশগুলোতে কেন্দ্রীভূত। কিন্তু তাই বলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লেবানন, প্যালেস্টাইন, গাঁজায় যখন অভুক্তশিশুদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে তথাকথিত উন্নত-রাষ্ট্রগুলী বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়-তখন এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে কোনও আওয়াজ উঠে না। বিশ্বক্ষুধা দিবসে তাই যমস্বরে সবাইকে বলতে হবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের প্রতিটি দানার যেমন মূল্য অপরিসীম, তেমনি প্রতিটি দানার উপর প্রতিটি জীবনের অধিকার রয়েছে। যুদ্ধ বা কোনও প্রতিকূলতা দিয়ে সেই আধিকারকে হরণ করা অনৈতিকতাই নয় চরম বর্বরতার নির্দশন। এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে সকলকেই।
অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রথম সমাবর্তন সমারোহ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের। আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে…
স্বল্প সময়ের মধ্যেও রাজনীতিতে কীভাবে পট পরিবর্তন হয়ে যায়, স্বএই এই মুহূর্তে মোদি সরকার এর…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পাঞ্জাবের একটি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটল বৃহস্পতিবার রাতে। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-সিকিমে পর্যটকের গাড়ি রাস্তা থেকে সোজা ১ হাজার ফুট নীচে তিস্তা নদীতে গড়িয়ে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের সম্পর্কে ভাঙন ধরল! বুধবার ট্রম্প প্রশাসন থেকে অব্যাহতি…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিজ্ঞান চাইলে কী না পারে!বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর আসার পর বিভিন্ন…